অর্থনীতির তালা খুলে বছরের গোড়ায় কার্যকলাপ শুরু হয়েছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রে। ঐতিহাসিক মন্দা কাটিয়ে ফের বৃদ্ধির গণ্ডিতে পা রেখেছিল দেশ। একই সঙ্গে শুরু হয়েছিল বিয়ে-সহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানও। আর তার কাঁধে ভর করেই জানুয়ারি-মার্চে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল সোনার মুখ থুবড়ে পড়া চাহিদা। বাড়ছিল বিক্রিবাটা। আগের বছরটা খুব খারাপ যাওয়ার পরে এ বারের অক্ষয় তৃতীয়া এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দিকে তাকিয়ে ছিলেন গয়নার ব্যবসায়ীরা। কিন্তু করোনা যে ভাবে দ্বিতীয় ছোবল মেরেছে, তা ফের দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে সংশ্লিষ্ট মহলে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এপ্রিল-জুনে দেশে আবারও মাথা নামাতে পারে হলুদ ধাতুর চাহিদা।
ডব্লিউজিসি-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নতুন ক্যালেন্ডারবর্ষের প্রথম তিন মাসে দেশে সোনার চাহিদা এক বছর আগের তুলনায় ৩৭% বেড়েছে। ওই সময়ে সোনা বিক্রি হয়েছে ১৪০ টন। এক বছর আগে যা ছিল ১০২ টন। সমীক্ষকদের ব্যাখ্যা, করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে গত বছর সারা বিশ্বের দীর্ঘতম লকডাউন করেছিল ভারত। তার ফলে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ কার্যত বন্ধের পাশাপাশি, বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান স্থগিত রাখা কিংবা ছোট আকারে করার দিকে জোর দেন সাধারণ মানুষ। যার ফলে বিক্রিবাটা কমে যায় সোনা, রুপো-সহ দামি পাথরের। তবে একই সঙ্গে শেয়ার বাজারে অনিশ্চয়তার ফলে লগ্নি-পণ্য হিসেবে চাহিদা বাড়তে থাকে সোনার। ফলে মন্দার মধ্যেও চড়চড় করে বাড়তে থাকে সোনার দাম। যা মরার উপরে খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায় গয়না ব্যবসায়ী এবং কারিগরদের কাছে। ধাতব সোনার বিক্রি আরও কমে।
তবে গত কয়েক মাসে সোনার দাম আবার কিছুটা মাথা নামিয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্মকাণ্ড চালু হওয়ায় ফের হচ্ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, স্থগিত থাকা অনুষ্ঠানগুলি আবার শুরু হওয়ায় জমে থাকা চাহিদাও সেই সময়ে মিটিয়েছেন অনেক ক্রেতা। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঝাপটায় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে নতুন করে। অনেক রাজ্যই স্থানীয় লকডাউন এবং বিক্ষিপ্ত কড়াকড়ির পথে যেতে বাধ্য হয়েছে। কাটছাঁট করা হচ্ছে সামাজিক অনুষ্ঠানেও। যার ফলে এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে ফের মাথা নামাতে পারে সোনার বিক্রিবাটা। ডব্লিউজিসি-র ভারতীয় শাখার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সোমসুন্দরম পিআর বলছেন, ‘‘মনে হচ্ছে বিয়ে, অক্ষয় তৃতীয়া এ বারেও নমো নমো করে করতে হবে।’’ তবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে চাহিদা কিছুটা বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, সারা বছরেও তা হতে পারে ২০২০ সালের চেয়ে বেশি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, অর্থনীতির পক্ষে গত বছরটা ছিল একেবারেই ব্যতিক্রমী। ফলে সেই সময়ের নিরিখে বেশি বিক্রি আদৌ কি ততটা স্বস্তিদায়ক!