ব্যক্তি ও দেশ পুস্তিকামালা ৭:
অবলা বসু
দময়ন্তী দাশগুপ্ত
২৫০.০০
ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ়
“মেয়েদের আর্থিক ভাবে স্বাধীন হওয়ার দরকার কী? পুরুষরাই তো রয়েছে। ভাই, বাবা, স্বামী, তারা রোজগার করলেই তো হয়।”— এ রকম একটা প্রশ্নের সামনে আজকের বিদুষীরা যুক্তিতর্ক দিয়ে লড়াই শুরু করবেন। কিন্তু একশো বছর আগেকার বাঙালি ‘নারীবাদী’ কী বলতেন? অবলা বসু বলতেন একটা সোজাসরল কথা। মেয়েরা শেষ পর্যন্ত কী করবে আর কী করবে না, সেটা আলাদা বিষয়, “কিন্তু ক্ষমতা থাকা দরকার, না হলে পুরুষরা মেয়েদের সম্মান করবে কী করে?”
গত ৮ অগস্ট ছিল অবলা বসুর ১৫৫ বছরের জন্মবার্ষিকী। গত পাঁচ বছরেও কি আমরা যথেষ্ট ভেবেছি তাঁর কথা? এ দেশের নারীশিক্ষা তাঁর মতো মানুষরা কতখানি এগিয়ে দিয়েছেন, সে কথা? বিধবা ও দুঃস্থ মহিলাদের জন্য গভীর দুর্ভাবিত ছিলেন যিনি, মহিলাদের প্রাতিষ্ঠানিক বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানে যিনি ছিলেন একক অগ্রণী— তাঁর বিষয়ে আমরা হয়তো প্রথমেই ভেবে ফেলি, সমাজ-সংস্কারক দুর্গামোহন দাশের কন্যা, বা আচার্য জগদীশচন্দ্রের স্ত্রী, এই সব।
ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ়-এর ব্যক্তি ও দেশ পুস্তিকামালার সাত নম্বর খণ্ডটি— অবলা বসু— এই জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যপূর্ণ সুপাঠ্য বইটি আমাদের বাধ্য করে কী আমরা পেয়েছিলাম অবলা বসুদের কাছ থেকে, সে কথা ভাবতে। ভাবনায় রীতিমতো বিপ্লবী অবলা মনে করতেন, বিধবাবিবাহের থেকেও জরুরি হল বিধবাদের, এবং সাধারণ ভাবে, নারীদের, স্বাবলম্বী হওয়া। ব্রাহ্ম সমাজভুক্ত হয়েও তাঁর আসল মনোযোগ ছিল হিন্দু সমাজের প্রবল ভারে পিষে যাওয়া নারীর দিকে। বলতেন, ব্রাহ্ম মহিলারা তবু নানা রকম কাজ করতে পারেন বাইরে, কিন্তু হিন্দু সমাজ তখনও মহিলাদের সেই সুযোগ দিতে নারাজ, অথচ বিধবা বা স্বামী-পরিত্যক্তাদের ভার নিতেও প্রস্তুত নয়। দিদি সরলা রায়ের (গোখেল মেমোরিয়াল স্কুলের প্রতিষ্ঠাত্রী) মতোই তিনিও বুঝেছিলেন, কিছু একটা করে হিন্দু বাঙালি মেয়েদের সত্যিকারের বাঁচার পথ খুঁজে দেওয়াটাই জরুরি। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর চিঠিপত্রেও বার বার উঠে আসে এই উদ্বেগ: অনুরোধ করতে ছাড়েন না, “আপনি অবসরমতো স্কুলের মেয়েদের জন্য যদি কোনরূপ লেখা লিখিয়া দেন তাহা হইলে উপকার হয়...”
এ কি শুধু অতীতের কথা? না চলমান বর্তমানেরও দুর্ভাবনা? দময়ন্তী দাশগুপ্ত ভাবিয়ে দিতে চাইলেন নতুন করে। স্বাদেশিকতা যে শুধু ধর্মান্ধ পূজাচার নয়, স্বদেশের মানুষের ক্ষমতায়নেরও জাতীয় ঐতিহ্য যে আমাদের ইতিহাসেই রয়েছে, নারীর মুখেই নারীমুক্তির পথের সন্ধান শোনা গিয়েছে। ফিরে ভাবতে পারব আমরা?
পনেরো অগস্ট-এর মতো দিনেও দেশের তেরঙা পতাকা দেখলে যদি এ দেশের কোথাও ভীতির সঞ্চার হয়, সেই জায়গার নাম— কাশ্মীর। কাশ্মীর নিয়ে ভারত কী ভাবে, আর ভারত নিয়ে কাশ্মীর কী ভাবে, এই আলোচনা এখনও এ দেশে ঠিকমতো শুরুই হয়নি বলা চলে। যাঁরা শুরু করতে চেষ্টা করছেন, করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে একটি বিশিষ্ট নাম— শুজাত বুখারি। বললে ভুল হবে না যে, এই কারণেই তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন ২০১৮ সালের ১৪ জুন, তাঁর কর্মস্থল রাইজ়িং কাশ্মীর সংবাদপত্র অফিস থেকে বেরনোর সময়। বুখারির কয়েকটি সাংবাদিক লেখাপত্র সংগ্রহ করে তৈরি হয়েছে বইটি।
দ্য ডার্টি ওয়ার ইন কাশ্মীর:
ফ্রন্টলাইন রিপোর্টস
শুজাত বুখারি
১৫০.০০
লেফ্টওয়ার্ড
এর ভূমিকায় লিখেছেন সাংবাদিক আর বিজয়শঙ্কর— নির্ভীক সত্যকথন ছিল বুখারির বৈশিষ্ট্য। বুঝতে অসুবিধা হয় না কেন তাঁর না থাকাটা অনেকের কাছেই সুবিধাজনক।
বুখারির যতগুলি লেখা এখানে গ্রথিত, সব ক’টিরই মূল প্রতিপাদ্য, কাশ্মীরের বাস্তবের সঙ্গে দিল্লির ভাবনা ও কাজকর্মের বিরাট দূরত্ব। পাকিস্তানের অন্যায় মাথা গলানো নিয়ে তিনি বিরক্ত, হুরিয়তের ভূমিকায় উদ্বিগ্ন। কিন্তু সবচেয়ে ক্ষুব্ধ দিল্লিকে নিয়েই, কেননা “সত্তর বছর ধরে কাশ্মীরের মানুষ কী চায় তারা বুঝিয়ে দেওয়ার পরও দিল্লি বুঝতে পারেনি যে কাশ্মীর সঙ্কট আসলে একটা রাজনৈতিক সঙ্কট— তার একটা রাজনৈতিক সমাধান চাই।”
বর্তমান সরকারের আমলে এই সঙ্কট অনেক বেড়েছে বলেই কাশ্মীরি তরুণদের উগ্রবাদের দিকে ঝোঁকও হুহু করে বাড়ছে, বলেন শুজাত। এক কথায় যদি বোঝাতে হয়, বিজেপি আমলে সঙ্কটবৃদ্ধির স্বরূপটাকে, তা হলে উত্তর তাঁর স্পষ্ট— সেনাবাহিনীর হাতে সম্পূর্ণত কাশ্মীরকে ছেড়ে দেওয়া, “কমপ্লিট ইমিউনিটি ফর দি আর্মি।” এটাই কাশ্মীরের ‘নিউ নর্মাল’।