চারপাশ থেকে প্রাকৃতিক পরিবেশ দ্রুত লুপ্ত হওয়ার কারণে নিজেদের ঐতিহ্য ভুলে যেতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ, এ কথাই খেয়াল করিয়ে দিল ভূমধ্যসাগর। বাঙালি বিয়ের অনুষ্ঠানে নানা উপকরণে নিহিত নিসর্গচেতনা, ত্রিপুরার নিজস্ব খার্চি পুজোর উৎসব, উত্তরবঙ্গের ভান্ডানি পুজো— এ ধরনের রচনাদির সঙ্গে রয়েছে উন্নয়ন-এর গুঁতোয় বিপর্যস্ত খনি-শ্রমিকের স্বাস্থ্য নিয়ে রচনাও। সম্পাদক জয়া মিত্রের কথায়: ‘বিষণ্ণ লাগে যখন দেখি আমাদের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মানুষরা প্রায় কেউই মন থেকে কৃষির গুরুত্বের কথাকে প্রাধান্য দেন না।...’ প্রয়াত অশোক সাকসেরিয়া, গৌরী ধর্মপাল-এর সঙ্গে মীনাক্ষী সেন-কে নিয়ে রাজশ্রী দাশগুপ্তের স্মরণলেখ-য় নকশাল বন্দি হিসেবে দু’জনার জেলজীবনের স্মৃতি।
‘পনেরো শতকের শেষ দশক থেকে ষোড়শ শতকের চতুর্থ দশক পর্যন্ত হুসেন শাহি যুগে— বা তাঁর সামান্য আগে-পরে বাংলা সাহিত্যের বিকাশ ঘটেছিল উল্লেখযোগ্যভাবে। মুসলমান শাসকদের সাহায্য ছাড়া তা সর্বতোভাবে সম্ভব ছিল না।... বাংলার মুসলমান সুলতানগণ দিল্লীর মুসলমান সুলতানের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন এবং সেই কাজেই স্থানীয় হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের বন্ধুত্ব তাদের কাম্য ছিল।’ আমিনুল ইসলাম লিখেছেন ‘হুসেন শাহ শ্রীচৈতন্য ও সমকালীন বাংলা’ নিয়ে। এ ধরনের আরও কয়েকটি রচনা নিয়ে পরিচয়-এর (সম্পা: বিশ্ববন্ধু ভট্টাচার্য) গুরুত্বপূর্ণ বিভাগটি ‘পুরাতনী ভাষা সাহিত্য: সময় ও সমাজ’।
নিত্যপ্রিয় ঘোষের ‘ডাকটিকিটে রবীন্দ্রনাথ’ রচনায় ‘কাদম্বরী’ প্রসঙ্গে মন্তব্যটি এ মুহূর্তে অতীব প্রাসঙ্গিক: ‘বলা হয়েছে, প্রথম যুগে কাদম্বরী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের কাব্য প্রেরণা। এবিষয়ে কোনো মতদ্বৈত নেই। কিন্তু ... কাদম্বরীকে উপলক্ষ করে ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ ‘নষ্টনীড়’ লেখেন। এটা ঐতিহাসিক তথ্য নয়, কিছু লোকের বিকৃত অনুমান মাত্র।’ এ ছাড়াও কালপ্রতিমা-য় (সম্পা: নলিনীকুমার চক্রবর্তী) রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীকে নিয়ে সৌরীন ভট্টাচার্য, স্বর্ণকমল ভট্টাচার্যকে নিয়ে তপস্যা ঘোষ, সত্যপ্রিয় ঘোষকে নিয়ে রুশতী সেন, খালেদ চৌধুরীকে নিয়ে প্রণব বিশ্বাসের জরুরি রচনা।
‘আনন্দ বাগচী স্মরণ সংখ্যা’ চেতনা সঙ্গী-র (সম্পা: বিশ্বনাথ ঘোষ)। তাতে তাঁর সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনার সঙ্গে জীবনপঞ্জি, বংশতালিকা ও পুস্তক পরিচয়। সুধেন্দু মল্লিক এই অপ্রাপণীয় কবিপ্রতিভা প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন ‘রাজ আনুকূল্য সব কবির জোটে না। শ্রেষ্ঠীর কৃপা বা বরাভয়ও সবাই পান না... যাঁরা পেয়েছেন বা পেয়ে চলেছেন তাঁরা কি একবারও এঁর কথা ভাববেন না?’
ঋক্বেদ-এর ‘বিশেষ সাক্ষাৎকার সংখ্যা’য় (সম্পা: অখিলেশ সুর) শক্তিপদ রাজগুরু, মহাশ্বেতা দেবী, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় থেকে অনিল ঘড়াই, তিলোত্তমা মজুমদার, সুবোধ সরকার প্রমুখ সকলেই যেন নিজের মুখোমুখি হয়েছেন। মণীন্দ্র গুপ্ত বলেছেন ‘কোনো যুগেই ভালো কবির সংখ্যা খুব বেশি নয়।’
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ‘রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ও আধুনিক ভারতীয় সংস্কৃতি’ রচনায় তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন ‘রামানন্দবাবু প্রবাসী ও মডার্ণ রিভিউ আরম্ভ করিয়াছিলেন ভারতীয় সংস্কৃতির একজন উদ্যোগী পরিপোষক রূপে...।’ তাঁকে নিয়ে এবং এই সময়-এর (সম্পা: অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়) বিস্তারিত ক্রোড়পত্রে যোগেশচন্দ্র বাগল থেকে মৈত্রেয়ী দেবীর রচনা। সঙ্গে জীবনপঞ্জি।
‘বাংলা কাব্যক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিক... সংস্কারের অচলায়তনকে যিনি প্রথম সচেতন এবং সার্থক ভাবে আঘাত হানতে পেরেছিলেন’— কবিতা সিংহকে নিয়ে রফিকুল হোসেন। নকশিকথা-য় (সম্পা: আনন্দরূপ নায়েক) স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা নারী-কবিতা নিয়ে আলোচনা: ‘অর্ধেক আকাশ’।
‘‘তিলোত্তমা তাঁর গল্পে ‘নিজস্ব উপনিবেশ’ তৈরি করতে পেরেছেন, যার অবস্থান উনিশ-কুড়ি ও মল্-সংস্কৃতি থেকে অনেক দূরে।’’ রবিশংকর বল লিখেছেন। তিলোত্তমা মজুমদারকে নিয়ে ক্রোড়পত্র হান্ড্রেড মাইলস-এ (সম্পা: ঐশিক দাশগুপ্ত মৌলি তরফদার)। নিবন্ধাদির সঙ্গে তাঁর গ্রন্থপঞ্জিও।
শামিয়ানা-র (সম্পা: শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘বহির্বঙ্গে বঙ্গচর্চা’-র সংখ্যাটিতে উত্তরপূর্ব ভারত, দিল্লি, ছত্তীসগঢ়, আন্দামান, উত্তরবঙ্গ, মেদিনীপুরের সাহিত্যচর্চার আলোচনা। প্রাক্কথন-এ ন্যায্য অভিমানও: ‘বাংলা ভাষাচর্চায় উপেক্ষার সুদীর্ঘ বনবীথি আজ কারই বা অজানা। বিশেষত সেই ভাষাচর্চা যখন কোনো প্রত্যন্ত প্রবাস বা মফস্সল থেকে করা হয়ে থাকে।’