সুদ আরও কমার আগে লগ্নি করুন স্থায়ী জমায়

চমকহীন বাজেট যা করতে পারেনি, তা বাজেট পেশ করার মাত্র চার দিনের মাথায় করে দেখাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর রঘুরাম রাজনের সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত। সেনসেক্সকে প্রথম বারের জন্য পৌঁছে দিল ৩০ হাজারের ঘরে। সেখানে অবশ্য সূচক স্থায়ী ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। স্পর্শ করেই নেমে এসেছে লগ্নিকারীদের লাভ ঘরে তোলার তাগিদে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৫ ০২:৪০
Share:

চমকহীন বাজেট যা করতে পারেনি, তা বাজেট পেশ করার মাত্র চার দিনের মাথায় করে দেখাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর রঘুরাম রাজনের সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত। সেনসেক্সকে প্রথম বারের জন্য পৌঁছে দিল ৩০ হাজারের ঘরে। সেখানে অবশ্য সূচক স্থায়ী ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। স্পর্শ করেই নেমে এসেছে লগ্নিকারীদের লাভ ঘরে তোলার তাগিদে।

Advertisement

গত বুধবার বাজার খোলার কিছু পরেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে খবর আসে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ যেন মেঘ না চাইতেই জল। এই খবরে বুল-রা উত্তেজনা ধরে রাখতে পারেনি। নিমেষের মধ্যে সেনসেক্স ৪০০ পয়েন্ট বেড়ে পৌঁছে যায় ৩০,০২৪ অঙ্কে। প্রথম বার ৩০ হাজার পেরোনো মাত্রই আসে বিক্রির চাপ। ফলে দিনের শেষে ২১৩ পয়েন্ট খুইয়ে সূচক থামে ২৯,৩৮০ অঙ্কে। পরের দিন অবশ্য তা বাড়ে ৬৮ অঙ্ক। সপ্তাহ শেষ করে ২৯,৪৪৯ অঙ্কে।

উল্লেখ্য, গত এক বছরে সেনসেক্স ২২,০০০ থেকে পৌঁছেছে ৩০ হাজারে। বারো মাসে ৮,০০০ উত্থানটা বেশ দ্রুতই হয়েছে। এমন নয় যে, এই সময়ে অর্থনীতি বিরাট একটা এগিয়েছে। তবে পরিস্থিতি সদর্থক হয়েছে। তবুও এত উঁচু বাজারে সাধারণ লগ্নিকারীদের বিচরণ করতে হবে বেশ সাবধানে। এখন দেখার, ৩০ হাজারে বাসা বাঁধতে সেনসেক্স আর কত দিন সময় নেয়।

Advertisement

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ফের ঋণনীতি পর্যালোচনা করার কথা। কিন্তু তত দিন অপেক্ষা করেননি রাজন। পণ্যমূল্যের নেমে যাওয়া এবং অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান দেখে মনে করেছেন, এ বার রেপো রেট অবিলম্বে কমানোর যথেষ্ট যুক্তি আছে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। দু’মাসেরও কম সময়ে এই নিয়ে সুদ কমানো হল দু’বার। মোট ৫০ বেসিস পয়েন্ট।

যে সুদের হারে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নেয়, তা-ই হল রেপো রেট। এই রেট কমলে ব্যাঙ্কের দেওয়া বিভিন্ন ধরনের ঋণের উপরেও সুদ কমার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এই কারণেই রেপো রেট কমে যাওয়ায় শিল্প-বাণিজ্য মহল বেশ খুশি। আনন্দে শেয়ার বাজারও। সুদ কমার এই প্রভাব বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন রকম। দেখে নেব এক নজরে—

এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি বিভিন্ন রকম ঋণের উপর সুদ কমাতে পারে। চলতি সপ্তাহেই আমরা সম্ভবত সুদের অবনমন দেখতে পাব।

সুদ কমবে বাড়ি এবং গাড়ির ঋণে। চাঙ্গা হবে এই দুই শিল্প।

এর ফলে বড় আকারে ঋণনির্ভর সংস্থাগুলির সুদ বাবদ খরচের বোঝা কিছুটা কমবে।

ঋণের পাশাপাশি সুদ কমতে পারে জমার উপরেও। এর ফলে অসুবিধায় পড়বেন সুদ-নির্ভর বহু মানুষ। বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত এবং প্রবীণ নাগরিকেরা। তাই সুদ আরও কমার আগে দ্রুত বর্তমানে চালু সুদে ব্যাঙ্কের ভাল কোনও মেয়াদি আমানত প্রকল্পে লগ্নি করা যেতে পারে।

ব্যাঙ্ক জমায় সুদের হার কমে গেলে খোলা বাজারে বাড়বে বন্ডের দাম। ন্যাভ বাড়বে ঋণপত্র-নির্ভর মিউচুয়াল প্রকল্পগুলির। বাজারদর বাড়বে সরকারি ঋণপত্রের।

বন্ডের বাজারদর বাড়ায় বন্ড এবং সরকারি ঋণপত্রে ব্যাঙ্কগুলির বিশাল লগ্নির উপর ভাল রকম লাভ বাড়বে। ফলে ব্যাঙ্ক শেয়ারগুলি চাঙ্গা থাকার সম্ভাবনা।

আশা, চলতি বছরে সুদ আরও কমতে পারে। ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমার সম্ভাবনা বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে। সুদ আরও কমলে শিল্পে প্রাণ ফিরবে। শেয়ার বাজার তেজি থাকবে।

তাই সুদ-নির্ভর ব্যক্তিদের আর দেরি না করে এখনই ব্যাঙ্কের মেয়াদি জমায় দীর্ঘমেয়াদের জন্য লগ্নি করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যাঁরা পুঁজির একাংশ ব্যাঙ্কে রেখে বাড়াতে চান তাঁদেরও সুদ আরও কমার আগে দ্রুত এটা করে ফেলতে হবে। অবশ্য যাঁরা বাড়ি ও গাড়ি কেনার জন্য ঋণ নেবেন, তাঁদের জন্য সুদিন ফিরবে।

প্রবীণ নাগরিকেরা সুদের এই অবনমনের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন জীবনবিমা নিগমের বরিষ্ঠ পেনশন বিমা যোজনায় যোগ দিয়ে। মোদী সরকার গত বছর তাদের প্রথম বাজেটে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই পুরনো প্রকল্পটি সীমিত সময়ের জন্য নতুন করে চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই প্রকল্পটির আকর্ষণ আরও বেড়েছে। প্রকল্পটির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি এই রকম:

১) প্রকল্পটি চালু হয়েছে গত ২০১৪ সালের ১৫ অগস্ট থেকে। চলবে আগামী ১৪ অগস্ট পর্যন্ত।

২) যোগদানের ন্যূনতম বয়স ৬০ বছর।

৩) বয়সের ঊর্ধ্বসীমা নেই।

৪) ক্রয়মূল্য: একক প্রিমিয়াম কমপক্ষে ৬৩,৯৬০ টাকা থেকে ৬৬,৬৬৫ টাকা। সর্বাধিক ৬,৩৯,৬১০ টাকা থেকে ৬,৬৬,৬৬৫ টাকা।

৫) ক্রয়মূল্য অনুযায়ী পেনশন পাওয়া যাবে মাসিক, ত্রৈমাসিক এবং ষান্মাষিক ভিত্তিতে। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল ক্রয়মূল্য এবং পেনশনের চার্ট।

৬) সুদের হার সরল হারে ৯%।

৭) পলিসির মেয়াদ আজীবন। অর্থাত্‌ বাজারে সুেদর হার কমলেও এতে বরাবরের জন্য ৯% সুদ মিলবে।

৮) পেনশন ইসিএস পদ্ধতিতে সরাসরি চলে যাবে গ্রাহকের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।

৯) গ্রাহকের মৃত্যু হলে মূল টাকা নমিনিকে দেওয়া হবে।

১০) ইস্যুর পর ১৫ বছর পূর্ণ হলে পলিসি ফেরত (সারেন্ডার) নেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্রয়মূল্যের পুরোটাই ফেরত দেওয়া হবে। এর আগেও টাকা ফেরত পাওয়া যেতে পারে নিজের অথবা স্বামী/স্ত্রীর গুরুতর কোনও অসুখের চিকিত্‌সার কারণে। এ ক্ষেত্রে ফেরত পাওয়া যাবে ক্রয়মূল্যের ৯৮ শতাংশ অর্থ।

১১) ঋণ: পলিসি ইস্যু হওয়ার পর ৩ বছর পূর্ণ হলে পলিসি জমা রেখে সর্বাধিক ৭৫ শতাংশ অঙ্কের ঋণ নেওয়া যেতে পারে।

১২) কর: কর বাবদ কোনও ছাড় নেই এই পলিসিতে। প্রচলিত আয়কর এবং পরিষেবা কর প্রযোজ্য হবে এই পলিসি থেকে আয়ের উপর।

১৩) এই প্রকল্পে লগ্নিকে ‘সুদের অবনমনের ঝুঁকির বিরুদ্ধে বিমা’ বলা যেতে পারে। অসুবিধা হল বলে ইচ্ছে হলেই এই প্রকল্প থেকে টাকা তুলে নেওয়া যাবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement