উত্তরসূরি/ নির্বাচিত প্রবন্ধ সংগ্রহ
সম্পাদক: অলোক রায়
৬৫০.০০
সূত্রধর
সত্তর দশকে এক সাক্ষাৎকারে সে সময়ের বাংলা সাহিত্যের দুর্বলতা সম্পর্কে অন্নদাশঙ্কর রায় বলেছিলেন ‘আমরা বড় বেশী সমসাময়িক হতে চাই।... মনোরঞ্জন করার দিকে আমাদের নজর বেশী। একটা সত্যকে উপলব্ধি করে সেটাকে প্রকাশ করা অত্যন্ত আয়াস সাপেক্ষ ব্যাপার। সেই আয়াসটুকুকে স্বীকার করার মতো ইচ্ছা বা অবসর আমাদের অনেকের নেই।’ প্রায় সাড়ে তিন দশক পর এখনও কিন্তু কথাগুলি বাতিল করা মুশকিল, কারণ বাংলা সাহিত্যের সেই সঙ্কট সমানে চলেছে। সঙ্কটের এই ওঠাপড়ার চাপানউতোর-ই নন্দনতত্ত্বের বুনটে গ্রন্থিত করেছেন অলোক রায়। এই সংকলন তৈরি করতে করতে তিনি খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন বাংলা মননসাহিত্যের দুর্বলতার কথা, প্রবন্ধসাহিত্যের না-লেখা ইতিহাসের কথাও। ১৯৪৭ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত অরুণ ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় তিন পর্বে প্রকাশিত ‘উত্তরসূরি’ এক ব্যাপ্ত সময় ধরে সেই অভাবই পূরণ করার চেষ্টা চালিয়েছিল। ব্যক্তিক ও সামাজিক চৈতন্য অন্তর্লীন হয়ে যে নতুন ভাবনার বোধন ঘটিয়েছিল বাংলা সাহিত্যে, তারই নথি যেন পত্রিকাটি। সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, সমাজ— এমন নানান বিভাগে বিন্যস্ত রচনাগুলি। উল্লেখিত রচনাটি যেমন সাহিত্য-বিভাগের। এই রচনাদির বৈভব আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে যখন এক গুণী আর-এক গুণীর শিল্পরূপের গূঢ়তা পাঠকের কাছে প্রকাশ করেন। যেমন সাহিত্য-বিভাগে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত লিখছেন রবীন্দ্রনাথের কবিতা নিয়ে, ‘রবিশস্য’ রচনাটির নাম: ‘তাঁর পদ্যরচনা কোথাও একঘেয়ে নয়; এবং সর্বত্র পর্বমাত্রা সমান রেখেও তিনি কেবল অনেকান্ত চিত্রকল্পের জোরে পয়ারের মতো একটানা ছন্দে পর্যন্ত অভাবনীয় রকমের তারতম্য এনেছেন।’ আবার চিত্রকলা-বিভাগে চিত্রকর বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় লিখছেন ‘রবীন্দ্রনাথের ছবি’ নিয়ে: ‘চিত্রকলা শেষ পর্যন্ত তাঁর কাছে একটা আনন্দময় নেশার মতো ছিল, মনের নিরাকার থেকে অচিন্তিত-অভাবিত-পূর্ব আকার কখন কিভাবে জেগে উঠেছে, কিভাবে সেটা রেখায় রঙে ফুটে উঠেছে তার বিস্ময় তাঁর কাছে কখনো ঘুচে যায়নি।’ প্রবন্ধের প্রাচুর্য গ্রন্থটিকে মুক্ত চিন্তার আকর করে তুলেছে।
সংকলিত সোমপ্রকাশ
সম্পাদক: সৌমিত্র শ্রীমানী
৭৯৫.০০
অরুণা প্রকাশন
মহাবিদ্রোহ সমাপ্তির লগ্নে ১ অগ্রহায়ণ ১২৬৫ বঙ্গাব্দ (১৫ নভেম্বর ১৮৫৮ খ্রি.) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণের উদ্যোগে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক পত্রিকা সোমপ্রকাশ। প্রায় তিরিশ বছর এই পত্রিকা বেরিয়েছিল। কিছু সময় বাদ দিয়ে ২৩ অগস্ট ১৮৮৬-তে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত দ্বারকানাথই ছিলেন সম্পাদক। সৌমিত্র শ্রীমানীর মতে, ‘‘দ্বারকানাথের নিরলস প্রচেষ্টায় পত্রিকা শিক্ষিত বাঙালির জীবনে এক নিবিড় প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছিল।... প্রাঞ্জল ও পরিশীলিত গদ্যই ছিল পত্রিকার বৈশিষ্ট্য যা বাংলা ভাষাকে এক নতুন উচ্চতা দিয়েছিল।’’ সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রেও ছিল বিশেষ সততা ও নিরপেক্ষতা। গ্রামের মানুষের কথা, কৃষকের দুর্দশা, অসমে চা-কুলিদের শোচনীয় অবস্থা, নীলকরদের অত্যাচার, সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন (ব্রাহ্ম আন্দোলনের কথা বার বার তুলে ধরলেও বহুবিবাহ-রোধ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল সোমপ্রকাশ), রাজনৈতিক বিষয় ইত্যাদি নিয়ে আলোচনায় পত্রিকাটি জাতীয়তাবাদী মনোভাব গঠনে তার ভূমিকা পালন করেছিল। ১৭ শ্রাবণ ১২৬৬ বঙ্গাব্দ থেকে ১২ মাঘ ১২৯৩ বঙ্গাব্দের মধ্যে প্রকাশিত সোমপ্রকাশ থেকে নির্বাচিত এই সংকলনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।