পূর্ব-বাংলার গল্প
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৪৫০.০০
বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ
খালেদ চৌধুরীর প্রচ্ছদলিপি-সহ বইটির প্রথম প্রকাশ ১৩৭৯ বঙ্গাব্দে। সম্প্রতি বিশ্বভারতী-র সমাবর্তন উপলক্ষে বিশেষ প্রতিলিপি সংস্করণ (১৪২৫) বেরল বইটির। কবির লেখা পূর্ববঙ্গজনিত গল্পগুলির অনুপুঙ্খ বিবরণে ব্রিটিশ উপনিবেশের অবিভক্ত বাংলা আর তার জনজীবন যেন জীবন্ত... ছোটগল্পে ডিটেলস-এর এই অভিনিবেশই কথাসাহিত্যে আধুনিকতার এক বড় সঞ্চয়। গল্পগুলি পুনরায় পড়তে-পড়তে রবীন্দ্রনাথই যে আমাদের প্রথম আধুনিক গল্পকার সে-বিশ্বাস ফের পাকাপোক্ত হয়। এ-সংকলনে ‘মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পে শশিভূষণের সেই অবিস্মরণীয় উক্তি: ‘‘জেল ভালো। লোহার বেড়ি মিথ্যা কথা বলে না, কিন্তু জেলের বাহিরে যে স্বাধীনতা আছে সে আমাদিগকে প্রতারণা করিয়া বিপদে ফেলে।... জেলের মধ্যে মিথ্যাবাদী কৃতঘ্ন কাপুরুষের সংখ্যা অল্প, কারণ স্থান পরিমিত— বাহিরে অনেক বেশি।’’ সংকলনের বাকি গল্পগুলি: পোস্ট্মাস্টার, খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন, একরাত্রি, ছুটি, সুভা, শাস্তি, সমাপ্তি, অতিথি, দুর্বুদ্ধি, যজ্ঞেশ্বরের যজ্ঞ, বোষ্টমী। পল্লি-বাংলার অভিজ্ঞতাই যে কবির গল্পগুলির উৎস, ছিন্নপত্রেই তার উল্লেখ করেছেন রবীন্দ্রনাথ: ‘‘নদীর ওপারে গাছপালার ঘন ছায়ায় গ্রামের জীবনযাত্রা।... বোট ভাসিয়ে চলে যেতুম... আমার গল্পগুচ্ছের ফসল ফলেছে আমার গ্রাম-গ্রামান্তরের পথে-ফেরা এই বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভূমিকায়।’’
নির্বাচিত রচনাসংগ্রহ ২/ বিনয়কুমার সরকার
সম্পাদক: তুষারকান্তি ঘোষ
৪০০.০০
অক্ষর প্রকাশনী
বিনয়কুমার সরকার (১৮৮৭-১৯৪৯) বিশ শতকের অনন্য বাঙালি মনীষা। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে মালদহ জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্সে প্রথম হন, ১৯০৫-এ প্রেসিডেন্সি থেকে ঈশান বৃত্তি-সহ বিএ এবং পরের বছর এমএ পাশ করেন। ইংরেজি বাংলা ছাড়া সংস্কৃত গ্রিক ল্যাটিন ভাল জানতেন তিনি, দ্রুত দক্ষতা অর্জন করেন ফরাসি জার্মান ও ইতালিয়ান ভাষায়। ছাত্রাবস্থাতেই যোগ দেন ডন সোসাইটিতে, তাঁর গুরু ছিলেন সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। জাতীয় শিক্ষা পরিষদে শিক্ষকতা করেছেন, ১৯১৪-২৫ পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯২৬-৪৯ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়ান। তিনি শতাধিক গ্রন্থের প্রণেতা। বহু জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপন, ছাত্রদের উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য বিদেশে পাঠানো তাঁরই উদ্যোগে সম্ভব হয়। মালদহ জেলা স্কুলের প্রাক্তনী সংগঠনের উদ্যমে শুরু হয়েছে তাঁর নির্বাচিত রচনাসংগ্রহ প্রকাশ। প্রথম খণ্ডটি মালদহ থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল, বর্তমানে নিঃশেষিত। দ্বিতীয় খণ্ডে মূল্যবান সংযোজন বিনয়কুমারের স্ত্রী ইডা সরকারের লেখা তাঁর আংশিক জীবনী (মূল জার্মান থেকে তাঁর কন্যা ইন্দিরা পালিতের ইংরেজি অনুবাদ থেকে তুষারকান্তি ঘোষ বাংলায় অনুবাদ করেছেন)। এ ছাড়া আছে বিনয়কুমারের ইংরেজি ও বাংলা নানা রচনা— ‘নয়া বাঙ্গলার গোড়াপত্তন’ (২য় ভাগ), ‘কথামৃতের সামাজিক কিম্মৎ’ সহ বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ, ইংরেজি গ্রন্থ ‘ফিউচারিজ়ম অব ইয়ং এশিয়া’ ও কয়েকটি দুর্লভ নথি।
দুর্ভিক্ষ
সম্পাদক: অধীর বিশ্বাস
৩৫০.০০
গাঙচিল
‘‘সপ্তাহে একদিন সরকারের নৌকা আসত। নৌকায় আমাদের জন্য আসত আটা, চিঁড়ে, ভেলিগুড়। আটা হিসেব করে লোকপ্রতি মুঠো করে দিত। আমরা আটা গুলিয়ে গিরা শাক সেদ্ধ দিয়ে খেতাম। আটা খুব হিসাব করে খরচা করা হত। রাতে বেশির ভাগ দিন না খেয়েই থাকতে হত। খুব খিদে পেলে আটা ছাড়া গিরা শাক সেদ্ধ করে খেতে হত।’’ জানিয়েছেন আবেদন বিবি, বয়স ১০৩, থাকেন সুন্দরবনে, চোখে দেখতে না পেলেও কানে শোনেন। বানভাসিতে না-খেতে-পাওয়ার স্মৃতি বলেছেন শৈলেন সরকারকে— এমন আরও সাক্ষাৎকার লিখেছেন তিনি, ‘দুর্ভিক্ষের সাক্ষী’ তাঁর কৃত বিভাগ, সেখানেই স্বর্ণময়ী হালদার, যাঁর বয়স ৯৪, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বাস, বাপের বাড়ি ছিল উত্তরে, কাশীনগরে। বলেছেন ‘‘স্বামী ছিল খোঁড়া, হাঁটতে পারত না। শ্বশুরবাড়ি আসা থেকেই আমাকে ভিক্ষা করতে হয়েছে।... ভিক্ষার জন্য অনেক দূর দূর যেতে হত। তখন ওই গিরা শাক, পাতলার (শাপলার) মূল সেদ্ধ করে খাওয়া।’’ ‘মন্বন্তরের বাংলা’ বিভাগে পঞ্চাশের (১৩৫০ বঙ্গাব্দ) ও ছিয়াত্তরের (১১৭৬ বঙ্গাব্দ) মন্বন্তর নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রচনা, মধুশ্রী মুখোপাধ্যায় ও জনম মুখোপাধ্যায়ের লেখা থেকে নির্বাচিত অনুবাদ। এ ছাড়াও ‘দুর্ভিক্ষের ভারত’ বা ‘দুর্ভিক্ষের বিদেশ’-এর মতো বহুবিধ বিভাগ ও রচনা। সংকলনের শুরুতেই প্রশ্ন তুলেছেন সম্পাদক: ‘‘দুর্ভিক্ষের কথা একেবারেই আমাদের স্মৃতি থেকে সরিয়ে দিয়েছি।... তা কি গ্রামের গরিব লোকজন মারা গিয়েছিল বলে?’’