গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের হাত ধরে চালু হয়েছিল ‘সবার ঘরে আলো’ প্রকল্প। আর এ বার রাজ্যে চালু হতে চলেছে ‘হাসির আলো’।
সোমবার বাজেট বক্তৃতায় রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অংশে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলির জন্য ইতিমধ্যেই কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের মধ্যেও এমন অনেক পরিবার রয়েছে, যাদের সামান্য দামে বিদ্যুৎ কেনারও ক্ষমতাটুকু পর্যন্ত নেই। সেই সমস্ত পরিবারের জন্যই এ বার ‘হাসির আলো’ আনা হল বলে দাবি করেছেন অমিতবাবু। যেখানে সাধারণ ভাবে একটি ঘরে আলো-পাখার ব্যবহার যতটা না-করলেই নয়, মোটামুটি ততটা পরিষেবাই পাওয়া যাবে নিখরচায়।
অনেকেই বলছেন, দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আপ সরকারের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ ছিল এই নিখরচার বিদ্যুৎ। যেখানে মাসে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিনামূল্যে পাওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়। এ দিন ‘হাসির আলো’ ঘোষণার পরে তাই সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের দাবি, কোথাও কি পাওয়া যাচ্ছে সেই কেজরীওয়াল সরকারেরই ছাপ! বিশেষ করে আগামী বছরই যেখানে এ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার আগে এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের এটাই শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। যে কারণে গোটা রাজ্যেরই এ দিন চোখ ছিল অমিতবাবুর ঘোষণার দিকে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী, ‘হাসির আলো’ প্রকল্প মারফত গ্রাম ও শহরাঞ্চলের অত্যন্ত গরিব মানুষদের নিখরচায় তিন মাসে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়া শুরু হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। অর্থাৎ যে সমস্ত পরিবারের তিন মাসে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ খরচ হয়, তাঁরাই ওই প্রকল্পের আওতায় আসতে পারবেন। মূলত যাঁদের ‘লাইফ লাইন কনজিউমার’ বলা হয়। রাজ্যের প্রায় ৩৫ লক্ষ পরিবার এই সুবিধা পাবে বলে জানান তিনি। প্রকল্পটিতে আগামী অর্থবর্ষের (২০২০-২১) জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, তিন মাসে ৭৫ ইউনিট অর্থাৎ মাসে ২৫ ইউনিট করে বিদ্যুৎ খরচ ধরলে দিনে গড়ে ১০ ঘণ্টা একটি ৬০ ওয়াটের পাখা ও ২০ ওয়াটের আলো জ্বালানো যেতে পারে। তাতে দিনে ০.৮ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হবে। ৩০ দিনে মাস ধরলে খরচ হবে ২৪-২৫ ইউনিট। ৬০ ওয়াটের পাখার সঙ্গে ৪০ ওয়াটের টিউবলাইট জ্বালালে অঙ্কের নিয়মে ১০ ঘণ্টার একটু কম সময় জ্বালাতে হবে।
এখন ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ যাঁরা কেনেন, তাঁদের ইউনিট পিছু ৩ টাকা ৩৭ পয়সা করে মাসুল দিতে হয়। নতুন প্রকল্প কার্যকর হলে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত তাঁদের বিল মেটাতে হবে না। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রের দাবি, এ ব্যাপারে রাজ্যের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হাতে আসার পরে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তবে কেউ যদি তিন মাসে ৭৫ ইউনিটের বেশি খরচ করেন, তখন তাঁরা মাসুলের আওতায় চলে আসবেন। সূত্রের খবর, সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনার জন্য দাম দিতে হবে ৫ টাকা ৫৬ পয়সা।
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য বিলের বোঝা না-বাড়িয়ে মানুষকে উন্নত পরিষেবা দেওয়া। হাসির আলো প্রকল্পে জঙ্গলমহল, উত্তরবঙ্গের পাহাড়-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলিকে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে কোনও চিন্তা করতে হবে না।’’
বিদ্যুৎ বিল কমানোর দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে ‘অ্যাবেকা’। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যোৎ চৌধুরীর দাবি, সরকারের এই পদক্ষেপ ইতিবাচক। কিন্তু সাধারণ গ্রাহকদের এখনও অনেক বেশি বিদ্যুৎ মাসুল দিতে হচ্ছে। যা কমানো প্রয়োজন।