দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী যোজনার অর্ধেক সময় কেটে যাওয়ার পরে অবশেষে চা শিল্পের জন্য টি বোর্ডের অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব মঞ্জুর করল কেন্দ্র। বরাদ্দের অঙ্ক ১৪২৫ কোটি টাকা। একাদশ পরিকল্পনার তুলনায় যা দেড় গুণেরও বেশি। এর মধ্যে ক্ষুদ্র চা চাষিদের উন্নয়ন ও চা ব্যবসায় অনলাইন লেনদেনের পরিকাঠামো নির্মাণের মতো ক্ষেত্রে বরাদ্দ এই প্রথম।
২০১২-’১৩ সালে দ্বাদশ যোজনা শুরু হলেও এত দিন টি বোর্ডের ১৪২৫ কোটি টাকার প্রস্তাব কেন্দ্রের কাছে পড়েই ছিল। একাদশ যোজনায় ৮০০ কোটি টাকার প্রস্তাব থাকলেও শেষ পর্যন্ত মিলেছিল প্রায় ৭২৮ কোটি টাকা। প্রকল্প বিবেচনাধীন থাকার সময়ে অবশ্য প্রস্তাবের অঙ্গ হিসেবেই সাধারণ ভাবে বাণিজ্য মন্ত্রক টি বোর্ড-কে বার্ষিক কিছু অর্থ বরাদ্দ করে থাকে। সেই হিসেবে, দ্বাদশ যোজনায় এখনও পর্যন্ত ৮০০ কোটি টাকা পাওয়ার কথা। অবশ্য বোর্ড সূত্রের দাবি, মিলেছে মাত্র ৪০০ কোটি টাকা।
সরকারি সূত্রের খবর, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থনীতি বিষয়ক কমিটি তার বৈঠকে টি বোর্ডের প্রস্তাবে ছাড়পত্র দিয়েছে। টি বোর্ড কর্তাদের একাংশ অবশ্য এই পরিপ্রেক্ষিতে জানিয়েছেন, ছাড়পত্রের বিষয়টি শুনলেও এখনও তাঁরা কোনও সরকারি বার্তা পাননি।
ক্ষুদ্র চা চাষিদের সংগঠন সিস্টা-র সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “ক্ষুদ্র চাষিদের জন্য এই প্রথম পৃথক ভাবে অর্থ বরাদ্দ করা হল। এই আর্থিক সহায়তা তাঁদের উন্নয়নে সাহায্য করবে।” উল্লেখ্য, এত দিন বোর্ড সাময়িক ভাবে তাঁদের কিছু আর্থিক সহায়তা দিলেও এ বারের প্রস্তাবে তার অভিমুখ আরও নির্দিষ্ট করা হয়েছে ও তা সম্প্রসারিতও হয়েছে।
বাকি ক্ষেত্রে অনুদান বা ভর্তুকির অঙ্ক এ বারে অনেকটা করেই বাড়বে। তবে কেন্দ্রের ছাড়পত্র মিললেও কিছু ক্ষেত্রে এখনই বরাদ্দের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার নিয়ে সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলেই। কারণ গত ৩১ মার্চ বোর্ডের পরিচালন পর্ষদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে এখনও নতুন পর্ষদ তৈরি হয়নি। সে ক্ষেত্রে ‘স্পেশাল পারপাস টি ফান্ড’ বা এসপিটিএফ প্রকল্পের ভর্তুকি দেওয়ার সময়সীমা স্থির করা নিয়ে দেরি হতে পারে। কারণ আগে এই প্রকল্পে পুরনো গাছ তুলে নতুন গাছ বসাতে বাস্তবিক যে খরচ হত, সেটাই ভর্তুকি দিত টি বোর্ড।
কিন্তু নতুন চা গাছের পাতা থেকে চা তৈরি হতে সময় লাগে। অর্থাৎ, যত দিন না সেই গাছ চা তৈরির উপযুক্ত হচ্ছে, তত দিন কার্যত বাগানের সেই অংশের চা উৎপাদন কমে যেত। এই কারণে সংশ্লিষ্ট বাগানে যে আপাত লোকসান হয়, এ বার সেটারও কিছুটা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বাগানটির গাছ লাগানোর খরচ ও সাময়িক ক্ষতির অঙ্ক মিলিয়ে ভর্তুকি পাওয়ার কথা। কিন্তু কবে থেকে ওই হিসেব কার্যকর হবে, সেই সিদ্ধান্ত সাধারণত বোর্ডের পরিচালন পর্ষদই নেয়। তাই পর্ষদ গঠিত না-হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।