বৃদ্ধির হার ঢিমে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ততটা নয়, যতটা আশঙ্কা ছিল। এ বার সেখান থেকে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে দেশের অর্থনীতির নতুন দৌড় শুরুর আশায় থাকা শেয়ার বাজার এখন সাগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দিকে। এই ভেবে যে, এ বার অন্তত মুখ থুবড়ে পড়া উৎপাদন শিল্পকে চাঙ্গা করতে সুদ কমানোর পথ প্রশস্ত করবে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এই একই দাবি বারবার জোরালো ভাবে জানিয়ে চলেছে শিল্পমহলও। যদিও সত্যিই সেই আশা পূরণ হবে কি না, তার উত্তর রয়েছে গভর্নর রঘুরাম রাজনের অস্তিনে। ২ ডিসেম্বর ঋণনীতি ঘোষণার সময়ে যা উপুড় করবেন তিনি।
অবশ্য শুধু সুদ হ্রাস নয়। একই রকম আগ্রহ নিয়ে সংসদের দিকেও চোখ রেখে চলেছে শিল্প ও শেয়ার বাজার। আশা করছে, সেখানে শীতকালীন অধিবেশনে বেশ কিছু সংস্কারমুখী বিল পাশ করাতে পারবে মোদী সরকার। এর মধ্যে শ্রম সংস্কার বিল সংসদের উভয় কক্ষে ইতিমধ্যেই পাশ হয়েছে। এর পরে বিমা বিল, পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে রয়েছে তারা। বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, ওই সব বিল পাশ হলে, আর্থিক সংস্কারে গতি আসবে। ঘুরে দাঁড়াবে শিল্প।
শুক্রবারই চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বৃদ্ধির হার প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। সেখানে দেখা গিয়েছে, আগের বছরের ওই একই সময়ের তুলনায় তা দাঁড়িয়েছে ৫.৩%। বৃদ্ধির এই হার আগের তিন মাসের (৫.৭%) তুলনায় কম ঠিকই। কিন্তু আগের বছরের একই সময়ের (৫.২%) সাপেক্ষে বেশি। শুধু তা-ই নয়। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা ছিল, আলোচ্য ত্রৈমাসিকে হয়তো বৃদ্ধির হার নেমে যাবে ৫ থেকে ৫.১ শতাংশে। কিন্তু পরিষেবা, খনন (১.৯%), নির্মাণ (৪.৬%)-সহ কিছু ক্ষেত্রে উন্নতির জেরে তা হয়েছে ৫.৩%।
কিন্তু এই পরিসংখ্যানে আশঙ্কার মূল কাঁটা তলানিতে ঠেকা কল-কারখানার উৎপাদন। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে কল-কারখানায় জিনিসপত্র তৈরি (উৎপাদন শিল্প) বেড়েছে মাত্র ০.১%। যেখানে বড় কল-কারখানা গড়ায় লগ্নি টানতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ স্লোগান তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে বারবার বলছেন উৎপাদন শিল্পে জোর দেওয়ার কথা। আর সেই কারণেই অনেকে মনে করছেন, কল-কারখানায় উৎপাদনের এমন বেহাল দশা দেখার পরে ঋণনীতির আগে সুদ কমানোর জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনের কাছে সওয়াল করতে পারেন খোদ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।
উৎপাদন শিল্পের বেহাল দশা দেখে ফের সুদ ছাঁটাইয়ের দাবি তুলেছে শিল্পমহলও। তাদের দাবি, পাইকারি ও খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। বিশ্ব বাজারে ৭৫ ডলারের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে অশোধিত তেলের দাম। উদ্বেগজনক অবস্থা বরং কল-কারখানায় উৎপাদনের। ফলে তাকে চাঙ্গা করতে ২ ডিসেম্বরের ঋণনীতিতে সুদ কমাক শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
বণিকসভাগুলি প্রায় লাগাতার বলে চলেছে, শিল্পকে চাঙ্গা করতে সবার আগে প্রয়োজন তার মূলধন সংগ্রেহর খরচ কমানো। তাদের যুক্তি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট কমিয়ে সুদ কমানোর পথ প্রশস্ত করুক, যাতে সুদ কমায় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি। সুদ কমলে, এক দিকে সংস্থাগুলির মূলধন সংগ্রহের খরচ কমবে। ফলে বাড়বে লগ্নি। অন্য দিকে, মাসিক কিস্তির অঙ্ক কমায় চাহিদা বাড়বে বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদির। সব মিলিয়ে চাঙ্গা হবে শিল্প। তবে বৃদ্ধির হার পূর্বাভাসের তুলনায় উপরে থাকায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক শেষ পর্যন্ত এখনই সুদ কমাতে রাজি হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ী বাজার ও শিল্পমহল।
এই দুই পক্ষের চিন্তা বাড়িয়েছে অক্টোবরের শেষে রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯০ শতাংশে পৌঁছে যাওয়াও। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন পরিস্থিতি সামাল দিতে খরচে রাশ টানতে বাধ্য হবেন জেটলি। সেই সঙ্গে বিলগ্নিকরণের পথে হেঁটে আয় বাড়ানোরও চেষ্টা করবে কেন্দ্র।