কোন্ সে দেশের কোন্ সাগরের পারে: রুশ কথাশিল্পীদের রচিত রূপকথা
অনু: অরুণ সোম
প্রকাশন সম্পাদক: অমিতাভ চক্রবর্তী
৪০০.০০
বৈ-চিত্র
সোভিয়েট ইউনিয়ন মুছে যাওয়ার পর থেকে বাঙালি ছেলেপুলেরা কেবলই শুনেছে, স্বপ্নকথার আদরে মোড়া নরম বরফের দেশের গল্পে তারা বঞ্চিত। ‘বৈ-চিত্র’সহ কিছু প্রকাশন এবং একটি ব্লগের সক্রিয়তায় আফসোস পাল্টে যাচ্ছে উৎসাহে। সোভিয়েটের রংচঙে কাহিনিগুলো পিডিএফ বা ফ্যাক্সিমিলিতে পেয়ে আপ্লুত অনেকে বলছেন, “যেন ছোটবেলা ফিরে পেলাম!” ছোটদের কাছেও খুলছে হারাতে বসা বিগত জগৎ।
এ বইয়েও যখন লেভ তলস্তয়, আলেকসান্দর কুপরিন, মিখাইল লেরমন্তভের লেখা সঙ্কলিত হয়, তখন সে কাহিনি স্বপ্নের উড়ানে নিয়ে যায়। অডিয়ো-ভিজ়ুয়ালের যুগে এমন গল্পের পক্ষে কৈশোরকে টানতে পারা সহজ নয়, তাকে ঘিরে উন্মাদনাও আগের মতো নেই, কিন্তু এই বিচিত্র দেশের সঙ্গে পরিচয় করানোর চেষ্টাটুকু জরুরি। এই সব রূপকথা কেবলই আজগুবি ঘটনার সমাহার নয়, অতি উঁচুদরের কারুশিল্প। প্রগতি ও রাদুগা প্রকাশনের এই বইগুলো বাঙালি বালককে যেমন ছবিতে আমোদ দেয়, আর কাহিনিতে মজা, তেমনই শেখায় জীবনের পাঠ। রুশ শিল্পীদের চমৎকার অলঙ্করণ আর হরেক ভাষায় মনোগ্রাহী অনুবাদ মনোরঞ্জন পেরিয়ে শিশুমন গড়ে তোলার কাজ করে। এই সব কাহিনিতে সাহিত্য-কল্পনার চিরন্তনতা তাই অনস্বীকার্য। ২০০ বছর আগে সে সুর বেঁধে দিয়েছিলেন রুশ জাতীয় কবি আলেকসান্দর পুশকিন, এ বইয়েও যা সঙ্কলিত— “কোন্ সে দেশের কোন্ সাগরের পারে/ সবুজ বরণ কল্পতরু, সোনার শিকল তাতে।”
তাড়োবা থেকে টিমবাকটু
ছন্দা চট্টোপাধ্যায় বিউট্রা
৩৭৫.০০
পরবাস
পাঠেই কি অর্ধ ভ্রমণ হয়? তা হলে এই বইয়ে সাত মহাদেশে ভ্রমণের স্বাদ পাবেন পাঠক। লেখিকা দীর্ঘ দিন আমেরিকা-প্রবাসী ডাক্তার। নিজেই জানিয়েছেন, নেশায় তিনি ভূ-পর্যটক। তবে, শুধু প্রকৃতি নন, মানুষও দেখেন তিনি। আফ্রিকার দুরধিগম্য শহর টিমবাকটু-তে যেমন তিনি দেখেছিলেন তুয়ারেগ সম্প্রদায়ের মানুষকে। “তুয়ারেগ পুরুষরা পাগড়ি দিয়ে মুখ, মাথা ঢেকে নেন। শুধু দুটো চোখ ছাড়া।... মেয়েরাও নীল কালো রঙের আলখাল্লার মতো পোশাক পরে কিন্তু অন্যান্য মুসলিমদের মতো মাথা বা মুখ ঢাকে না। আমার অভিজ্ঞতায় মুসলিমদের মধ্যে এই উলটো পর্দারীতির এই একমাত্র উদাহরণ।” আবার, জঙ্গলভ্রমণের জন্য তাঁর পরামর্শ, “কোনোরকম আশা নিয়ে জঙ্গলে না যাওয়াই ভালো, তাহলে আর হতাশ হতে হয় না।” আইসল্যান্ডে বিশাল হিমবাহের মধ্যে কাটা সুড়ঙ্গ থেকে অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রতীরে বিষধর জেলিফিশের আনাগোনা; আমাজ়ন অরণ্যে কফিখোর ট্যুকান পাখির সঙ্গ থেকে আমেরিকার মনওয়ি শহরের একমাত্র বাসিন্দার সঙ্গলাভ— পড়তে পড়তে নিজেকে মন্দার বোস মনে হতেই পারে। তবে, বইটির সব লেখাই যে সমান উপাদেয়, বলার উপায় নেই। সম্পাদনার প্রয়োজন ছিল। ভ্রমণকাহিনির সঙ্গে ছবিগুলিও আকর্ষণীয় ভাবে ছাপা হতে পারত।
লকডাউনের দিনলিপি (বাংলার মেয়েদের লড়াই ও সংগ্রাম)
জিনাত রেহেনা ইসলাম
২৪৯.০০
সৃষ্টিসুখ
আর পাঁচটা বিপদের মতো লকডাউনও মহিলাদেরই বিপন্নতর করল বেশি। তাঁদের অনেকেরই দিন আনলে দিন খাওয়া জুটত আগে। অনেকের উপর নির্ভর করে থাকে আরও অনেকগুলো অসহায় পেট। অর্থনীতির চাকা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা কতখানি বিপাক পড়লেন, পঞ্চাশ জনের বেশি মহিলার সঙ্গে কথা বলে সেই তথ্য সঙ্কলন করেছেন লেখক। পুরুষদের চেয়ে মেয়েদের বিপন্নতার চরিত্র আলাদা, ফলে এই সময়ে মেয়েদের পরিস্থিতির কথা আলাদা ভাবে নথিভুক্ত করার গুরুত্ব কতখানি, তা এই বইয়ের বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট। জঙ্গিপুরের দুই ষাটোর্ধ্ব বিধবা সামিলা ও লাইলি জানিয়েছেন, লোকের কাছে হাত পেতেই দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। অবশ্য, লকডাউনের আগেও যে খুব সুরাহা হত, তা নয়। নন্দীগ্রামের সন্ধ্যা সাঁতরা অবশ্য বিধবা হয়ে পরমুখাপেক্ষী হননি। নয়ডায় গিয়ে শেষ পর্যন্ত এক গারমেন্টস কারখানায় ভালই চাকরি পেয়েছিলেন। গুছিয়ে বসছিলেন যখন, লকডাউন এসে এলোমেলো করে দিল সব। তাঁকেও অপেক্ষা করতে হল, কেউ যদি খাবার বিলি করতে আসে, তবে খাবার জুটবে। “নিজের জোরেই কাজ খুঁজেছি, নিজের জোরেই পড়ে আছি বাইরে, কিন্তু এই লকডাউনে পরভরসা হয়ে গেলাম,” আক্ষেপ করেন সন্ধ্যা। এই কঠিন সময়ের প্রত্যক্ষ ছবি ধরে রাখার কাজটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়াও এই সঙ্কলনে রয়েছে আরও ২২টি প্রবন্ধ, মেয়েদের বিষয়েই।