চুড়োয় ওঠার পরের দিন লেনদেন শেষে সেনসেক্স প্রায় একই উচ্চতায় রয়ে গেল ঠিকই। কিন্তু মঙ্গলবার শেয়ার বাজারে দিনভর চর্চার কেন্দ্রে থাকল প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম সংশোধন আপাতত স্থগিত রাখতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ। সোমবার পেট্রোলিয়াম মন্ত্রককে দেওয়া ওই নির্দেশ ঘিরে এ দিন ভোটের তরজা যেমন গরম হয়েছে, তেমনই ওঠা-নামা করেছে শেয়ারের দরও। বিশেষত সেই সমস্ত সংস্থার, যাদের ব্যবসা ওই গ্যাসের দরে প্রভাবিত হওয়ার কথা।
কমিশনের সিদ্ধান্তে জোর ধাক্কা খেয়েছে মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের (আরআইএল) শেয়ার দর। ২.৯% নেমে তা হয়েছে ৮৭৯.৩০ টাকা। যথাক্রমে ০.৪% এবং ২.২% পড়েছে দুই রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস সংস্থা ওএনজিসি এবং অয়েল ইন্ডিয়ার দরও। তেমনই উল্টো দিকে দর বেড়েছে বিভিন্ন বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনকারী সংস্থার। কেন্দ্রের ঘোষণামতো ১ এপ্রিল থেকে গ্যাসের দাম এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ হলে (প্রতি দশ লক্ষ ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিটে ৪.২ ডলার থেকে বেড়ে ৮.৩ ডলার), যাদের উৎপাদন খরচ বাড়ত অনেকটাই। তবে এই সমস্ত কিছুর মধ্যেও এ দেশের বাজারে লগ্নি অব্যাহত রেখেছে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি। মূলত তাদের লগ্নির দৌলতেই এ দিন মাত্র ০.২৭ পয়েন্ট খুইয়েছে সেনসেক্স।
শিল্পমহলের অবশ্য আশঙ্কা, কমিশনের এই নির্দেশে ফের ধাক্কা খাবে বিনিয়োগের পরিবেশ। সি আই আই-এর মতে, অনেক আগে থেকে প্রায় ঘোষণা হয়ে থাকা মন্ত্রিসভার এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যদি নির্বাচনী বিধির গেরোয় আটকে যায়, তবে তা লগ্নিকারীদের কাছে আদৌ ভাল সঙ্কেত পাঠাবে না। ফলে ক্ষুণ্ণ হবে লগ্নির পরিবেশ। তা-ও আবার তেল-গ্যাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে।
কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার দায় এ দিন কেন্দ্রের ঘাড়েই চাপিয়ে দিয়েছে কমিশন। তাদের প্রশ্ন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যদি ছ’মাস-এক বছর আগে নেওয়াই হয়ে থাকে, তবে তা রূপায়ণ করতে এত সময় লাগবে কেন? কেন অনুমতির জন্য কড়া নাড়তে হবে কমিশনের দরজায়? তা হলে নিশ্চয়ই কোনও খটকা ছিল। কমিশনের দাবি, এ নিয়ে কেন্দ্রেরই যদি খটকা থাকে, তবে তাদের খটকা তো স্বাভাবিক। বিশেষত বিষয়টি যখন এই মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি আবার বলেছেন, কমিশনের ওই নির্দেশ খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। এ নিয়ে শীর্ষ আদালতে মামলা চলায় তা দেখতে পারেন সলিসিটর জেনারেল কিংবা অ্যাটর্নি জেনারেলও। একই সঙ্গে, ফের তাঁর দাবি, আখেরে এতে ক্ষতি হবে দেশেরই। কারণ নয়া দরে চুক্তি না-হওয়ায় গ্যাস উৎপাদন কমে গেলে, তুলনায় বেশি দরে তা আমদানি করতে হবে।
আর ঠিক এখানেই মইলিকে ফের আক্রমণ করেছেন আম আদমি পার্টির নেতা তথা দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। তাঁর দাবি, এই সমস্ত কথা বলে আসলে রিলায়্যান্সকেই খুশি করার চেষ্টা করছেন মইলি। মুকেশ অম্বানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই মুখে কুলুপ আঁটা নিয়ে তুলোধোনা করেছেন কংগ্রেস ও বিজেপিকে। অন্তত এখনকার মতো গ্যাসের দর বাড়ানো রোখার জন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন কমিশনকেও।
উল্লেখ্য, সোমবার পেট্রোলিয়াম সচিবকে চিঠিতে কমিশন জানিয়েছিল যে, সব দিক খতিয়ে দেখে তাদের মনে হয়েছে গ্যাসের দাম সংশোধনের বিষয়টি এখন বিচারাধীন। ভোটের মুখে ওই নয়া দর ঘোষণা করতে পারবে না কেন্দ্র। এ দিন বিজেপি বলেছে, ক্ষমতায় এলে গ্যাসের দর পুনর্বিবেচনা করতে পারে তারা।