হরি পুলাক্কাট বিজ্ঞান সাংবাদিক। বহু দিন ধরে পত্রপত্রিকায় লিখছেন। এখন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) প্রকাশিত বহুল প্রচারিত পত্রিকা টেকনোলজি রিভিউ-এর অনুসরণে চেন্নাইয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এক ম্যাগাজিন চালু করেছে। হরি সম্পাদনা করেন সে পত্রিকাটি। তিনি লিখেছেন ভারতে বিজ্ঞান গবেষণার সাবালকত্ব-প্রাপ্তি বিষয়ে। বইটি পড়ে বোঝা যায়, উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে তাঁকে কথা বলতে হয়েছে অনেকের সঙ্গে। লকডাউনের বাজারে যা এক দুঃসাধ্য কাজ। ভারতে বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর), বেঙ্গালুরুতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স (আইআইএসসি) কিংবা রামন রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আরআরআই) কী ভাবে গড়া হল, সে তথ্য যত্ন করে লিখেছেন হরি। আইআইএসসি যে স্বামী বিবেকানন্দের পরামর্শে নির্মিত, আর চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন যে আইআইএসসি ছেড়ে নিজের নামে ইনস্টিটিউট গড়ার পর সেখানে প্রচুর গাছ লাগিয়েছিলেন ছেড়ে আসা প্রতিষ্ঠান দেখতে হবে না বলে, সে সব তথ্যও দিয়েছেন তিনি।
ওঁর বর্ণনায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে কোলার সোনার খনির গর্ভে মহাজাগতিক রশ্মি গবেষণা বা ব্রহ্মাণ্ডের নানা প্রান্ত থেকে আসা সঙ্কেত শনাক্ত করায় জ্যোতির্বিজ্ঞান-চর্চা। প্রথমটা হরি জানতে পেরেছেন বদানাভল ভেঙ্কটসুব্বা শ্রীকান্তনের কাছে, আর দ্বিতীয়টা গোবিন্দ স্বরূপের কাছে। টিআইএফআর ডিরেক্টর হোমি জাহাঙ্গির ভাবা-র নির্দেশে শ্রীকান্তন, রাজা রামান্না এবং বিভা চৌধুরী যে ভাবে খনিগর্ভে গবেষণা করার অনুমতি আদায় করলেন, সে কাহিনি কৌতূহলোদ্দীপক। সেটা ১৯৫১ সালের ঘটনা। বেঙ্গালুরুর ৯০ কিলোমিটার পূর্বে ওই খনি তৈরি করেছিলেন ব্রিটিশ উদ্যোগপতি জন টেলর। মহাজাগতিক রশ্মি ১৯১২ সালে আবিষ্কৃত হলেও, ভারতে তা নিয়ে কোনও গবেষণা হয়নি। শ্রীকান্তনের মন্তব্য অনুযায়ী, ব্রিটিশরা চাইতেন, ভারত যেন গবেষণায় উন্নতি না করে। ভারতীয়রাও ধোয়া তুলসীপাতা নন। প্রাচীনপন্থা আঁকড়ে ধরতে চান। উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ভাবা। পশ্চিমি গবেষণায় অভ্যস্ত এই বিজ্ঞানীকে রামন আইআইএসসিতে চাকরি দিলেও, ভাবা যখন দেখেন ওই প্রতিষ্ঠানের গবেষণার দশা বড্ড সেকেলে, তিনি সেই চাকরি ছেড়ে দেন। মুম্বইয়ে দোরাবজি টাটা প্রতিষ্ঠিত টিআইএফআর-এর প্রধান হন ভাবা। তাঁর উৎসাহে যে সব ভারতীয় বিজ্ঞানী পশ্চিমে গবেষণা করছিলেন, তাঁদের অনেকেই চলে আসেন এ দেশে। যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্বরূপ। যিনি উটিতে এবং পরে পুণে শহরের কাছে খাড়োড়ে জায়ান্ট মিটারওয়েভ রেডিয়ো টেলিস্কোপ (জিএমআরটি) বানান।
স্পেস. লাইফ. ম্যাটার.: দ্য কামিং অব এজ অব ইন্ডিয়ান সায়েন্স
হরি পুলাক্কাট
৬৯৯.০০
হ্যাশেট ইন্ডিয়া
হরির প্রচেষ্টা বড় একপেশে মনে হয়। স্বাধীনতার পরে ভারতে বিজ্ঞান গবেষণা কি শুধু দেশের পশ্চিম আর দক্ষিণাঞ্চলে সীমাবদ্ধ? হরির লেখা বই পড়লে এমনই মনে হবে। আর কোনও এলাকার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আলোচনা নেই বইতে। কলকাতার তো নয়ই। হরির যত্নের অভাব দেখা যায় এ অঞ্চলের মাস্টারমশাইদের ব্যাপারেও। জিএমআরটি-র এস অনন্তকৃষ্ণনের অধ্যাপক ছিলেন শান্তিময় দাশগুপ্ত, শান্তিময় বসু নয়। আর একটা কথা, এ ধরনের বইতে ইনডেক্স থাকা জরুরি। তার অভাব পাঠককে পীড়া দেবে।