পরিচিতি: বাদল (৩৯) স্ত্রী (৩৭) মেয়ে (৯) ছেলে (২)
কী করেন: বহুজাতিক সংস্থার কর্মী। থাকেন কলকাতায় নিজেদের বাড়িতে
লক্ষ্য: সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য সঞ্চয়। দু’বছর পরে ফ্ল্যাট কেনা। অবসরের লগ্নি
বাদল বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি করেন। থাকেন পরিবারের সঙ্গে নিজের বাড়িতে। সাধ্যমতো লগ্নিও ছড়িয়েছেন। তাঁর প্রোফাইলের ভাল দিক হল, তিনি বিভিন্ন দিক ভেবে প্রকল্প বেছেছেন, যাতে সর্বাধিক রিটার্ন মেলে। তেমনই আবার বিমার সুরক্ষার কথাও ভোলেননি। কিছু ক্ষেত্রে তাঁর আরও একটু পরিকল্পনার দরকার।
জীবন বিমায় নিশ্চিন্তি
বাদল নিজের জন্য ১ কোটি টাকার টার্ম পলিসি করেছেন। ঠিক সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে শুধু একটা পার্সোনাল অ্যাক্সিডেন্ট কভার নিয়ে নিলে ভাল হবে। এক বার টার্ম পলিসি করলে আলাদা করে এনডাওমেন্ট পলিসি চালানোর মানে হয় না। ফলে সেটি পেড আপ করে দিতে পারলে ভাল। এ জন্য বিমা সংস্থার সঙ্গে কথা বলুন।
বাড়ান স্বাস্থ্য বিমা
ইতিমধ্যেই ৮ লক্ষ টাকার বিমা করিয়েছেন বাদল। চিকিৎসা খরচের কথা মাথায় রেখে বলব সেই অঙ্ক আরও বাড়াতে হবে। এখন সমস্ত খরচ এবং লগ্নির পরেও কিছু টাকা হাতে থাকে। ফলে তা নিয়ে সমস্যা হবে না।
সন্তানের সঞ্চয়
বাদলের দুই ছেলেমেয়ে। তাদের এক জনের বয়স ৯ বছর। অন্য জনের ২ বছর। ফলে তাঁকে দু’ধাপে তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য টাকা জমাতে হবে (সারণি: উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যপূরণ)। মনে হতে পারে ২০ লক্ষ টাকা পড়াশোনার জন্য বড্ড বেশি। কিন্তু একটু ভেবে দেখলে বোঝা যাবে যে, কোনও ভাল বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এখন এ রকমই খরচ লাগে।
মেয়ের জন্য যদি ১৮,০০০ টাকা করে এসআইপি করা যায়, তা হলে ৯ বছরে ১২% রিটার্ন ধরলে জমবে প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকা। ছেলের ক্ষেত্রে সময় বেশি পাবেন। তাই তার জন্য ১৬ বছর ধরে ৯৩০০ টাকা করে এসআইপি করার পরামর্শ দেব। ১২% রিটার্ন ধরলে হাতে আসবে প্রায় ৫০ লক্ষ।
দু’জনের ক্ষেত্রেই স্নাতকস্তরের হিসেব বললাম। স্নাতকোত্তর স্তরে বাড়তি এসআইপি করতে হতে পারে।
অবসরের জন্য
বাদলের বয়স ৩৯ বছর। এটা ঠিক যে বেসরকারি ক্ষেত্রে এখন চাকরি অনিশ্চিত। কিন্তু তা-ও যদি ধরি যে তাঁর ৬০ বছর বয়সে অবসর হবে, তা হলে হাতে রয়েছে ২১ বছর সময়। এ বার দেখব তাঁর ওই বয়সে গিয়ে এখনকার রোজগার বজায় রাখতে গেলে কত টাকা তহবিল হতে হবে।
• এখন মাসিক আয়: ৮১,০০০ টাকা
• অবসরের বয়স: ৬০ বছর
• হাতে রয়েছে: ২১ বছর
• ওই সময়ে এই টাকার মূল্য দাঁড়াবে: ২,৫৯,০০০ টাকা (৬% মূল্যবৃদ্ধি ধরে)
• বছরে: ৩১,০৮,০০০ টাকা
• সুরক্ষিত প্রকল্পে ৬% রিটার্ন ধরে তহবিল: ৫,১৮,০০,০০০ টাকা অর্থাৎ, বর্তমান আয় বজায় রাখতে গেলে তাঁকে কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা জমাতে হবে। এ জন্য—
• ইপিএফ থাকুক অবসরের জন্য।
• পিপিএফ চালু করুন। সেখানে প্রতি বছর ১.৫ লক্ষ টাকা করে রাখুন।
• এখন যে এসআইপি চলছে, তার বেশিরভাগটাই সন্তানের জন্য খরচ হবে। তাই নতুন এসআইপি করুন।
• ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য সব এসআইপি তুলে নেবেন না। যতটা দরকার ততটাই তুলতে হবে। বাকিটা থাকবে অবসরের জন্য।
• স্থায়ী মেয়াদের বন্ড কিনতে পারেন।
ফ্ল্যাট কেনা
আগামী ২ বছরের মধ্যে ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা করছেন বাদল। তাঁর পারিবারিক বাড়ি রয়েছে। আমার মতে, খুব জরুরি না-হলে বা শরিকি ঝামেলা না-থাকলে ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাববেন না। কারণ—
এখন ফ্ল্যাটের দাম ৪০ লক্ষ হলে দু’বছর পরে গিয়ে তা ৪৫ লক্ষে দাঁড়াবে। ৩০% টাকা ডাউনপেমেন্ট করলে এই সময়ের মধ্যে তাঁকে জোগাড় করতে হবে ১৫ লক্ষ টাকা। এ জন্য বাদলকে নিজের সঞ্চয় ভাঙাতে হবে।
তার পরেও রয়েছে মাসিক কিস্তি। বাদবাকি ৩০ লক্ষ টাকা ঋণের জন্য মাসে তাঁকে দিতে হবে প্রায় ২৭,০০০ টাকা। এই টাকা আসবে কোথা থেকে? উল্টে তা বাদলের লগ্নি এবং সঞ্চয়ের পরিকল্পনাই ভেস্তে দিতে পারে। এ ছাড়া ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ রয়েছে। ফলে আপাতত এই কথা না-ভাবাই ভাল।
লেখক শৈবাল বিশ্বাস
(মতামত ব্যক্তিগত)