রাজ্য সরকার যতই নয়া লগ্নি ও কর্মসংস্থানের ফিরিস্তি দিক না-কেন শিল্পমহলের অনেকেরই দাবি, চাকরির সুযোগ কমছে পশ্চিমবঙ্গে। তাদের সাফ কথা, রাজ্যের যা প্রতিকূল অবস্থা তাতে চাকরি পাওয়ার সুযোগ কম। তাই নতুন প্রজন্মকে ব্যবসার দিকে ঝুঁকতে হবে। ঠারেঠোরে নয়, মঙ্গলবার স্পষ্ট ভাবেই এ কথা বললেন অনেকে। কোনও বাণিজ্য-সভা নয়, শহরের এক নামী পুজো আয়োজিত আলোচনায় এ ভাবেই স্পষ্টবাক্ শিল্প ও ব্যবসা ক্ষেত্রের একাংশ। সেই পুজোর থিম-ও ‘বাণিজ্যে বসতি বাঙালি’!
হলদিয়া থেকে মুম্বই। সিঙ্গাপুর থেকে আগামী দিনে সুন্দরবরন। লগ্নি টানতে রাজ্য যতই এদিক-ওদিক দৌড়ক না-কেন, লগ্নিকারীদের মানচিত্রে কার্যত ব্রাত্য পশ্চিমবঙ্গ। শিল্পমহলের অভিযোগ, যে-সব কারখানা ছিল, সিন্ডিকেট থেকে তোলাবাজি, নানা সমস্যায় জর্জরিত তারা। অভিযোগের তির মূলত শাসক দলের দিকে। রাজ্যে আর্থিক কর্মকাণ্ড সঙ্কুচিত হওয়ায় চাকরি কমছে, এই অভিযোগ বারেবারেই উঠছে। এর উপর রাজনৈতিক ও আইন-শৃঙ্খলার সমস্যার জেরে অস্থিরতা লগ্নিকারীদের মনে নতুন শঙ্কা তৈরি করছে। শিক্ষা শেষে চাকরির সন্ধানে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতাও তাই বাড়ছে বলে অভিযোগ শিল্পমহলের।
দক্ষিণ কলকাতার শিবমন্দিরের পুজোর থিম এ বার ‘বাণিজ্যে বসতি বাঙালি’। পুজো কমিটির সভাপতি পার্থ ঘোষ জানান, বর্তমান প্রজন্মকে ব্যবসায় উৎসাহ দিতেই ওই থিম। সেই সূত্রে এ দিন তাঁদের সভায় ছিলেন বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট কল্লোল দত্ত, টেকনো ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর অন্যতম কণর্র্ধার সত্যম রায়চৌধুরী, সেনকো গোল্ড-এর কর্ণধার শঙ্কর সেন প্রমুখ।
কী বলছেন তাঁরা? রাজ্যে চাকরি সুযোগ যে-কমছে, সে ব্যাপারে একমত সত্যমবাবু ও কল্লোলবাবু। তাঁদের দাবি, ভিন্ রাজ্যে অবস্থা ভাল। সত্যমবাবু বলেন, “বাইরে চাকরির সুযোগ বেশি কারণ ব্যবসার পরিস্থিতি ভাল।” কল্লোবাবুর অভিযোগ, আগে ভিন্ রাজ্য থেকে চাকরি করতে অনেকে পশ্চিমবঙ্গে এলেও ছবিটা এখন পুরোপুরি উল্টো।
সে ভাবে শিল্প না-থাকায় রাজ্যে চাকরি সুযোগ কমছে বলে দাবি কল্লোলবাবুর। তাঁর কথায়, “অনেকেই বাধ্য হয়ে সিন্ডিকেটের ব্যবসা বা প্রোমোটারি করছে।” তাঁর আশঙ্কা, পরিস্থিতি ভাল না-হলে ভবিষ্যতে চাকরির সুযোগ আরও কমবে। উপযুক্ত পরিবেশ না-থাকার কথা বলেন শঙ্করবাবুও।
তা হলে উপায় কী? ব্যবসার দিকেই মন দিতে বলছেন তাঁরা। সত্যমবাবুর মতে, ব্যবসা করার জন্য স্বপ্ন আর জেদ থাকা দরকার। নতুন ধরনের ব্যবসার সম্ভাবনার কথা বলেছেন বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট। তাঁর অভিযোগ, “পশ্চিমবঙ্গের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। এ বার সামনে এগোতেই হবে।” রাজ্যের মেধা-সম্পদের কথা মাথায় রেখে তাই ‘ই-বিজনেস’-এর মতো আধুনিক ব্যবসা ক্ষেত্রে পা ফেলার জন্য নতুন প্রজন্মকে পরামর্শ দেন তিনি।
আর শঙ্করবাবুর বক্তব্য, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যতে ভাল পরিস্থিতির আশায় রয়েছেন তিনি। যদিও রাজ্যে আর্থিক কর্মকাণ্ড কমলে ব্যবসাই বা কতটা লাভজনক হবে, উঠেছে সে প্রশ্নও।