শিল্পপতি মুকেশ অম্বানী। -ফাইল ছবি।
ব্যবসার ভারতীয় অংশীদার সংস্থার সঙ্গে আমেরিকার ই-কমার্স জায়ান্ট ‘অ্যামাজন’-এর বিরোধ সিঙ্গাপুরের আদালত পর্যন্ত গড়ানোয় রীতিমতো উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন শিল্পপতি মুকেশ অম্বানী। ওই বিরোধের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভারতীয় সংস্থাটির খুচরো (রিটেল) ব্যবসাটি কিনে নিতে পারছে না মুকেশের রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ। ৩৪০ কোটি ডলারে যা কিনতে রাজি হয়েই আছে মুকেশের সংস্থা। এর ফলে, ভারতে খুচরো ব্যবসার সম্প্রসারণও কিছুটা থমকে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
অ্যামাজনের ই-কমার্স ব্যবসার ভারতীয় অংশীদার ‘ফিউচার গ্রুপ’। গত বছর ফিউচার গ্রুপের একটি ব্যবসার ৪৯ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় অ্যামাজন। ফিউচার গ্রুপের ওই ব্যবসাটি শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত নয়।
আমেরিকার ই-কমার্স সংস্থার একটি সূত্রের খবর, ওই সময় ফিউচার গ্রুপের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল আগামী কয়েক বছরের মধ্যে গ্রুপের ‘ফিউচার রিটেল লিমিটেড’ও কিনে নিতে পারবে অ্যামাজন।
অ্যামাজনের অভিযোগ, চুক্তির সেই সব শর্ত ভেঙে ফিউচার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর বিয়ানি তাঁদের খুচরো ব্যবসার সংস্থা ফিউচার রিটেল লিমিটেডকে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে বেচতে রাজি হয়ে যান।
আদালতে বিরোধের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অ্যামাজন এখন চাইছে এই বিক্রি বন্ধ রাখতে। এই বিক্রি যাতে সরকারি অনুমোদন না পায় তার জন্য ভারতের কম্পিটিশন কমিশনকেও চিঠি দিয়েছে অ্যামাজন।
অন্য দিকে, মুকেশের সংস্থার বক্তব্য, এই বিক্রি এখন স্থগিত থাকলে বা তা বন্ধ হয়ে গেলে তাদের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে হবে।
আরও পড়ুন: আত্মনির্ভর ভারত অভিযান-৩ ঘোষণা নির্মলার, জোর কর্মসংস্থান তৈরিতে
আরও পড়ুন: ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম আপাত মন্দা, জানাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, লড়াইটা আসলে অ্যামাজনের সঙ্গে ফিউচার গ্রুপের নয়। লড়াইটা আদতে ভারতে খুচরো ব্যবসার ক্ষেত্রটি কার দখলে থাকবে, অ্যামাজন নাকি রিলায়্যান্সের, তা-ই নিয়ে। যার অর্থ, লড়াইটা আসলে অ্যামাজন প্রধান জেফ বেজোসের সঙ্গে রিলায়্যান্সের প্রধান এশিয়ার সবচেয়ে ধনী মুকেশ অম্বানীর। ফিউচার গ্রুপ সে ক্ষেত্রে বেজোস আর অম্বানীর ‘হাতের পুতুল’ মাত্র। মে মাসেই ধাপে ধাপে ফিউচার-এর সংস্থাগুলিতে নিজেদের প্রাধান্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অ্যামাজন। কিন্তু সেই সময়ই রিলায়্যান্সের কাছে ফিউচার রিটেল লিমিটেডকে বিক্রির চুক্তি হয়ে যায়।
একটি সূত্রের খবর, ফিউচার গ্রুপের রিটেল ব্যবসার সঙ্গে তাদের পাইকারি, লজিস্টিক্স এবং ওয়্যারহাউজিং ইউনিটগুলিও রিলায়্যান্সের হাতে চলে যাক, এটা মেনে নিতে পারছে না অ্যামাজন।
এই বিরোধে অ্যামাজনের পক্ষে আপাতত সুখবর এইটুকুই, সিঙ্গাপুরের আরবিট্রেশন আদালত গত ২৫ অক্টোবর রায়ে এই বিক্রি আপাতত স্থগিত রাখতে বলেছে।
যদিও ফিউচার ও রিলায়্যান্সের দাবি, সিঙ্গাপুর আদালতের এই অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে ফিউচার রিটেল লিমিটেডের বিক্রি হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। কারণ, শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত নয়, ফিউচার গ্রুপের এমন সংস্থাটির ৪৯ শতাংশ শেয়ার কেনার চুক্তিতে ফিউচার রিটেল লিমিটেড জড়িত ছিল না।