বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের প্রস্তাব কানে যেতেই, মোটা রোজগেরেদের কাছে জেল্লা হারাল কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড (ইপিএফ), জাতীয় পেনশন ব্যবস্থা (এনপিএস)-সহ বিভিন্ন অবসরকালীন তহবিলের সঞ্চয়। যেখানে এই সব প্রকল্পে প্রতিটি কর্মীর অ্যাকাউন্টে নিয়োগকারীর জমা দেওয়া টাকায় করছাড়ের সীমা বেঁধে দেওয়া হল বছরে ৭.৫০ লক্ষ টাকায়। এই প্রস্তাব যে মোটা বেতনের কর্মীদের জন্যই, তা বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট। সোমবার খোদ রাজস্ব সচিব অজয় ভূষণ পাণ্ডে বলেওছেন, বছরে ৬০ লক্ষ টাকার বেশি বেতন না হলে, কোনও চিন্তা নেই। এই নিয়মে কিছু আসবে-যাবে না। কিন্তু তার পরেও থাকছে আশঙ্কা। কর্মী-সহ বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন, এ ভাবে পিএফের টাকাকে করের আওতায় আনার রাস্তা খোলা হল না তো? এখন মোটা বেতনের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য। পরের ধাপে এই পথ ধরে ধীরে ধীরে কম আয়ের কর্মীদের পিএফের টাকাকেও করের আওতায় আনবে না তো সরকার?
এত দিন পিএফ বাবদ যত টাকাই নিয়োগকারী দিন না কেন, তার উপর করছাড় পেতেন কর্মী। জমা টাকার সুদেও কর বসত না। এই প্রথম পিএফ খাতে জমা টাকা এবং তাতে পাওয়া সুদকে করের আওতায় আনা হল।
ট্রেড ইউনিয়ন মহলের আশঙ্কা, এর পরে সাধারণ কর্মীদের পিএফের টাকাকেও করের আওতায় আনতে পারে মোদী সরকার। তাদের অভিযোগ, বর্তমান সরকার চাইছে এমন একটি কর ব্যবস্থা, যেখানে কোনও ছাড় থাকবে না। যে কারণে করছাড় বাদ দিয়ে আয়করের কম হারের একটি বিকল্প ব্যবস্থাও এনেছে তারা। পিএফের অছি পরিষদের প্রাক্তন সদস্য এবং এআইইউটিইউসির সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর সাহার দাবি, ‘‘কেন্দ্র বেশ কিছু দিন ধরেই পিএফের টাকাকে করের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি একবার সেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রেড ইউনিয়নগুলি আন্দোলন শুরু করায় পিছু হটেন।’’
ইউনিয়ন নেতাদের মতে, এ বার বাজেটে ওই উদ্দেশ্য সাধনের পথ খুলে দিলেন নির্মলা। তাঁরা বলছেন, যে শ্রেণির চাকুরিজীবীদের ক্ষেত্রে নতুন ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তারা সাধারণত ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হন না। তাই এটি রুখতে আন্দোলনের সম্ভাবনা কম।
কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ (ইপিএফ), ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (এনপিএস) এবং অবসরকালীন সুবিধা দেওয়ার অন্য কোনও প্রকল্পে নিয়োগকারী সংস্থা তার ভাগের অংশ হিসেবে (এমপ্লয়ার্স কন্ট্রিবিউশন) সব মিলিয়ে কর্মীর অ্যাকাউন্টে বছরে ৭.৫০ লক্ষ টাকার বেশি জমা দিলে, ওই সাড়ে সাত লক্ষের অতিরিক্ত টাকার উপর তিনি কোনও কর ছাড়
পাবেন না।
•ওই সব তহবিলে অতিরিক্ত ওই জমা টাকার উপর সুদ বা ডিভিডেন্ড বাবদ যে আয় হবে, তার
উপরেও চাপবে কর। ওই কর মেটাতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্মীকেই।
আইএনটিটিইউসির কেন্দ্র ও রাজ্য কমিটির সভাপতি এবং আঞ্চলিক পিএফ পর্ষদের সদস্য সাংসদ দোলা সেন বলেন, ‘‘২০১৬ সালে তৎকালীন জেটলি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, পিএফের জমা টাকা যখন তোলা হবে তখন তার ৬০ শতাংশের উপর কর গুনতে হবে সদস্যদের। দেশ জুড়ে আন্দোলনের জেরে পরে তা ফেরাতে বাধ্য হয় কেন্দ্র। এ বারও আমাদের দল নির্মলার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সংসদে প্রতিবাদ জানাবে। বিষয়টি বেশি আয় বা কম আয়ের ব্যাপার নয়। নীতিগত ভাবে আমরা পিএফের টাকায় কর চাপানোর বিরোধী।’’