দৌড় শুরুর আগে

ব্যবসা চালু করতে চান, ভাল কথা। কিন্তু জানেন কি তার জন্য কী ছাড়পত্র লাগবে? পুঁজি জোগাড় করতে প্রকল্পের রিপোর্ট তৈরি করবেন কী ভাবে? কোন পথেই পাওয়া যাবে জমি? খোঁজ নিলেন দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত বড় সংস্থার জন্য আনা বিভিন্ন সুবিধা যতটা প্রচার পায়, ছোট উদ্যোগপতিদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে ততটা পায় না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:২৪
Share:

স্কুল-কলেজের পাঠ চুকিয়ে কাজের জগতে পা রাখার ক্ষেত্রে সাধারণত চাকরিই প্রাধান্য পায় আমাদের সমাজে। কিন্তু সকলেই যে সেই পথে হাঁটবেন, তা নয়। তেমনই আবার চাকরির বাজারও ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এক বার ভাল চাকরিতে ঢুকলেই যে ওই সংস্থা থেকে অবসর নেওয়া যাবে, বাবা-মায়ের যুগের সেই ধারণাও ফিকে হচ্ছে ক্রমশ। ফলে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই ভাবছেন নিজের মতো কিছু করার কথা। কেউ শুরু থেকেই, কেউ বা আবার কয়েক বছর চাকরিতে হাত পাকানোর পরে। কিন্তু ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য কিছু প্রাথমিক খুঁটিনাটি হাতের সামনে থাকলে এগোতে সুবিধা হয়। বিশেষত ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে এই প্রাথমিক তথ্য ভাণ্ডার একটু বেশিই কাজে লাগে। কারণ, বড় সংস্থার জন্য আনা বিভিন্ন সুবিধা যতটা প্রচার পায়, ছোট উদ্যোগপতিদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে ততটা পায় না। ফলে অনেকেই কাজের সময়ে ন্যূনতম তথ্যও হাতের কাছে পান না। আজ অন্তত প্রাথমিক সেই সব ধাপ ও ছাড়পত্র জোগাড়ের দিশা দেওয়ারই চেষ্টা করা হল।

Advertisement

ভাগ কতগুলি

Advertisement

কেন্দ্রের আইন অনুযায়ী ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রকে দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়—

• কল-কারখানায় উৎপাদন (যেমন আটা-সুজি তৈরি, কাঠের আসবাবপত্র, প্লাস্টিকের মোল্ড তৈরি, ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্র ইত্যাদি)।

• পরিষেবা ক্ষেত্র (গাড়ি বা কোনও যন্ত্র মেরামতি, বিউটি পার্লার প্রভৃতি)।

কত লগ্নিতে কী

উৎপাদন ক্ষেত্রকে কারখানা ও যন্ত্রে লগ্নির ভিত্তিতে সংস্থাগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়—

• ক্ষুদ্র: ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

• ছোট: ২৫ লক্ষের বেশি থেকে ৫ কোটি পর্যন্ত।

• মাঝারি: ৫ কোটির বেশি থেকে ১০ কোটির কম।

পরিষেবা ক্ষেত্রকেও সরঞ্জামে (ইকুইপমেন্ট) লগ্নির ভিত্তিতে তিন ভাগে ভাগ করা হয়—

• ক্ষুদ্র: ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

• ছোট: ১০ লক্ষের বেশি থেকে ২ কোটি পর্যন্ত।

• মাঝারি: ২ কোটির বেশি থেকে ৫ কোটির কম।

ভাগ কী ভাবে

যে কোনও ক্ষুদ্র বা ছোট বা মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে প্রকল্প গড়া ও তার উৎপাদন শুরু, মূলত এই দু’ভাগে পুরো বিষয়টিকে ভাগ করা যায়।

প্রকল্প তৈরি

মূলত প্রকল্পের ভাবনা থেকে তার কাঠামো তৈরি, এটিই হল প্রথম ধাপ। এ জন্য বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। সেগুলি হল—

প্রকল্প বাছাই

• যে কোনও ব্যবসা বা শিল্প গড়ার আগে প্রকল্পটি নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করা জরুরি। অর্থাৎ, কী ধরনের শিল্প গড়তে চান বা কোন পণ্যের ব্যবসা করা লক্ষ্য, তা স্পষ্ট ভাবে জানতে হবে। দেখতে হবে তা যেন নিজের দক্ষতার সঙ্গে খাপ খায়।

• প্রকল্পের ভাবনা কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন, পণ্যের প্রকৃতি কী। অর্থাৎ, যে পণ্য তৈরি ও বিক্রি করতে চাইছেন, তা কী ধরনের।

• জানতে হবে তার বাজার কোথায়? এটি বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাজার সম্পর্কে ঠিক ধারণা না-থাকলে পণ্য বিক্রির অনিশ্চয়তা থাকে।

• কী ভাবে সেই পণ্য তৈরি হবে অর্থাৎ তার প্রসেস কী, সে জন্য কোন ধরনের প্রযুক্তির প্রয়োজন, এই সব বিষয়ই আগে থেকে চিহ্নিত করা জরুরি।

• কোথায় কারখানা তৈরি হবে বা যে পরিষেবা দেবেন তার স্থান কোথায়, সে বিষয়টি প্রথমেই ঠিক করতে হবে।

• পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে কাঁচামাল কিনতে ও প্রযুক্তির খরচ কত হবে, বাজার কেমন ও সরকারের তরফে আর্থিক সুবিধা কতটা মিলবে, তা হিসেব করে প্রকল্পটি চূড়ান্ত করা দরকার।

কী ধরনের সংস্থা

• সংস্থা অনেক ধরনের হয়। যেমন, আপনি একাই তা তৈরি করতে পারেন (প্রোপ্রাইটরি) অথবা নিতে পারেন অংশীদার। কোনটা চান, সেই অনুসারে তার ধরন স্থির হবে এবং তা নথিভুক্ত করতে হবে ও ছাড়পত্র নিতে হবে।

• অংশীদার নিলে, কী ধরনের অংশীদারি তা আগে ঠিক করতে হবে। যেমন, যৌথ মালিকানা ভিত্তিক সংস্থা (পার্টনারশিপ) অথবা সীমিত দায়ের অংশীদারি বা লিমিটেড লায়বিলিটি পার্টনারশিপ (এলএলপি)।

রিপোর্ট তৈরি

প্রকল্প চিহ্নিত করা, সংস্থার কাঠামো তৈরির পরে আসবে তার ব্যবসায়িক সম্ভাবনা, লাভজনক হওয়ার সময় ইত্যাদি তথ্য নির্দিষ্ট করে বলার পালা। কারণ, একটা সংস্থা তো আর শুরু থেকেই লাভ দিতে পারে না বা চালুর সময়েই আগামী দিনে তা খুব ভাল করে চলবে, সেটাও বলা সম্ভব নয়। কিন্তু তা-ও প্রথম থেকে যদি একটা আন্দাজ থাকে, তা হলে সেটার উপরে ভিত্তি করে পুঁজির জন্য ব্যাঙ্কের কাছে যাওয়া সহজ হয়। এ জন্য তৈরি করতে হবে প্রকল্পের সবিস্তার রিপোর্ট বা ডিটেল প্রোজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর)।

মনে রাখবেন, এই রিপোর্ট যত আঁটোসাঁটো ও নিখুঁত হবে, প্রকল্পের ব্যবসায়িক সম্ভাবনাকে ততটাই নিশ্চিত ভাবে তুলে ধরা সহজ হবে ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি দফতরের কাছে। বাজারে সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাড়া পাওয়াও সহজ হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনাও ততটা পোক্ত হবে।

প্রকল্পের জমি-বাড়ি

• শিল্প সংস্থাটি বাণিজ্যিক ভবনের মধ্যে হবে, নাকি বাইরে কোথাও, তা ঠিক করতে হবে।

• বাইরে হলে সংস্থার মালিকের নিজের কাছে জমি থাকতে পারে বা তিনি তা কিনতেও পারেন।

• বাণিজ্যিক ভবনের মধ্যে হলে, সেখানে কিছুটা জায়গা কেনা যেতে পারে বা ভাড়াও নেওয়া যেতে পারে।

মনে রাখতে হবে, প্রকল্পের জমি বা জায়গা কেনার জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ দেয় না। তার বন্দোবস্ত হওয়ার পরে প্রকল্পের ঋণের জন্য আবেদন জানানো যায়।

অর্থের জোগান

• সাধারণত শিল্প গড়তে বা ব্যবসা করতে ঋণ নেওয়াই দস্তুর। তা বিভিন্ন জায়গা থেকে নেওয়া যায়— ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, রাজ্যের আর্থিক নিগম বা আর্থিক উন্নয়ন নিগম, ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা ইত্যাদি।

• ঋণ নানা ধরনের হয়। যেমন, দীর্ঘ ও মাঝারি মেয়াদে নেওয়া ধার, স্বল্প মেয়াদি ঋণ ও কার্যকরী মূলধন, ঝুঁকির সুরক্ষা এবং মার্জিনাল মানি।

• ঋণ পেতে নথি-সহ আর্জি জানাতে হয়। এর মধ্যে থাকবে ডিপিআর, পার্টনারশিপ দলিল বা সংস্থার গঠনের চুক্তি, স্থপতির হিসেব মতো কারখানা তৈরির খরচ, জমি বা বাড়ি দখলে থাকার প্রমাণ, পার্টনার বা ডিরেক্টরের আয়কর সার্টিফিকেট ইত্যাদি।

• সব কিছু খতিয়ে দেখে প্রকল্পটি মূল্যায়নের পরে ব্যাঙ্ক তা উপযুক্ত বলে মনে করলে ঋণ অনুমোদন করবে। নয়তো বাতিল করবে। ব্যাঙ্ক ছাড়পত্র দিলে আবেদনকারীকে লিখিত ভাবে তাদের শর্ত মেনে নেওয়ার কথা জানাতে হবে। উভয় পক্ষের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত হলে এর পরে পর্যায়ক্রমে প্রকল্প রূপায়ন অনুযায়ী ঋণ বণ্টন করা হবে।

• অর্থের জোগানের বিকল্প পথও রয়েছে। যেমন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বা উদ্যোগ পুঁজি এবং বেসরকারি আর্থিক সংস্থা। উভয় ক্ষেত্রেই অবশ্য প্রকল্পের প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রয়োজন। বিশেষ করে উদ্যোগ পুঁজির ক্ষেত্রে ডিপিআর এবং প্রকল্পটির খুঁটিনাটির উপর বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। কারণ প্রকল্পটির সম্ভাবনা সঠিক ভাবে তুলে ধরতে না পারলে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সংস্থাগুলি টাকা ঢালতে আগ্রহ দেখায় না।

জমির উন্নয়ন ও বিল্ডিং তৈরি

অনেক সময়েই যে জমিতে কারখানা গড়ে উঠবে, তা নির্মাণ কাজের জন্য উপযুক্ত থাকে না। এ ক্ষেত্রে মাটি পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। জমি নিচু জমি হলে তা ভরাট করার প্রয়োজন পড়ে। এ সবই মাথায় রাখতে হবে। ছাড়পত্র হাতে এলে কারখানা গড়ার কাজে হাত দেওয়া যাবে।

প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি বাছাই

সংস্থায় প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি কোথা থেকে আসবে, তার প্রাথমিক রূপরেখা প্রকল্প নির্বাচনের সময়েই সেরে ফেলতে হয়। পরে ধাপে ধাপে সেই বিষয়গুলি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত করতে হবে। এটা ঠিক যে প্রকল্প বাছাইয়ের সময়েই এই বিষয়গুলি সেরে রাখতে পারলে ভাল। কারণ, এতে দেরি হলে প্রকল্পের পরিকাঠামো নির্মাণেও দেরি হবে। যা সংস্থার উপরে আর্থিক চাপ তৈরি করতে পারে।

বিদ্যুতের সংযোগ

যে কোনও ধরনের ব্যবসা বা শিল্প গড়তে বিদ্যুতের সংযোগ লাগবেই। সেই সংযোগ দু’ধরনের হয়— লো টেনশন এবং হাই টেনশন। প্রকল্পের চাহিদা মতো সংশ্লিষ্ট বণ্টন সংস্থার কাছে আবেদন জানাতে হবে। সংস্থা কারখানার জমি বা প্রকল্পের জায়গা মূল্যায়ণ করে দেখে সংযোগ দেবে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোথাও বিদ্যুতের জোগান ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে আলাদা জেনারেটরের বন্দোবস্ত করতে হবে।

জলের ব্যবস্থা

কারখানায় ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার করতে হলে রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করতে হবে। আর সাধারণ জলের জোগানের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আর্জি জানাতে হবে।

ফোনের সংযোগ

যদি কারখানা বা সংস্থায় ল্যান্ডফোনের প্রয়োজন হয়, তা হলে সে জন্য সংশ্লিষ্ট টেলিকম সংস্থার কাছে আবেদন জানাতে হবে।

কারখানার নকশা চূড়ান্ত করা

স্থপতির নকশার ভিত্তিতে কারখানার নকশা চূড়ান্ত করতে হবে। সেই চূড়ান্ত নকশায় অনুমোদন দেবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক দফতর।

যন্ত্রপাতি কেনা ও কারখানায় বসানো

অনুমোদন পেয়ে কারখানার নির্মাণকাজ চলার মধ্যেই যন্ত্রপাতিও কিনতে হবে। যাতে কাজ শেষ হলে যন্ত্র বসাতে বাড়তি সময় না লাগে।

কাঁচামাল কেনা

কাঁচামালের জোগানের বিষয়টি প্রকল্পের রূপরেখা তৈরির সময়েই প্রাথমিক ভাবে সেরে রাখা হয়েছে। যন্ত্রপাতি বসলে ও ছাড়পত্র মিললে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। তাই তার কিছুটা আগে থেকে কাঁচামালের জোগান নিশ্চিত করে রাখা জরুরি।

কর্মী নিয়োগ

প্রকল্পের ডিপিআরেই বলা থাকে কত জন কর্মী লাগবে। বিভিন্ন ছাড়পত্র পাওয়ার ফাঁকে প্রকল্পের নানা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের দক্ষতার কর্মীর প্রয়োজন। সেই মতো তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়াও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে ভাল। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের আগে এই কাজ সেরে ফেলা দরকার।

মনে রাখবেন, কারখানায় কর্মীর সংখ্যা ১০ জনের কম হলে এবং আলো, পাখা এ সব ছাড়া কারখানার উৎপাদনের জন্য আলাদা বিদ্যুৎ লাগলে অথবা সেই বিদ্যুৎ লাগবে না কিন্তু কর্মী সংখ্যা ২০ বা তার বেশি হলে চিফ ইনস্পেক্টর অব ফ্যাক্টরির কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়।

উৎপাদন পর্ব

এত ক্ষণ আমরা কারখানা কী ভাবে তৈরি করবেন, তার খুঁটিনাটি নিয়ে কথা বললাম। এ বার শুরু হবে আসল কাজ। অর্থাৎ, যে পণ্য তৈরি করার জন্য এই কারখানা তৈরি করা, সেটির উৎপাদন। এর মূলত দু’টি ভাগ।

পরীক্ষামূলক উৎপাদন

পুরোমাত্রায় উৎপাদন শুরুর আগে সব কিছুর মতোই এ ক্ষেত্রেও পরীক্ষামূলক উৎপাদন করতে হবে। কারণ বাস্তবে ঠিক ভাবে রূপায়ণ করা গেল কি না অথবা কোনও ত্রুটির আশঙ্কা থাকল কি না, তা যাচাই করে নেওয়া যায় এই পর্বে। কোনও ধরনের ত্রুটি থাকলে তা শুধরেও নেওয়া যায়।

বাণিজ্যিক উৎপাদন

পরীক্ষামূলক উৎপাদন যদি সফল হয়, একমাত্র তার পরেই বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে। বাস্তবের মাটিতে চাকা গড়াবে

স্বপ্নের প্রকল্পের।

ইউএএম নথিভুক্তি

আগে প্রকল্প চালুর জন্য পর্যায়ক্রমে দু’টি অন্ত্রেপ্রেনর্স মেমোরান্ডাম-এ ছাড়পত্র নিতে হত সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। এখন তার বদলে অনলাইনে উদ্যোগ আধার মেমোরান্ডামের (ইউএএম) আবেদন জানাতে হবে। মনে রাখুন—

• কারখানায় উৎপাদন ও পরিষেবা, উভয় ক্ষেত্রেই ইউএএম নেওয়া বাধ্যতামূলক।

• প্রকল্পের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পরেই তার জন্য আবেদন জানাতে হয়।

• এ জন্য কোনও অর্থ বা নথিপত্র লাগে না। পুরোটাই ‘সেল্ফ ডিক্লারেশনের’ ভিত্তিতে হয়।

জিইএম নথিভুক্তি

সরকারি সংস্থায় পণ্য সরবরাহ করতে চাইলে এই গভর্নমেন্ট ই-মার্কেটপ্লেস (জিইএম) পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করে রাখা যায়। ছোট সংস্থাগুলি এ ভাবে নিজেদের পণ্য বেচতে পারে।

এমএসএমই ফেসিলিটেশন সেন্টার (এমএফসি)

• সরকারি দফতর থেকেই ব্যবসা বা কারখানা গড়ার প্রয়োজনীয় তথ্য জানাতে তৈরি হয়েছে এই কেন্দ্রগুলি।

• প্রতি জেলার শিল্প কেন্দ্রের (ডিস্ট্রিক্ট ইন্ডাস্ট্রিজ় সেন্টার বা ডিআইসি) মধ্যে আলাদা করে এই এমএফসি তৈরি করা হয়েছে। কলকাতায় সেটি রয়েছে ক্যামাক স্ট্রিটে ছোট, মাঝারি শিল্প দফতরের ভবনে।

ক্ষুদ্র শিল্পোন্নয়ন নিগম

• নিগমের শিল্প বা বাণিজ্যিক তালুকে ছোট শিল্পের জন্য জায়গা মেলে।

• সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তা লিজে দেয় নিগম। তবে যে উদ্যোগপতি সেখানে জমি বা জায়গার আবেদন জানাতে আগ্রহী, তাঁর সংশ্লিষ্ট শিল্প সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে ভাল। যেমন, কেউ কোনও শিল্পোৎপাদন সংস্থায় যুক্ত থাকলে, তা ছেড়ে সেই একই ক্ষেত্রে নিজের সংস্থা গড়তে চাইলে অগ্রাধিকার পাবেন।

• যোগ্যতার শর্ত পূরণ করলে তালুকে জমি বা জায়গা পাওয়া যেতে পারে।

• সে ক্ষেত্রে রাস্তা, বিদ্যুৎ ও জলের সংযোগের মতো পরিকাঠামোর জোগান দেবে নিগমই।

রয়েছে পোর্টালও

শিল্প চালুর খবর পেতে আনা হয়েছে ওয়েবসাইটও। এই দুই পোর্টালে যাবতীয় তথ্যের হদিস পাবেন নতুন উদ্যোগপতিরা। সেগুলি হল—

• www.myenterprisewb.in

• www.silpasathi.in

• বিভিন্ন আইন ও তার বিধি কী, তা সরল ভাবে জানার সুযোগ মিলবে এই পোর্টালগুলিতে।

• কোথায় কী আবেদন করতে হবে, কত দিনের মধ্যে সাধারণত তাতে সাড়া মেলার কথা, তার সময়সীমা জানা যাবে।

• জেলার কোথায় এমএফসি রয়েছে, তার ঠিকানাও জানা যাবে।

• মাইএন্ট্রাপ্রাইজ পোর্টালে প্রকল্পের প্রাথমিক তথ্য দিলে কি কি ছাড়পত্র প্রয়োজন, কোথায় আবেদন করতে হবে, তার আভাস মিলবে।

• শিল্পসাথী পোর্টালে অনলাইনে আবেদনে সুযোগও মিলবে।

তথ্যসূত্র: রাজ্যের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর, ক্ষুদ্র শিল্পোন্নয়ন নিগম, ফ্যাক‌সি ও ফসমি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement