বনাম রজত সেন
মৃণাল চক্রবর্তী
৩০০.০০
সপ্তর্ষি প্রকাশন
সফল লেখক, কোম্পানি থেকে গাড়ি-পাওয়া সম্পাদক, ঊনষাটেও সুপুরুষ। এহেন রজত সেনের আত্মপ্রত্যয় টলে গেল আর এক রজত সেনের বই হাতে পেয়ে। শুরুটা হল বিরক্তি আর তাচ্ছিল্যে। অনেক গুণ সফল এক রজত থাকতেও অখ্যাত এক সমনামী কী করে চার-পাঁচটা বই ছাপিয়ে ফেলার সাহস পায়? অন্য রজতের ও-ধারের মানুষ ক্রমে রজত সেনের জীবনের সবটা জুড়ে বসল। দরিদ্র, অনামী রজতের প্রতি ঈর্ষা, বিস্ময়, এবং শেষ অবধি আকুতি। খুঁজে বার করতেই হবে তাকে। গল্প ক্রমশ প্রবেশ করে পরাবাস্তবে। এক রজতের গল্পের চরিত্রেরা ঢুকে পড়ে অন্য রজতের গল্পে, তারা কতটা কল্পনা আর কতটা স্মৃতি, তা ঠাহর করা কঠিন হয়। এক আধা-ভৌতিক চরিত্র যাতায়াত করে দু’জনের জীবনে। নিজের এই অবস্থাকে নিজেই ‘ঢপটিক্যাল ডিলিউশন’ বলে ঠাট্টা করে রজত সেন, কিন্তু তত দিনে তাঁর পরিপাটি জীবন বেসামাল। চাকরি ও সংসার দু’দিকই পিছলে যাচ্ছে পায়ের তলা থেকে, কলম স্তব্ধ। শেষে চরিত্রের খোঁজে গল্পকার রওনা দিলেন দার্জিলিং। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার পড়ার একটা স্বাদ পাওয়া যায় মৃণাল চক্রবর্তীর লেখায়। পাঠকও ধাঁধায় পড়েন, কী ঘটছে বাইরে, আর কোনটা মনে। লেখার গতি এবং ঘন ঘন বাঁক বদল মনকে টেনে রাখে। বিশেষত দুই রজতের বৈপরীত্য— এক জন দারিদ্রের পঙ্কিলতা, কুটিলতার মধ্যেও সরল, লেখার প্রতি সম্পূর্ণ সৎ, ভালবাসার নারীকে সম্পূর্ণ আত্মনিবেদন করেছে; অন্য জন স্ত্রীকে প্রতারণায় অভ্যস্ত, ফাঁপা ফর্মুলায় গল্প ভেবে চলে, যত দিন না সে এক অজানা অথচ চিরচেনা প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হয়। খাসা বইটি, তবে গল্পের পাঠসুখ ব্যাহত হয় বানান আর যতিচিহ্নের প্রমাদে।