এ কবি নিভৃতচারী

এ কি উপন্যাস? না উপন্যাসের আশ্রয়ে এক ‘অনুগামিনী’র বয়ে যাওয়া নদীমাতৃক জীবনচরিত। না কি এক তথ্যচিত্র বা তার চিত্রনাট্য! ১৮৮৬ সালে শ্রীরামকৃষ্ণের মহাপ্রয়াণ ঘটে। তার পর পরই এই আখ্যানমঞ্জরী।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:২৩
Share:

অনুগামিনী

Advertisement

অভিজিৎ চৌধুরী

২০০.০০

Advertisement

আনন্দ পাবলিশার্স

এ কি উপন্যাস? না উপন্যাসের আশ্রয়ে এক ‘অনুগামিনী’র বয়ে যাওয়া নদীমাতৃক জীবনচরিত। না কি এক তথ্যচিত্র বা তার চিত্রনাট্য! ১৮৮৬ সালে শ্রীরামকৃষ্ণের মহাপ্রয়াণ ঘটে। তার পর পরই এই আখ্যানমঞ্জরী। এ সেই সময়ের কথা যখন কলকাতা শহর হাঁ করে দেখছে সেই সব চরিত্রকে যাঁরা এক দিন কিংবদন্তি হয়ে যাবেন। এ হল সেই সময়ের কথা যখন হাটখোলার মোড়ে গিরিশ টানছেন নরেনকে থিয়েটারের দিকে আর নরেন টানছেন গিরিশকে দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরের দিকে। এ রচনা সম্পূর্ণ অন্য অনুভূতি বহন করে। পাঠকের যেন মনে হয় বিবেকানন্দ নিবেদিতা গিরিশচন্দ্র এমনকি তিনকড়ি অবধি রক্তমাংসের শরীর নিয়ে চারপাশে ঘোরাফেরা করছেন। কবেকার হারিয়ে যাওয়া পদ্মকরবী ও কোকিলাক্ষ-র গন্ধ যেন বই থেকে বেরিয়ে এসে ছড়িয়ে যায়। এখানে আর একটি লক্ষণীয় বিষয় ইংরেজি শব্দ-বাক্যের ব্যবহার যা এটিকে অভিনবত্ব দিয়েছে। লেখক সেই তত্ত্বেই বিশ্বাস করেন যে একাকী কোনও আনন্দ নেই। তাই তিনি সব পাঠককে নিয়ে বসেন এ উপন্যাস শোনাতে। হ্যাঁ, এই উপন্যাস যেন পড়ার চেয়েও অনেক বেশি খুব নীরবে কানে শুনছি বলে মনে হয়। এক বিপুল শ্রমসাধ্য কাজকে অত্যন্ত সহজ ভাষায় অভিজিৎ উপহার দিয়েছেন।

কবিতাসংগ্রহ ১

গৌতম চৌধুরী

২৫০.০০

রাবণ

কবিতায় যে কখনও স্থির সত্য হয় না তা মনে করেন গৌতম চৌধুরী। তাঁর ‘কবিতাসংগ্রহ’ পাঠ করতে গিয়ে তেমনই এক অনুভূতি হয়। ১৯৭৭-এ প্রকাশিত কলম্বাসের জাহাজ থেকে শুরু করে ১৯৯৯-এর আমি আলো অন্ধকার ও সঙ্গে কিছু অগ্রন্থিত কবিতা নিয়ে এই সঙ্কলন। এক নামহীন অতিশয় ছোট গদ্যে (সে কি গদ্য না কি কবিতাই!) তিনি তাঁর কবিতাসংগ্রহ সম্বন্ধে কিছু কথা ‘‘নিবেদন করিয়াছেন, কেন না মনে হয় চলিত ভাষায় তাঁর আর কিছু রচনা করিতে সাধ জাগে না।’’ কী বলেছেন গৌতম সে রচনায়? ‘‘চারিপাশে কত শালপ্রাংশু দীর্ঘ মহীরুহের সারি, কত মহা মহা প্রাণীর সংকীর্তনের কলরোল। তাহার ভিতর সেই কীটও আপন আনন্দে বিভোর। এই আর কী? চক্ষু হইতে এই তির্যক আলো সরান ধর্মাবতার!’’ কীট কে? গৌতম নিজেকেই সেই জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন। আর তিনি যখন বলেন আলো সরাতে, তখনই বোঝা যায় এ কবি নিভৃতচারী। কোনও সজল মেঘের দিনে বা সন্ধের নিচু আলোর পথে পথে ঘুরে বেড়াতেই তিনি পছন্দ করবেন তাঁর জীবনে। ‘চৌঠা ডিসেম্বর মুনিয়াকে’— এ কবিতা পাঠ করা মাত্র মনে হয় ‘হৃদয় আমার প্রকাশ হল’। ‘‘বন্দুকের বদলে কাঁধে চাঁদ/ চা বাগানের মতো গুঁড়ি মেরে উঠে এল কল্পগেরিলারা’’ এমনই আশ্চর্য সব অক্ষরানুভূতি এ সংগ্রহের পাতায় পাতায়। ‘‘কে দেবে একরারনামা/ সন্ধ্যাসোপানের গর্ভে ভেসে চলে মায়াবাক্স’’— এমনই চেতন-অবচেতনার গূঢ় স্রোত বয়ে গিয়েছে এই বইয়ের পাতা থেকে পাতায়। সাতটি বইয়ের মধ্যে কম পক্ষে সাত বারই কবিতার ভাষাকে বদলেছেন গৌতম। তা সে চক্রব্যূহ হোক বা নদীকথা।

কবিতাসংগ্রহ

সুব্রত রুদ্র

১০০০.০০

আবিষ্কার

কোন কবি কোন দশকের— এ আলোচনায় কবিদের আড্ডা গড়ায় বহু দূর। সুব্রত রুদ্র ষাটের কবি না সত্তরের, এ তর্কের বাইরে সত্যি সুব্রত রুদ্র এক জন কবি। তাঁর কোনও দশকের প্রয়োজন পড়ে না। তাঁর কবিতার স্বর শুনলেই বোঝা যায় যে তিনিই শব্দ-অক্ষরের জাল বুনে চলেছেন। ১৯৬৯ থেকে ২০১৬— ৪৭ বছরে ২৫টি বই এবং আর কিছু কবিতা নিয়ে সংগ্রহটি প্রকাশিত হয়েছে। ৭৩০ পাতায় এক কবিতার সজল নিবিড় দিগন্ত। খুব মৃদু স্বরে কেউ এক জন যেন সেই দিগন্তের দিকে ফিরে নিজের কথা বলে চলেছেন। শঙ্খ ঘোষের ‘ভূমিকা’— ছোট্ট পরিসরে স্নেহে এবং অতীত চর্চায় এবং কবিতার দু’চার কথায় এ সেই দেউড়ি যা পেরিয়ে আমরা পৌঁছব সুব্রত রুদ্রর কবিতায়। ‘‘আমার কোনো বন্ধু নেই। আমি নিজেই বন্ধুহীন রয়েছি।.../ ...প্রায়ই ভিখিরি হয়ে ঘুরে বেড়াই/ এক-একজনের দরজায়। তারা কৃপা ক’রে যদি সঙ্গ দেয়।’’ এমনই উচ্চারণ দিয়ে এ যাত্রা শুরু। কিন্তু বাস্তব তা বলে না। ব্যক্তি সুব্রত রুদ্র খুবই প্রিয় মানুষ তাঁর আশপাশের কবিজগতে। ‘‘সব হাতে কি লেখা ফোটে/ কী লিখি?/ আমি একটা অমলতরু তুলেছিলাম/ মাটিতে বসতে পেয়েছে শুধু সেই আনন্দে/ বেঁচে আছে সে।’’ কবিতার নাম ‘লেখা’। ‘‘ছায়া যায়, মুঠি মুঠি ছড়াতে দুঃখ;/ খেয়ায় রাঁধা-বাড়া হ’লো শেষ।/ বীজের স্থিরতা জলে কাঁপে, সন্ধে পারাপার— / হাওয়ার মন্দিরে তার পায়ের চন্দন।’’ এ ক’টি ছত্র পাঠের পর পাঠককে তো স্তব্ধ হয়ে থাকতেই হবে। ৪৭ বছরের লেখালিখিতে তিনি যে ভিন্ন স্বর তাতে কোনও সন্দেহ নেই, কিন্তু দু’মলাটে এ বই পাঠকের পক্ষে বোধহয় একটু বেশি ভারি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement