সুদের সঙ্গে সুখের আত্মীয়তা বড়ই নিবিড়। জমার উপর সুদ বাড়লে সুখ বাড়ে সুদ-নির্ভর অসংখ্য মানুষের। বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত এবং প্রবীণ নাগরিকদের। সুদ কমলে হয় উল্টোটা।
অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে সুদ বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। সুদ কমে আসে দাম পাকাপাকি ভাবে কমতে শুরু করলে। বাজারে আমাদের অভিজ্ঞতা যা-ই হোক, পরিসংখ্যান অনুযায়ী মূল্যবৃদ্ধির হার এখন তলানিতে। পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার শূন্য স্পর্শ করেছে। তা সত্ত্বেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এখনও সুদ কমানোর পথে হাঁটেনি। আসলে মূল্যহ্রাস স্থায়িত্ব না-পেলে শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর কথা বিবেচনা করবে না। অবশ্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত না-নিলেও, অনেক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদের জমা প্রকল্পে সুদের হার পুনর্বিন্যাস করেছে। সুদ কমানো হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় মূল্যবৃদ্ধির হার কমে থাকতে পারে, কিন্তু তার প্রতিফলন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উপর কতটা পড়ল, সেটাই সাধারণ মানুষের কাছে বিবেচ্য।
সুদের হার কমতে শুরু করায় চিন্তায় পড়েছেন বহু মানুষ। এর পর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি সুদ কমানোর পথে হাঁটে, তবে বিশেষ সমস্যায় পড়বেন তাঁরা। সঙ্কট যখন সম্মুখে, তখন মানুষকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কী করে এই পরিস্থিতি থেকে কিছুটা ত্রাণ পাওয়া যায়। এক নজরে দেখে নেব সুদ যখন নিম্নগামী, তখন কোন কোন পদক্ষেপ করলে সুদ খাতে আয় ততটা নীচে নামবে না।
এ জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে-সমস্ত কৌশল নিয়ে এগোতে হবে, সেগুলি হল
• কোনও কোনও ব্যাঙ্ক এখনও সুদ তেমন কমায়নি। যে-সমস্ত ব্যাঙ্ক একটু দীর্ঘ মেয়াদে তুলনায় ভাল সুদ দিচ্ছে, সেখানে উঁচু সুদের সুযোগ নিয়ে বড় মেয়াদে টাকা গচ্ছিত করার কথা ভাবা যেতে পারে।
• মেয়াদি জমায় ব্যাঙ্কগুলি এখন সুদ দিচ্ছে ৮.৫% থেকে ৮.৭৫% হারে। প্রবীণ নাগরিকেরা পাচ্ছেন অতিরিক্ত ০.২৫% থেকে ০.৫০%। ব্যাঙ্কগুলির ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখে নেওয়া যায়, কে কী হারে সুদ দিচ্ছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত আর্থিক সংস্থা (তথাকথিত চিট ফান্ড নয়) মাঝারি মেয়াদে (৩ বছর পর্যন্ত) সুদ দিচ্ছে ব্যাঙ্কের তুলনায় ১ থেকে ১.৫০% বেশি। এখানে টাকা রাখায় কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও, উঁচু রেটিং দেখে লগ্নি করলে ঝুঁকির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। রেটিং ‘এএ’, ‘এএ+’ অথবা ‘এএএ’ হলে ভাল হয়। দেখে নিতে হবে অনুৎপাদক সম্পদের (এনপিএ) হার, গত তিন বছরের ব্যবসা এবং মুনাফার পরিসংখ্যান। গৃহঋণ সংস্থাগুলির আর্থিক অবস্থা সাধারণত ভাল হয়। এ ধরনের নামী বড় সংস্থায় টাকা রাখা তুলনায় নিরাপদ। তহবিলের কিছুটা এই সব সংস্থায় গচ্ছিত করা যেতে পারে। মাসিক আয়ের সুবিধাও আছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে।
• শেয়ারের মতো বাজার থেকে উঁচু সুদযুক্ত কোম্পানি বন্ডও কেনা যেতে পারে। এর জন্য আপনার ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। যাঁরা উঁচু হারে আয়করের আওতায় পড়েন, তাঁরা বাজার থেকে করমুক্ত বন্ড কেনার কথা ভাবতে পারেন। গত আর্থিক বছরে ৮.৮৮% পর্যন্ত সুদে করমুক্ত বন্ড ইস্যু করা হয়েছিল। এ বারের বাজেটে এই বন্ডের সংস্থান নেই। বাজার থেকে কিনতে গেলে দাম একটু বেশি পড়বে। তবে এতে প্রকৃত আয় ৮% হলেও মন্দ নয়। বাৎসরিক সুদ দেওয়া হলে বন্ডের বাজার দর বেশ কিছুটা নেমে আসে।
• কিছু টাকা লগ্নি করা যেতে পারে মিউচুয়াল ফান্ডের মাসিক আয় প্রকল্পে। এখানে তহবিলের ১০ থেকে ২০% লগ্নি করা হয় ইকুইটি শেয়ারে এবং ৮০ থেকে ৯০% ঋণপত্রে। আয় পাওয়া যায় ৬ থেকে ৭%, যা প্রাপকের হাতে থাকে পুরোপুরি করমুক্ত। এ ছাড়া থাকে মূলধনী লাভের সুযোগ। শেয়ার বাজারের সুদিনে ফুলে ফেঁপে উঠতে পারে ইকুইটিতে লগ্নি। ফলে বাড়তে পারে ন্যাভ।
• রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত নিলে আরও তেজী হয়ে উঠবে শেয়ার বাজার। যে-সব সংস্থা ঋণের উপর বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল (রেট সেনসিটিভ), সুদ কমলে পড়তে পারে সেগুলির শেয়ার দর। এই কথা মাথায় রেখে বাজারের ছোট থেকে মাঝারি পতনে বিনিয়োগ করা যেতে পারে এ ধরনের ঋণ-নির্ভর কোম্পানির শেয়ার ও সুবিন্যস্ত মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পে।
তবে যা-ই করুন, পা ফেলতে হবে উপযুক্ত সময়ে এবং অত্যন্ত দ্রুত। আর্থিক জগতে সুযোগ সাধারণত বেশি সময়ের জন্য পাওয়া যায় না।