নির্বাচিত গল্প
ইসমত চুগতাই
৩৫০.০০
ভাষা সংসদ
মৃত্যুর পর তাঁকে কবর দেওয়া হয়নি, তাঁর শেষ ইচ্ছে অনুসারে দাহ করা হয়েছিল মৃতদেহ। এই একটি বাক্যেই ইসমত চুগতাই (১৯১৫-১৯৯১) সম্বন্ধে অনেকগুলো কথা বলে দেওয়া যায়। বাকি কথা বলতে পারে তাঁর সাহিত্য। ‘পেশা’ গল্পটির কথাই ধরা যাক। এক স্কুল শিক্ষয়িত্রীর জবানিতে বলা গল্প, ছোটবেলা থেকে বারাঙ্গনাদের প্রতি ঘৃণা যাঁর চেতনায় গেঁথে দিয়েছিল পরিবার। এতখানিই যে, কোনও বারাঙ্গনাকে গায়ের গন্ধে চিনতে পারতেন তিনি। এমনই কপাল, বাড়িভাড়া নিলেন যেখানে, তার ওপরতলাতেই বাস এক নারীর, যাঁর গায়ে নির্ভুল বারাঙ্গনার গন্ধ। তাঁর সঙ্গে, শিক্ষয়িত্রীর অংশত অনিচ্ছাতেই, জান-পহেচান হল। ঘৃণা থাকল, কিন্তু পরতে পরতে খুলে গেল অন্য অনুভবও। বারাঙ্গনার সঙ্গে যে অন্য নারীদের অমিলের চেয়ে মিলই বেশি, টের পেতে থাকলেন তিনি। তবুও ঘৃণার দূরত্ব পার করা গেল না পুরোটা। গল্পের শেষে এসে যখন জানা গেল, সেই নারী আসলে এক অভিজাত পরিবারের বধূ, সেই মুহূর্তটায় এসে কি শিক্ষয়িত্রীর গুলিয়ে গেল না সব? প্রসঙ্গত, ইসমত নিজেও ছিলেন এক স্কুলের শিক্ষয়িত্রী।
ইসমত চুগতাই এই রকমই। মুসলমান জেনানা মহলের অচেনা অলিগলিতে নিয়ে যান পাঠককে, আর দাঁড় করিয়ে দেন পুরুষতন্ত্রের তৈরি করে দেওয়া খাঁচার সামনে। তাঁর গল্পে মিশে থাকে তাঁর জীবন, তাঁর বিদ্রোহ, তাঁর আপস। তাঁর বহু গল্পেই কাহিনির ঘনঘটা নেই, কিন্তু প্রবল ধাক্কা আছে। প্রাত্যহিকতার মধ্যে নারীর যে অবমাননা, যে দমন লিপ্ত, ইসমতের গল্প পাঠককে এনে ফেলে তার ঠিক মাঝখানে। দুর্ভাগ্য, বাঙালি পাঠক তেমন ভাবে চিনলই না ইসমত চুগতাইকে। এই সঙ্কলনে সেই সুযোগ ছিল। শুধু তাঁর গল্প নয়, তাঁর রাজনীতিকে পাঠকের সামনে নিয়ে আসার সুযোগ, যাতে গল্পগুলোও সম্পূর্ণ অর্থে উপনীত হতে পারে। রামকুমার মুখোপাধ্যায়ের মুখবন্ধ, বা নাসিরুদ্দিন শাহের ‘ইসমত আপাকে নাম’ লেখাটির অনুবাদ সেই দায়িত্ব পূরণ করতে পারল না। সমগ্র বইটির সম্পাদনায় অযত্নের ছাপ, বানান ভুল। যেমন অনেক ক্ষেত্রেই হয়, অনুবাদের ভাষা যেন পুরোপুরি বাংলা হয়ে উঠতে পারল না।
তবুও বইটি গুরুত্বপূর্ণ। ইসমত চুগতাইয়ের জন্য। বাঙালি পাঠক যদি তাঁকে চিনতে শুরু করে, সেই আশাটুকুর জন্য।