এক ঢিলে দুই পাখি।
পরিকাঠামো উন্নয়ন ও সরকারি কোষাগারের হাল ফেরানো। এই জোড়া সুবিধা গড়ে তোলার দিকে নজর রেখে ফের সরকারি ও বেসরকারি গাঁটছড়া বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে জল সরবরাহের পথে হাঁটছে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ। পেশাদার সংস্থার সহায়তায় সম্পূর্ণ পরিকল্পনাও তৈরি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সব কিছু ঠিকঠাক চললে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগেই ইচ্ছাপত্র চাওয়ার কাজ সম্পন্ন হতে পারে।
২০০৮ সালে তৎকালীন বাম সরকারের আমলে তৈরি হয়েছিল আলাদা সংস্থা হলদিয়া ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই সংস্থার শরিক ছিল হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ, জামশেদপুর ইউটিলিটিজ অ্যান্ড সার্ভিসেস কোম্পানি (জাসকো) ও মালয়েশিয়ার সংস্থা র্যানহিল ইউটিলিটিজ। কিন্তু বাণিজ্যিক ভাবে লাভজনক না-হওয়ায় এই উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়ে। জলের যে-চাহিদার হিসেব কষে ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করেছিল বেসরকারি কনসোর্টিয়াম, তা বাস্তবে মেলেনি।
চুক্তি অনুযায়ী ২৫ বছর ধরে হলদিয়ায় জল সরবরাহ ব্যবস্থা রক্ষণাবেক্ষণ ও চালু রাখার দায়িত্ব পেয়েছিল বেসরকারি সংস্থা দু’টির কনসোর্টিয়াম। পুরনো ব্যবস্থার উন্নয়ন ও নতুন একটি পরিশোধক তৈরি করে জল বিক্রির কথা ছিল ওই দুই সংস্থার। সেই খাতে আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ পর্ষদকে দিয়ে বাকি টাকা তাদের ঝুলিতে যাওয়ার কথা ছিল। সেই হিসেব অনুযায়ী ২৫ বছর ধরে প্রায় ১,২০০ কোটি টাকা পর্ষদের পাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু এই ছক উল্টে দিয়েছিল হলদিয়ার শিল্প পরিস্থিতি। বিশ্ব জুড়ে মন্দা থেকে শুরু করে পরিবেশগত কারণে নতুন শিল্প গঠনের উপর কেন্দ্রীয় নিষেধাজ্ঞা, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কালো ছায়া সব মিলিয়ে থমকে গিয়েছিল বিনিয়োগের ধারা।
প্রথম দফায় ২০০৯ সালের শেষ থেকে ২০১০ সালের অগস্ট মাস পর্যন্ত পরিবেশ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। পরে সেই সময়সীমা আরও বেড়ে যায়। তেল ও গ্যাস খনন, তেল পরিশোধনাগার, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, সিমেন্ট, কাগজ, বন্দর, বিমানবন্দর, বড় সড়ক থেকে শুরু করে শিল্প তালুক, বায়োটেক পার্ক, চর্ম প্রক্রিয়াকরণ-সহ যাবতীয় ভারী শিল্প এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। ফলে গড়ে ওঠেনি নতুন শিল্প। তৈরি হয়নি নতুন করে জল সরবরাহের চাহিদাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, পুরনো জল সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষমতা বাড়িয়েই কাজ চলে যাচ্ছিল। স্রেফ চাহিদার অভাবে নতুন প্লান্ট তৈরি করেও তা চালু করতে পারেনি জাসকো। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী দু’টি প্লান্ট বাবদই পর্ষদকে টাকা দিতে হচ্ছিল। ফলে লোকসানের বোঝা বাড়াতে রাজি হয়নি বেসরকারি সংস্থা দু’টি। পরিষেবাও চালু রাখতে চায়নি তারা। এর ফলে গোটা দায় পর্ষদের ঘাড়ে চেপে বসে। এবং বিনা পরিকাঠামোয় সেই কাজ কোনও মতে চালানো ছাড়া উপায় ছিল না তাদের।
এ বার পরিস্থিতি বদলাচ্ছে।
মাস ছ’য়েক আগেই উঠে গিয়েছে নয়া শিল্প গঠনের উপর পরিবেশ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় নিষেধাজ্ঞা। ফের নতুন বিনিয়োগের মুখ দেখতে পারে হলদিয়া। সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের দিকে সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রের বাড়তি নজর। আর এই দুই কারণে জলের চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কল-কারখানা ও গৃহস্থালি, দু’টি ক্ষেত্রেই জলের চাহিদা বাড়বে। তাই ফের আশায় বুক বাঁধছে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ।
পরামর্শদাতা সংস্থার হাত ধরে প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজ শেষ। সরকারি সূত্রের খবর, নতুন পরিকল্পনায় ত্রিস্তর রাজস্ব মডেল তৈরি করা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা প্রথমেই পর্ষদকে এককালীন একটি মোটা অঙ্কের টাকা দেবে। আর দ্বিতীয় স্তরে বছরে পর্ষদকে দিতে হবে নির্দিষ্ট একটি টাকার অঙ্ক। এর সঙ্গে জল কতটা বিক্রি হল, তার সম্পর্ক নেই। অনেকটা লিজে ভাড়া দেওয়ার মতো। এ ছাড়াও জল বিক্রির টাকার কিছু অংশ পাবে পর্ষদ। সমীক্ষা বলছে, হলদিয়ায় বিনিয়োগের যে-সব নতুন প্রস্তাব রয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে লাভের টাকা ঘরে তুলতে দেরি হবে না দু’পক্ষেরই।