চর্মশিল্পের নিয়মের গেরোয় ফের আটকে বানতলা তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক

বানতলায় পরিবেশ নিয়ে নিয়মের কড়াকড়ি মূলত চর্মনগরীর জন্য। কিন্তু শুধুমাত্র পাশে হওয়ার কারণে বরাবর তার মাসুল গুনেছে সেখানকার তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক। দূষণের জেরে বহু বছর প্রকল্প তৈরি করাই অসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ বার শেষের মুখে এসেও তা ফের জড়িয়ে গেল পরিবেশ-ছাড়পত্রের জটে। যার ফলে বানতলা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে থমকেই রইল সংস্থা আসা। আটকে থাকল কর্মসংস্থানও।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৪
Share:

বানতলায় পরিবেশ নিয়ে নিয়মের কড়াকড়ি মূলত চর্মনগরীর জন্য। কিন্তু শুধুমাত্র পাশে হওয়ার কারণে বরাবর তার মাসুল গুনেছে সেখানকার তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক। দূষণের জেরে বহু বছর প্রকল্প তৈরি করাই অসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ বার শেষের মুখে এসেও তা ফের জড়িয়ে গেল পরিবেশ-ছাড়পত্রের জটে। যার ফলে বানতলা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে থমকেই রইল সংস্থা আসা। আটকে থাকল কর্মসংস্থানও।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, নানা অজুহাতে সেখানে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দিচ্ছে না রাজ্য পরিবেশ দফতর। অথচ সেই ছাড়পত্র ছাড়া ওই পার্কে জায়গা লিজ বা ভাড়ায় নেবে না কোনও তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাই। তাই প্রায় ২৮ লক্ষ বর্গ ফুট জায়গা তৈরি হয়েও খালি পড়ে রয়েছে। একই সঙ্গে বেকারত্বে শীর্ষে থাকা এই রাজ্যে আটকে রয়েছে ২৫ হাজার কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও।

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের দাবি, চর্মশিল্পের তৈরি সমস্যার মাসুল দিতে হচ্ছে তাদের। দূষণের কারণে পরিবেশ দফতর ছাড়পত্র দিচ্ছে না। অথচ পর্যবেক্ষণে এসে চর্মশিল্পের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন খোদ দফতরের কর্তারাই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার ফোন বা এসএমএসে তার কোনও উত্তর দেননি।

Advertisement

শুধু পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্রের অভাবে প্রায় তৈরি হয়েও পড়ে রয়েছে ধনসেরি ও ফোরাম প্রোজেক্টসের দু’টি বড় বাড়ি। তা বিপণন করা যাচ্ছে না। কারণ, ছাড়পত্র না-এলে, সেখানে অফিস তৈরির জন্য লিজ বা ভাড়ায় জায়গা নিতে এগোবে না কোনও সংস্থা। তাই রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহলের আশঙ্কা, দূষণের কারণে বানতলার চাহিদা এমনিতেই তলানিতে। তার উপরে ছাড়পত্র না -আসায় আরও বেশি সমস্যার মুখে পড়েছে নির্মাণ সংস্থাগুলি।

জন্মলগ্ন থেকেই দূষণের ভূত তাড়া করে ফিরেছে ১,১০০ একরের বানতলা বিশেষ আর্থিক অঞ্চলকে। চর্মশিল্পের পাশেই ১২০ একরের তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক। চর্মনগরীর বেহাল বর্জ্য নিকাশী ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে বারবার। বছর তিনেক আগে সমাধানসূত্র হিসেবে বর্জ্য নিকাশি নালা আলাদা করে দেওয়া হয়। নিশ্চিত করা হয় যে, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প প্রকল্পে ঢুকে পড়বে না চর্মনগরীর বর্জ্য। কিন্তু তাতেও বিশেষ ফল হয়নি।

অথচ রাজ্যে মূলত জমি সমস্যার কারণেই বানতলায় তৈরি হয়েছিল ‘কলকাতা আইটি পার্ক’। সেক্টর ফাইভ ও রাজারহাটে জমির অভাব। কিংবা থাকলেও দাম আকাশছোঁয়া। এই পরিস্থিতিতে ১৮টি সংস্থা জমি নিয়েছিল এখানে। বাজার দরেই জমি কিনেছিল কগনিজ্যান্ট, টেক মহীন্দ্রা, আই-গেট পাটনির মতো সংস্থা। কিন্তু সেক্টর ফাইভ বা রাজারহাটের পাশে বানতলা এখনও ‘দুয়োরানি’ই থেকে গিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ক্ষোভ।

সমস্যা সামাল দিতে ২০০৯ সাল থেকেই বানতলার জন্য প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ (বানতলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি) তৈরির ভাবনাচিন্তা চলছে। অনেকটা সেক্টর ফাইভের নবদিগন্ত-র ধাঁচে। বানতলায় ১,১০০ একরের বিশেষ আর্থিক অঞ্চলে রাস্তাঘাট, আলো, নিকাশি, জল-সহ বিভিন্ন নাগরিক পরিষেবার অভাব এখনও কাটেনি। নিরাপত্তা নিয়েও স্বস্তি নেই। সংশ্লিষ্ট মহলের আশা, কর্তৃপক্ষ তৈরি হলে, এই সমস্ত সমস্যার সুরাহা হবে।

২০১১ সালে বর্তমান সরকার এ নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করলেও, তা থমকে যায় সরকারেরই অন্দরমহলের মতানৈক্যে। পুর দফতরের দাবি ছিল, এ বিষয়ে রাজ্য উদ্যোগী হলে, তার ঘাড়ে বাড়তি আর্থিক বোঝা চাপবে। পার পেয়ে যাবে পরিকাঠামো গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কম দামে জমি পাওয়া নির্মাণ সংস্থাও। উল্টো দিকে শিল্প দফতরের যুক্তি ছিল, বানতলার জন্য অথরিটি হলে উপকৃত হবে সেখানকার শিল্পমহল। তাই শুধু পুরনো কাসুন্দি না ঘেঁটে তা তৈরি করা একান্ত জরুরি।

গত ডিসেম্বরে মন্ত্রিসভায় এই প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ গড়ায় সিলমোহর পড়ে। কিন্তু তার পরেও প্রায় দেড় মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। তাই সল্টলেক সেক্টর ফাইভের নবদিগন্ত-র ধাঁচে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ তৈরি হওয়ার আগে বানতলাকে আর কোনও নম্বরই দিতে রাজি নয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement