—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বিপুল কর্মসংস্থানের সূ্ত্র দেশের ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্প (এমএসএমই)। তা সত্ত্বেও ব্যবসা চালানোর জন্য এই শিল্পে পুঁজির জোগানে কোনও নিশ্চয়তা নেই বলে অভিযোগ তাদের বড় অংশের। মঙ্গলবার, ২৭ জুন বিশ্ব এমএসএমই দিবস উপলক্ষ্যে বণিকসভা বেঙ্গল চেম্বার আয়োজিত এক সভায় রাজ্য সরকারে সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রধান সচিব রাজেশ পাণ্ডের দাবি, বড় শিল্পে যেখানে প্রতি এক কোটি টাকা লগ্নিতে ৫-১০ জনের প্রত্যক্ষ কাজের সুযোগ তৈরি হয়, সেখানে এমএসএমই-তে হয় ২৫-৩০ জনের। অথচ এখানে সহজে ধার পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। তিনি জানান, নীতি আয়োগের রিপোর্ট অনুযায়ী সারা দেশে এই সংস্থাগুলির প্রায় ২৪ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের প্রয়োজন। এ রাজ্যেও ঋণ বিলি বাড়াতে স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটি এবং বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে কথা বলছেন তাঁরা।
সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, বিশেষত ক্ষুদ্র ও ছোট সংস্থা ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মতো বন্ধক দিতে না পারায় অনেক সময়ে ঋণ পায় না। একাংশ তখন ঝুঁকিপূর্ণ অসংগঠিত ঋণদাতার কাছে হাত পাততে বাধ্য হয়। এই সমস্যা মেটাতেই ২০০০ সালে তাদের জন্য বন্ধকহীন ঋণ নিশ্চিত করতে সিডবি-র সঙ্গে মিলে বিশেষ গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা প্রকল্প (সিজিটিএমএসই, যাতে ৮৫% গ্যারান্টি মেলে) চালু করে কেন্দ্রীয় এমএসএমই মন্ত্রক। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে এমএসএমই-র প্রসারে সিজিটিএমএসই-র সঙ্গে বাকি ১৫% ঋণের গ্যারান্টি (পশ্চিমবঙ্গ ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড) দেওয়ার জন্য চুক্তি সই করে রাজ্য সরকার। এ দিন রাজেশ জানান, গত এপ্রিল থেকে এখনও পর্যন্ত প্রকল্পটিতে প্রায় ৭০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। রাজ্যের লক্ষ্য, আগামী পাঁচ বছরের প্রতি বছরে ২ লক্ষ উদ্যোগকে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাহায্য করা। এ দিন সভায় ও পরে রাজেশ জানান, এখনও পর্যন্ত পাওয়া আবেদনের মধ্যে যোগ্যতা যাচাই করে প্রায় ৫০ হাজার আবেদনকে তাঁর দফতর উপযুক্ত হিসাবে চিহ্নিত করে ব্যাঙ্কের কাছে পাঠিয়েছে। তার মধ্যে ১৩ হাজার আবেদনের ঋণের প্রস্তাবে প্রাথমিক ভাবে সায় দিয়েছে ব্যাঙ্ক। এমএসএমই এবং রফতানিকারীদের ব্যবসার প্রসারে উপদেষ্টা সংস্থা ডান অ্যান্ড ব্র্যাডস্ট্রিটের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে রাজ্য সরকার।
রাজেশের দাবি, রাজ্য যেমন নানা ভাবে সহজে ব্যবসার পরিবেশ গড়তে নিয়মকানুন সরল করছে, তেমনই শিল্পমহলকেও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে জোর দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সহায়তারও বার্তা দেন তিনি। বস্তুত, ভি (ভোডাফোন আইডিয়া) বিজ়নেস-ও এ দিন জানিয়েছে, দেশের ১৬টি এমএসএমই ক্ষেত্রে করা এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অনেক সংস্থারই ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। যা পূরণ করতে পারলে তাদের ব্যবসার আরও প্রসার ঘটবে।
অন্য দিকে, সংবাদ সংস্থার খবর, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় অর্থনীতির জায়গা পেতে এমএসএমই-র অবদান বৃদ্ধির পক্ষে এ দিন সওয়াল করেন কেন্দ্রীয় এমএসএমই মন্ত্রী নারয়ণ রাণে। পাশাপাশি দেশে কতগুলি ক্ষুদ্র সংস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে তা বুঝতে সমীক্ষা করার বার্তাও দেন তিনি।
অন্য দিকে, নতুন উদ্যোগকে (স্টার্ট আপ) উৎসাহিত করতে ফের রাজ্যের স্টার্ট আপ নীতি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। আগেরটি ২০১৩-২০২৮ পর্যন্ত কার্যকর। রাজেশ এ দিন জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের (আইআইটি খড়্গপুর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইএম কলকাতা ইত্যাদি) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, পঞ্চায়েত ভোট মিটলে মাস দুয়েকের মধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে।