পুস্তক পরিচয় ২

কবিতা তাঁর অন্তরে

বিগত পাঁচ-ছয় দশকে জীবিত পাখিরা যত বিলুপ্ত হয়ে চলেছে, তত বেশি করে আবিষ্কৃত হয়ে চলেছে অবলুপ্ত পাখির জীবাশ্ম। এই অসম্পর্কিত সমাপতনের একটা প্রাপ্তি হল, পুরাজীবতত্ত্ববিদ্যায় নতুন নতুন বিতর্কের অবতারণা

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:২৪
Share:

আকাশলীনা/ ডাইনোসর থেকে পাখি

Advertisement

শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়

৪৫০.০০

Advertisement

আনন্দ পাবলিশার্স

বিগত পাঁচ-ছয় দশকে জীবিত পাখিরা যত বিলুপ্ত হয়ে চলেছে, তত বেশি করে আবিষ্কৃত হয়ে চলেছে অবলুপ্ত পাখির জীবাশ্ম। এই অসম্পর্কিত সমাপতনের একটা প্রাপ্তি হল, পুরাজীবতত্ত্ববিদ্যায় নতুন নতুন বিতর্কের অবতারণা। পাখিরা কি ডাইনোসরের বংশধর? পাখিরাই কি ডাইনোসর? কোন সে প্রাণী যাকে আদিতম পাখি বলে ধরতে পারি? পাখির পুরাতন জীবাশ্ম বলতে আর্কিওপটেরিক্সকে ধরা হত, আজ অবধি তার এগারোটা জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে, সে সবই জার্মানির একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের দান। কিন্তু বিশ্ব-অর্থনীতির মতো গত কয়েক দশকে পাখির পুরাজীবতত্ত্ববিদ্যাতেও হইহই করে ঢুকে পড়েছে চিন। চিনের নানা জায়গা থেকে পাওয়া জীবাশ্ম পাখির ইতিহাস উলটেপালটে দিচ্ছে। আর্কিওপটেরিক্সকেও তারা বঞ্চিত করেছে এত দিনের গরিমা থেকে। এই গোটা বিতর্কটা বইটিতে ধরতে চেয়েছেন শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। নিজে প্রথিতযশা পুরাজীবতত্ত্ববিদ, পাখির বংশলতিকায় এক বিশেষ জীবাশ্ম আবিষ্কারের সূত্রে তিনি নিজেও এক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। এই বইটি তাঁর একটি ইংরেজি গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণের সংক্ষিপ্ত বঙ্গানুবাদ বলে জানানো হলেও আসলে পুনর্লিখন, করেছেন মৈত্রী রায় মৌলিক। মূল গ্রন্থের ছাঁচ আংশিক আছে, বাকিটা চাপা পড়েছে অভিনিবেশের অভাবে সৃষ্ট কুয়াশায়। তবে এটা অনস্বীকার্য, বাংলায় বিজ্ঞানের এই বিশেষ শাখাটি সম্বন্ধে, তার অধিকারীদের মেজাজ-মনোভাবের সঙ্গে এবং এর রীতিমতো কর্মতৎপর হেঁসেলের সঙ্গে বাঙালি পাঠকের পরিচয়-সূত্রপাত ঘটাল এই বই।

কবিতাসংগ্রহ ১ম খণ্ড

শিশিরকুমার দাশ

৩০০.০০

প্যাপিরাস

শিশিরকুমার দাশ (১৯৩৬-২০০৩) তাঁর কাব্যসঙ্কলন বাজপাখির সঙ্গে কিছুক্ষণ-এ (১৯৯২) লিখেছেন: ‘‘দেশ ভাঙে, বাড়ি ভাঙে, উদ্বাস্তু দল ট্রেনে চাপে, স্টিমারে ভাসে/ আমাদের অশ্বমেধ ঘোড়াকে ধরে পুলিশ/ বিদেশী রাজ্যের গুপ্তচর বলে চালান দেয়/ টুকরো টুকরো করে কাটে।’’ ঠিক এখানেই নতুন মোড় নেয় স্তবকটি: ‘‘ঘুম ভাঙে, স্বপ্ন ভাঙে। ইতিহাস শুধু সঙ্গ ছাড়ে না।/ স্বপ্নের ভেতরে আসে বুড়ো একটা, সান্টাক্লজের মতো দাড়ি,/ সে অবলীলায় ফ্রেম ভেঙে টুকরো টুকরো ঘোড়া/ একসঙ্গে জুড়ে দেয়... ’’। কাব্যগ্রন্থটি সম্পর্কে কবিতাসংগ্রহ ১-এর ‘ভূমিকাকথা’-য় লিখেছেন শঙ্খ ঘোষ, ‘‘এক পরাবাস্তব জগৎ তৈরি করে তোলেন কবি, তাতে আমরা একেবারে বর্তমান মুহূর্তটাকে ছুঁতে পারি তার ভ্রষ্টতার যন্ত্রণার আর অন্বেষণের তীব্রতায়।’’ আর শিশিরকুমারের স্বীকারোক্তি: ‘‘আধুনিক কালের আশা-আকাঙ্ক্ষা, হতাশা-পরাজয় ও তার মধ্যেও বাঁচবার এক আশ্চর্য বিশ্বাসের মধ্যে স্থিত থেকে আমি কাব্যরচনা করি সচেতন ভাবে।’’ উল্লেখিত কাব্যগ্রন্থটির সঙ্গে জন্মলগ্ন (১৯৫৬), ১৯৮৬-তে প্রকাশিত অবলুপ্ত চতুর্থ চরণ ও হয়তো দরোজা আছে অন্যদিকে ঠাঁই পেয়েছে এই খণ্ডে। তাঁর গ্রন্থিত, অগ্রন্থিত ও অপ্রকাশিত যাবতীয় কবিতা দু’খণ্ডে প্রকাশিত হবে। লেখক, গবেষক, অধ্যাপক মানুষটি নাটককার এবং কবিও। ‘‘কবিতা ছিল তাঁর একেবারে অন্তরের জিনিস।... শিশিরকুমার কখনো তাঁর কবিতা থেকে সরে আসেননি।’’ লিখেছেন সৌরীন ভট্টাচার্য, এ-খণ্ডের শুরুতেই।

ভারতপ্রেমিক উইলিয়াম কেরী

সম্পা: ফণী পাল

৩৫০.০০

অমর ভারতী

আঠেরো শতকের শেষ দশকে ইংল্যান্ড থেকে উইলিয়াম কেরির এই বঙ্গে আসা শুধুমাত্র ধর্মপ্রচারের গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আমৃত্যু চার দশক ভারতে তাঁর অবস্থান, বঙ্গসংস্কৃতির আধুনিক কালের সূচনালগ্নের এক উন্মেষকারী কর্মোদ্যোগী হিসাবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অনিশ্চয়তা, অর্থসঙ্কট, পারিবারিক বিপর্যয়ের প্রতিকূল পথ থেকে তাঁর উত্তরণ বিস্ময়ের। বাংলা ভাষা চর্চা, বই রচনা, অনুবাদ, ছাপাখানা গড়ে তোলা, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে অধ্যাপনার মতো বহু উদ্যোগে নিজেকে জড়িয়েছিলেন, নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর এই সার্বিক প্রয়াস ও জীবন অন্বেষণের চালচিত্রে ধরা আছে সাধারণ থেকে অসাধারণত্বের দিকচিহ্ন। এই সার্বিক প্রেক্ষাপট উইলিয়াম কেরির এ দেশে আসার ২২৫ বছর পূর্তি স্মরণে গ্রন্থবদ্ধ হল। বিভিন্ন গবেষকের কেরি-চর্চা এ গ্রন্থে মান্যতা পেয়েছে। তাঁর অস্থির জীবনপ্রবাহ কলকাতা, হাসনাবাদ, ব্যান্ডেল, মদনাবতী, শ্রীরামপুর ইত্যাদি জায়গায় পরিশ্রমী সৃজনশীলতায় পরিপূর্ণ। মালদহের মদনাবতীর নীলকুঠিতেই তাঁর ভাষাবিদ ও অনুবাদক জীবনের প্রস্তুতি শুরু। মালদহ পর্বের এই স্বল্পজ্ঞাত কথাই মূলত সঙ্কলনের বিভিন্ন প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে। বাংলা গদ্যের সূচনালগ্নের পরীক্ষানিরীক্ষায় মুদ্রণযন্ত্র, বাংলা হরফ তৈরির প্রয়াসে কেরি বৃহত্তর কর্মযজ্ঞে আত্মনিয়োগ করেন। সে সব তথ্যালোচনা ও প্রাসঙ্গিক আলোকচিত্র এই সঙ্কলনকে মর্যাদাপূর্ণ করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement