শুরুতেই সাড়া।
চার মাসেরও কম সময়ে হাওড়ায় ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটিতে প্রস্তাবিত গয়না শিল্পের পার্কে বিক্রি হয়ে গেল দু’লক্ষ বর্গ ফুট জায়গা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, বড় সংস্থার পাশাপাশি সেখানে কারখানা গড়তে জায়গা কিনেছেন স্থানীয় কারিগররাও। আর এই চাহিদার পালে ভর করেই এখন পরিকাঠামো তৈরির প্রাথমিক পরিকল্পনা ছকে ফেলতে চাইছে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম।
এর আগে গয়না শিল্পে রাজ্যের প্রথম বিশেষ আর্থিক অঞ্চল (সেজ) মণিকাঞ্চন তৈরির সময়ে চাহিদা যাচাই না-করেই পরিকাঠামো গড়ে হাত পুড়িয়েছিল রাজ্য। ২০০৪ সালে সেখানে কমন ফেসিলিটি সেন্টার এবং স্ট্যান্ডার্ড ডিজাইন ফ্যাক্টরি মিলিয়ে দু’লক্ষ বর্গ ফুটের পরিকাঠামো তৈরি হয়। জায়গা রাখা ছিল রফতানি নির্ভর ৩১টি কারখানার। কিন্তু এর মধ্যে ২০টি আজও খালি। গয়না শিল্পমহলের অভিযোগ, যখন রফতানির বাজার চাঙ্গা ছিল, তখন বাধা ছিল লাল ফিতের ফাঁস। আর এখন বিশ্ব বাজারে চাহিদায় ভাটা। তাই ফাঁকা জায়গার চাহিদা শিকেয়। মণিকাঞ্চনের ভুল থেকে তাই শিক্ষা নিয়ে এ বার আর প্রথমেই বড় পরিকাঠামো তৈরির পথে হাঁটেনি রাজ্য। জানিয়ে দিয়েছে, ডোমজুড় পার্কে পরিকাঠামো চাহিদা অনুযায়ী তৈরি হবে ধাপে ধাপে।
তবে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের দাবি, ডোমজুড়ে দু’লক্ষ বর্গ ফুট ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন কেন্দ্র বা মডিউল তৈরির কাজ এগিয়ে রাখতে সুবিধা হবে। এ জন্য সরকারি কোষাগারে ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। আর একটি কারণেও এই প্রকল্প কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় বলে মনে করছে শিল্পমহল। তা হল, মণিকাঞ্চনের মতো সেজ তকমা নেই বলে এখান থেকে দেশের বাজারের জন্য গয়না তৈরির সুবিধা। সোনা আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ কিছুটা শিথিল করা নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তেও চাঙ্গা হবে এই শিল্প।
জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা পঙ্কজ পারেখের দাবি, দেশে চাহিদা এখনও ঊর্ধ্বমুখী। একই সঙ্গে এই এলাকা কারিগরদের ‘আঁতুড়ঘর’। ডোমজুড় সংলগ্ন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে বহু কারিগর থাকেন। বংশ পরম্পরায় এই শিল্পের সঙ্গেই তাঁরা জড়িত। ফলে হাতের কাছে দক্ষ শ্রমিক পাওয়ার সুযোগও এখানে লগ্নিকারীদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ।
তা ছাড়া মুম্বই, সুরত-সহ দেশের নানা প্রান্তে গয়নার কারিগর হিসেবে কাজ করেন এখানকার বহু মানুষ। এখন ঘরের দরজায় মডিউল নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না তাঁদের অনেকে। বিশেষত যেখানে সে জন্য ছাড়ের সুবিধা পাচ্ছেন তাঁরা। তা ছাড়া, এ প্রকল্পে কারিগররা উন্নততর পরিকাঠামোয় ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজের সুযোগ পাবেন বলেও আশা করছেন অনেকে। যে-বিষয়গুলি মাথায় রেখে সম্প্রতি তামিলনাড়ুর হোসুরে আধুনিক উন্নত পরিকাঠামো গড়েছে টাইটান।
ডোমজুড়ে নিগমের জমি প্রায় ৯ একর। যার প্রায় ৬ একরে গয়না পার্ক গড়বে নিগম। বাকিটায় হবে আরও ৪ দফতরের প্রকল্প। এক একরে তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক গড়বে ওয়েবেল। আধ একরে কারিগরি শিক্ষা দফতরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। গ্রামীণ হাট তৈরি করবে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের প্রস্তাবিত ‘মিনি কুইক রেসপন্স টিম’-এর কেন্দ্রও এখানেই হওয়ার কথা।