রাজনের যুক্তি মেনেই সংস্কার সুদ নীতির

লক্ষ্য স্থির করেই বাজার দর কমাবে আর বি আই, চুক্তি কেন্দ্রের সঙ্গে

এ বার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে নিয়ে মূল্যবৃদ্ধি কমানোর চেষ্টা করবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আর, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই স্থির হবে ঋণনীতি, যা স্থির করবে সুদের হার। বাজার দরকে সহনীয় মাত্রার মধ্যে রাখাই হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রধান লক্ষ্য। খাতায়-কলমে এই নয়া ব্যবস্থা চালু করার ব্যাপারে সিলমোহর দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০২:২৬
Share:

আলাপচারিতায় রাজন ও জেটলি। —ফাইল চিত্র

এ বার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে নিয়ে মূল্যবৃদ্ধি কমানোর চেষ্টা করবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আর, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই স্থির হবে ঋণনীতি, যা স্থির করবে সুদের হার। বাজার দরকে সহনীয় মাত্রার মধ্যে রাখাই হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রধান লক্ষ্য। খাতায়-কলমে এই নয়া ব্যবস্থা চালু করার ব্যাপারে সিলমোহর দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

Advertisement

গভর্নর রঘুরাম রাজনের যুক্তি মেনেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে এই চুক্তি করেছে অর্থ মন্ত্রক। আম আদমির স্বস্তির কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত হলেও, উদার অর্থনীতির জমানা শুরু হওয়ার পর থেকে দু’দশকেরও বেশি সময় কেটে যাওয়ার পরে এই সিদ্ধান্ত কার্যত সুদ নীতির আমূল সংস্কার। যার মূল লক্ষ্য খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধির হারকে ধাপে ধাপে ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা। আন্তর্জাতিক দুনিয়াতেও অধিকাংশ উন্নত অর্থনীতিতে বাজার দরকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই শীর্ষ ব্যাঙ্কের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকে।

মনমোহন জমানার শেষের দিকে সরকারের অন্যতম দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এই চড়া দামকে নামিয়ে আনারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদী। অথচ দিল্লি বিধানসভার ভোটে সেই মোদী সরকারের দিকেই অরবিন্দ কেজরীবাল প্রশ্ন তুলেছেন, বাজার দর কোথায় কমল? অঙ্কের হিসেবে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার জানুয়ারি মাসে ৫.১১ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু বাজার দর যে-কমই থাকবে, মোদী সরকার সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি। কারণ অশোধিত তেলের চড়া দাম ও কৃষি মরসুম বদলের সঙ্গে সঙ্গে বাজার দর ওঠা-নামার আশঙ্কা ছিলই। রাজকোষ ঘাটতি বাড়লেও মূল্যবৃদ্ধি বাড়বে, সেই চিন্তাও ছিল।

Advertisement

২০১৩ সালে গভর্নর পদে বসার পর থেকেই রঘুরাম রাজন যুক্তি দিচ্ছিলেন, মূল্যবৃদ্ধি কমিয়ে আনাই রির্জাভ ব্যাঙ্কের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। কারণ মূল্যবৃদ্ধির কোপ সব থেকে বেশি পড়ে গরিবদের উপরেই। দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক বৃদ্ধির জন্যও তা জরুরি। ডেপুটি গভর্নর উর্জিৎ পটেল কমিটির সুপারিশ মেনে তিনি নিজের জন্য মূল্যবৃদ্ধি কমিয়ে আনার লক্ষ্যও স্থির করে ফেলেন। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য এত দিন তাঁর সঙ্গে সরকারি ভাবে হাত মেলায়নি। উল্টে ইউপিএ জমানার মতো মোদী জমানাতেও সরকারের তরফে দাবি তোলা হয়েছে, বৃদ্ধির কথা ভেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদের হার কমানো উচিত।

অবশেষে দু’দিন আগে অরুণ জেটলি বাজেটে ঘোষণা করেন, মূল্যবৃদ্ধিকে জয় করতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে চুক্তি করে সুদ নীতির কাঠামো তৈরি হবে। যার মূল লক্ষ্য হবে মূল্যবৃদ্ধিকে বরাবর ৬ শতাংশের নীচে রাখা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আইন সংশোধন করে সুদ নীতি নির্ধারণ কমিটিও তৈরি হবে। আজ অর্থ সচিব রাজীব মেহরিশি বলেন, “গত ২০ ফেব্রুয়ারির চুক্তি অনুযায়ী রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ২০১৬-র জানুয়ারির মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির হারকে ৬ শতাংশে নীচে কমিয়ে আনবে। ২০১৬-’১৭ ও তার পরের বছরে এই হারকে ৪ শতাংশে রাখা হবে। লক্ষ্যের থেকে কম-বেশি দুই শতাংশ ফারাক হতে পারে।”

এত দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মূল্যবৃদ্ধির হারের পাশাপাশি ডলার-টাকার বিনিময় মূল্য, রফতানিকে চাঙ্গা করার প্রয়োজনীয়তা, কেন্দ্রীয় সরকার বাজার থেকে কত টাকা ধার করছে এমন অনেক কিছু দেখে সুদের হার ঠিক করত। এ বার তার প্রধান লক্ষ্য হবে মূল্যবৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে রাখা। তবে আর্থিক বৃদ্ধির লক্ষ্যও মাথায় রাখতে হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। এর ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এক দিকে যেমন স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবে, পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধির হার কমানোর বিষয়ে দায়বদ্ধও থাকবে। লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হলে তার কারণ ব্যাখ্যা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট দিতে হবে। লক্ষ্য ছুঁতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কী পদক্ষেপ করছে এবং কত দিনের মধ্যে লক্ষ্য পূরণ হবে, তা-ও জানাতে হবে।

ছ’মাস অন্তর রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে মূল্যবৃদ্ধির উৎস জানিয়ে রিপোর্ট দিতে হবে। পরবর্তী ৬ থেকে ৮ মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার কেমন থাকবে, তারও পূর্বাভাস দিতে হবে। সুদ পর্যালোচনার জন্য যে-কমিটি তৈরি হবে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরই তার চেয়ারম্যান হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। রির্জাভ ব্যাঙ্কের সুদ নীতির দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি গভর্নর হবেন এর ভাইস-চেয়ারম্যান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement