সাংস্কৃতিক ইতিহাস

রাঢ়ের অরণ্যাবৃত অঞ্চলে যে পালযুগেও জৈনধর্ম সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল, তার প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ যথেষ্ট। স্থানীয় ‘শরাক’ সম্প্রদায় জৈন ‘শ্রাবক’ শ্রেণির উত্তরসূরি বলে মনে করেন অনেক গবেষকই। এই পরিপ্রেক্ষিত সত্ত্বেও বাংলায় জৈনধর্ম সংক্রান্ত চর্চা তেমন ব্যাপ্তি পায়নি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৮ ০০:১৭
Share:

বাংলা ভাষায় জৈনধর্ম-চর্চা

Advertisement

সম্পাদক: তপনকুমার ঘোষ

৪০০.০০

Advertisement

প্যাপিরাস

আড়াই হাজার বছর আগে, জৈন ধর্ম বাহিত হয়ে আর্য সভ্যতার প্রথম তরঙ্গগুলি বঙ্গের পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে রাঢ় ভূখণ্ডের দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করে। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে জৈন তীর্থঙ্কর মহাবীর এই অঞ্চলে এসেছিলেন। এর দু’তিনশো বছরের মধ্যেই উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গে জৈন ধর্ম প্রসারিত হয়। উত্তরে অন্তত খ্রিস্টীয় সপ্তম শতক পর্যন্ত তার প্রভাব অক্ষুণ্ণ ছিল। রাঢ়ের অরণ্যাবৃত অঞ্চলে যে পালযুগেও জৈনধর্ম সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল, তার প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ যথেষ্ট। স্থানীয় ‘শরাক’ সম্প্রদায় জৈন ‘শ্রাবক’ শ্রেণির উত্তরসূরি বলে মনে করেন অনেক গবেষকই। এই পরিপ্রেক্ষিত সত্ত্বেও বাংলায় জৈনধর্ম সংক্রান্ত চর্চা তেমন ব্যাপ্তি পায়নি। রামমোহন, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, অরবিন্দ জৈনধর্ম নিয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখাননি। তবু হরিসত্য ভট্টাচার্য ‘জিনবাণী’ পত্রিকায়, পরে গণেশ লালওয়ানী ‘শ্রমণ’ পত্রিকায় জৈন-চর্চার স্বাক্ষর রেখেছেন। নানা দুর্লভ পত্রিকা থেকে আঠেরোটি নিবন্ধ এখানে সঙ্কলিত, যাতে উঠে এসেছে বাংলা ভাষায় জৈন-চর্চার ক্ষীণ ধারাটি। শেষে অশোক উপাধ্যায়-কৃত রচনাপঞ্জিতে ধরা রইল এমন আরও অনেক প্রবন্ধের হদিশ। লেখক তালিকায় আছেন প্রবোধচন্দ্র সেন, অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, ক্ষিতিমোহন সেন, সুকুমার সেন, পূরণচাঁদ সামসুখা, গোপেন্দ্রকৃষ্ণ বসু প্রমুখ।

জলগণ্ডূষ অথবা আমার জীবনকথা/ হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়

সম্পাদক: বিশ্বনাথ রায়

৩৫০.০০

আশাদীপ

এমন আত্মকথনও আছে যেখানে লেখক নিজের ভিতরের ব্যক্তিমানুষটিকে নিরন্তর স্বকালের সঙ্গে অন্বিত করে চলেন। তিনি হয়তো সময়ের চিহ্নে আত্ম-আবিষ্কার করতে চান, আর এও তো ঠিক যে, ‘ব্যক্তিগত’তে আটকে না থেকে সমকালের নানান মুহূর্তের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে চান লেখক, প্রবহমান অনির্দিষ্ট ইতিহাসে যাতে তাঁর স্থানাঙ্ক নির্দিষ্ট হতে পারে। গত শতকের বাঙালির সংস্কৃতিচর্চায় সাহিত্যরত্ন হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় (১৮৯০-১৯৭৭) তেমনই লেখক, যাঁর জীবনকথার পরতে পরতে জড়িয়ে গিয়েছে উনিশ ও বিশ শতকের ব্রিটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত বাংলার (বিশেষত রাঢ়বঙ্গের) সমাজ, ইতিহাস, অর্থনীতি। তাঁর আত্মকথার অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির সঙ্গে ‘বিভিন্ন সময়ে নানা পত্র-পত্রিকায় ও গ্রন্থে প্রকাশিত আরও সাঁইত্রিশটি আত্মজীবনীমূলক লেখার সংকলন এই বই।’ জানিয়েছেন সম্পাদক। সঙ্গে এও জানিয়েছেন, অর্থাভাবের তাড়নায় কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্য দিয়েই তো কষ্ট করে জ্ঞানচর্চার উচ্চমার্গে পৌঁছেছিলেন তিনি, বাংলা সাহিত্যে যা বিরল বললেও কম বলা হয়, এবং বিশ শতকের বঙ্গ-মনীষীর প্রায় অনেকেই ছিলেন তাঁর বান্ধবজন, ‘এই বইয়ের আত্মজীবনীমূলক লেখাগুলিতে ধরা পড়েছে তাঁদের বিচিত্র প্রসঙ্গ।’ যেমন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রসঙ্গে তিনি লিখছেন, ‘‘শাস্ত্রীমহাশয় নারিকেলের গঙ্গাজলী নাড়ু তৈয়ারি করাইয়াছিলেন। এই নাড়ু আগুনে পাক করিতে হয় না।... গঙ্গাজলী সেই খাইয়াছিলাম— প্রথম ও শেষ। শাস্ত্রীমহাশয় লোককে খাওয়াইতে খুব ভালোবাসিতেন।’’ স্মৃতিকথনটি হয়ে উঠেছে বাঙালির সাংস্কৃতিক ইতিহাসের আকরগ্রন্থ।

উত্তরনন্দিনী দেবী চৌধুরাণী/ অনন্য আবহমান একাকিনী

গৌতমকুমার দাস

৩০০.০০

সোপান

বঙ্কিম-কৃত উপন্যাসের ‘দেবী চৌধুরাণী’ ও তাঁর কাহিনি সম্পূর্ণ কল্পনা আশ্রিত হলেও দেবী চৌধুরানি কিন্তু কল্পিত চরিত্র নন। বাস্তবের মাটিতে তাঁর আনাগোনা, সমাজ ও সংসার। দেবী চৌধুরানি তাঁর উপাধি। এ ছাড়াও তিনি রংপুর জেলার (বর্তমান বাংলাদেশ) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ ও কৃষক-বিদ্রোহের অন্যতম নেত্রী। আসল নাম জয়দুর্গা। তিনি রংপুরের কাউনিয়া থানার শিবকণ্ঠিরাম গাঁয়ের কুরশা বামনপাড়ার মেয়ে। বাবার নাম ব্রজকিশোর রায়চৌধুরী। কিশোরী জয়দুর্গার সঙ্গে মন্থনার (বর্তমান পিরগাছা) যুবক জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরীর বিয়ে হয়। তখন থেকেই তিনি জয়দুর্গা রায়চৌধুরী দেবী চৌধুরানি। মন্থনা এস্টেটের তিন দশকেরও বেশি (১৭৬৫-১৮০১) জমিদারনি। কৃষক-অন্ত প্রাণ দেবী চৌধুরানি ইংরেজ শাসককুলের দু’চোখের বিষ। তিনি ইংরেজ শাসকদের অন্যায় শাসনে অত্যাচারিতা, নির্যাতিতা, উৎপীড়িতা। তাঁকে জমিদারিচ্যুত করার জন্য বার বার শাসক ইংরেজ আইন বদলেছে, খাজনা বকেয়ার নামে তাঁকে জমিদারি থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছে। তবুও তিনি ইংরেজ শাসকের জুলুম মেনে নেননি। আলোচ্য বইটিতে এ রকম নানান ঐতিহাসিক তথ্য সংবলিত সংক্ষিপ্ত বিবরণ তো আছেই, দেবী চৌধুরানির নামাঙ্কিত স্থানগুলির কথা ও কাহিনির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ইতিহাস, নথিপত্র, পত্রাবলি, তাঁর আমলের ও পরবর্তী সময়ের খণ্ড খণ্ড সামাজিক চিত্র, অত্যাচারী ব্যক্তি সাধারণের চরিত্রের বিশ্লেষণ ইত্যাদিও আলোচিত। পরিশ্রমসাধ্য অনুসন্ধানে বইটি ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়ে আলো ফেলেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement