গুজরাত-মডেলের প্রশংসা নিজের গবেষণা ও লেখায় বহু বার করেছেন। এ বার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও নরেন্দ্র মোদী সফল হবেন বলে পূর্ণ আস্থা রাখছেন জগদীশ ভগবতী। তবে হবু প্রধানমন্ত্রীকে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদের পরামশর্র্, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসেবে রঘুরাম রাজনকেই রেখে দিক মোদী-সরকার। আর কেন্দ্র আগামী দিনে কোন পথে হাঁটবে, প্রতি মাসে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তা খোলসা করে দিন খোদ প্রধানমন্ত্রীই।
অনেকে বলেন, বহু বার নাম ওঠা সত্ত্বেও এখনও নোবেল না-পাওয়া জীবিত অর্থনীতিবিদদের মধ্যে ভগবতীই সম্ভবত সব থেকে বিখ্যাত। শিক্ষক ও গবেষক হিসেবে একেবারে প্রথম থেকেই মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে জোরালো সওয়াল করে এসেছেন তিনি। বৃদ্ধির চাকায় গতি আনতে জোর দিয়েছেন বিদেশি লগ্নির জন্য দরজা খোলার উপর। আর সম্প্রতি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সতীর্থ অরবিন্দ পানাগরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে লেখা বইয়ে ঝোড়ো গতির বৃদ্ধির জন্য বার বার তুলে এনেছেন গুজরাত-প্রসঙ্গ। তা নিয়ে যুক্তির লড়াইয়ে জড়িয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে।
সোমবার সেই ভগবতী বলেন, “আমার বিশ্বাস মোদী রাজনকেই রাখবেন। অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিনি সারা দুনিয়ায় শ্রদ্ধা আদায় করেছেন।” নাছোড় মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে এখনও সুদের হার চড়াই রেখেছেন রাজন। বৃদ্ধির পথে তা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে ‘মতান্তর’ও হয়েছে বিদায়ী অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের। এই পরিস্থিতিতে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল যে, ক্ষমতায় এসে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষ পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দিতে পারে নতুন সরকার। সম্প্রতি রাজন নিজেও বলেছিলেন, “ঋণনীতি (সুদ) ঠিক করা আমার এক্তিয়ার। সরকার চাইলে আমাকে সরাতে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে আমি স্বাধীন।”
এ দিন সেই কথা প্রসঙ্গেই রাজনকে রেখে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভগবতী। একই সঙ্গে নয়া মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্য লোক হিসেবে ফের তুলে ধরেছেন পানাগরিয়ার নাম।
ভগবতী মনে করেন, মোদীর মস্ত সুবিধা হল, তিনি বিদায়ী সরকারের নেতাদের মতো মৌন নন। ভোট-প্রচারে সুবক্তা হিসেবে সারা দেশে ঝড় তুলেছেন তিনি। এ বার ঠিক সে ভাবেই তাঁর সেই গুণ কাজে লাগানো উচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও। ভগবতীর পরামর্শ, প্রতি মাসে সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারের পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ সকলের সামনে তুলে ধরুন মোদী। অনেকে মনে করেন, এই স্বচ্ছতায় খুশি হবে শিল্পমহলও।
উল্লেখ্য, দেশের উন্নয়নের সঠিক রাস্তা কোনটি, তা নিয়ে কিছু দিন আগেও যুক্তির তীব্র লড়াই চলেছে অমর্ত্য সেন ও ভগবতীর মধ্যে। অমর্ত্য সেনের মতে, বৃদ্ধি উন্নয়নের মাধ্যম মাত্র। চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। তাই শুধু তার দিকে না-তাকিয়ে সরকারের উচিত সামাজিক উন্নয়নে আরও বেশি লগ্নি করা। টাকা ঢালা স্বাস্থ্য-শিক্ষায়।
তবেই গড়াবে উন্নয়নের চাকা। চড়বে বৃদ্ধির হারও। কেরল যে মডেলের অন্যতম উদাহরণ।
উল্টো দিকে, ভগবতী মনে করেন, বৃদ্ধিই উন্নয়নের চাবিকাঠি। তার হার বাড়লে, তবেই সামাজিক খাতে ঢালার মতো টাকা আসবে সরকারের হাতে। তাই পাখির চোখ হওয়া উচিত বৃদ্ধিই। আর এরই উদাহরণ হিসেবে বার বার গুজরাতের প্রসঙ্গ টেনেছেন তিনি।
এ দিন আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, সকলে গুজরাতের বৃদ্ধির হার নিয়েই কথা বলে। সামাজিক উন্নয়নেও ওই রাজ্যে যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করা হয়, তা আলোচনার চৌহদ্দিতে আসে না।