বাজেটে ঘোষিত নতুন কর ব্যবস্থায় সমস্যার মুখে বন্ডের (ঋণপত্র) বাজার। মিউচুয়াল ফান্ডগুলির আশঙ্কা, এর পরে বন্ডে টাকা ঢালতে আগ্রহী হবেন না অনেক বিনিয়োগকারীই। লগ্নির খরা দেখা দিতে পারে ঋণপত্র নির্ভর (ডেট) ফান্ডে। এমনকী আগে যাঁরা ফান্ডের ঋণ-প্রকল্পে লগ্নি করেছেন, টাকা তুলে নিতে পারেন তাঁদের অনেকেও। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, সেই ফিরিয়ে নেওয়া টাকার অঙ্ক ছাড়াতে পারে দেড় লক্ষ কোটি।
অবশ্য এই কর ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনার জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে ইতিমধ্যেই সেবির কাছে আর্জি জানিয়েছে দেশে মিউচুয়াল ফান্ডগুলির সংগঠন অ্যামফি। তারা চায়, ফান্ডের সমস্যা কেন্দ্রের সামনে তুলে ধরুক বাজার নিয়ন্ত্রক। বিশেষত নয়া কর ব্যবস্থা যেন কোনও ভাবেই বাজেটের আগের পুরনো কোনও সময় (রেট্রসপেক্টিভ) থেকে কার্যকর না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে আর্জি জানিয়েছে তারা। অ্যামফি চায়, ঋণপত্র ভিত্তিক ফান্ডে মূলধনী লাভ করের নয়া প্রস্তাব কার্যকর করার বিষয়টি যেন অন্তত আগামী বছর পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়। তা ছাড়া, বাজেটে বলা হয়েছে, ইকুইটি ছাড়া অন্য সমস্ত মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পের ক্ষেত্রেই নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হবে। কিন্তু অ্যামফির আবেদন, তা সীমাবদ্ধ রাখা হোক শুধু ‘ক্লোজ এন্ডেড’ ডেট ফান্ডেক্ষেত্রেই।
কর ব্যবস্থার কোন প্রস্তাব ঘিরে এমন বিতর্ক?
বাজেটে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, বন্ডের মুনাফায় যে মূলধনী লাভ কর (ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স) বসে, তাতে দু’টি বদল আনা হবে—
(১) এখন থেকে বন্ডে লগ্নিতে যে মুনাফা হবে, তার উপর দীর্ঘ মেয়াদি মূলধনী লাভ করের হার হবে ২০%। লাভ থেকে মূল্যবৃদ্ধির হার বাদ দিয়ে তবেই এই করের অঙ্ক হিসাব করা হবে।
আগে কিন্তু এই কর হিসেবের জন্য দু’টি বিকল্প সামনে পেতেন বিনিয়োগকারীরা। হয় মুনাফার উপর সরাসরি ১০% কর দিতে হত, নইলে তা থেকে মূল্যবৃদ্ধির হার বাদ দিয়ে কর গুনতে হত ২০% হারে। এবং সাধারণত দ্বিতীয় বিকল্পেই কর কম হত।
(২) পুরনো ব্যবস্থায় বন্ড কিনে ১২ মাস ধরে রাখার পরে তা বেচলেই দীর্ঘ মেয়াদি মূলধনী লাভ করের সুবিধা মিলত। কিন্তু এখন সেই একই সুবিধা পেতে ঋণপত্র ধরে রাখতে হবে ৩৬ মাস।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, প্রথম পরিবর্তনটির কারণে করের পরিমাণ বাড়বে। কিন্তু আরও বড় সমস্যা ডেকে আনবে দ্বিতীয় বদলটি। কারণ তাঁদের মতে, ১২ মাস বা ৩৬৫ দিন ধরে রেখে মূলধনী লাভ করের সুবিধা ঋণপত্র ভিত্তিক ফান্ডে লগ্নির অন্যতম আকর্ষণ ছিল। কিন্তু এ বার সেই মেয়াদ বেড়ে ৩৬ মাস হওয়ায় বন্ডে লগ্নি আকর্ষণ হারাবে বলে ফান্ড কর্তাদের আশঙ্কা।
নতুন ব্যবস্থায় আরও একটি সুবিধা খুইয়েছে বন্ড। আগে কোনও আর্থিক বছরের শেষ মাসে বন্ড কিনে ১৩ মাস (অর্থাৎ পরের অর্থবর্ষের প্রথম মাস) পর্যন্ত ধরে রাখলেই দু’বছরের মূল্যবৃদ্ধির হার মুনাফা থেকে বাদ দিয়ে কর দেওয়ার সুবিধা মিলত। কিন্তু নয়া কর সেই সুবিধাও আর থাকল না।
মূলধনী বাজারের ধারণা, ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানতের সঙ্গে ঋণপত্রে লগ্নির সুবিধার সামঞ্জস্য আনতেই এই সমস্ত বদল আনছে কেন্দ্র। কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডের এক কর্তার আশঙ্কা, “এতে বন্ডে বিনিয়োগের জৌলুস কমবে। লগ্নিকারীরা ভাববেন, ব্যাঙ্ক আর বন্ড থেকে মুনাফা যদি একই হয়, তাহলে ঝুঁকি নিয়ে ঋণপত্রে টাকা ঢেলে লাভ কী?” তাঁর মতে, এর জেরে ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডের ১৩ বা ১৬ মাসের প্রকল্পগুলি লগ্নিকারীদের আর আকৃষ্ট করতে পারবে না।
তবে তা সত্ত্বেও কোনও কোনও ফান্ড কর্তা মনে করছেন, “আগের থেকে সুবিধা হয়তো কমবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্যাঙ্কে যে সুদ মেলে, নতুন ব্যবস্থায় বন্ড-প্রকল্পে লাভের পরিমাণ তার থেকে বেশিই হবে। তা ছাড়া, এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্য সুদ কমানো। শেষমেশ তা হলে, ব্যাঙ্কের তুলনায় বন্ডে লগ্নি আরও লাভজনক হবে।”