—ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি ইউনেস্কোর বিচারে কলকাতার দুর্গাপুজো আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে রাজ্যের দাবি, এই উৎসব শুধু বাঙালির সংস্কৃতির অঙ্গ নয়, আর্থিক কর্মকাণ্ডেরও বড় সূত্র। সে কারণে লগ্নি টানতে এ বার এই দু’টি দিককেই দেশ-বিদেশের শিল্পমহলের সামনে তুলে ধরতে চায় তারা। বুধবার বণিকসভা সিআইআইয়ের সভায় রাজ্যের শিল্প সচিব তথা রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের এমডি বন্দনা যাদব জানান, এপ্রিলে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজ়নেস সামিটে (বিজিবিএস) কলকাতা ও বাংলার দুর্গোৎসবকে ‘শো-কেস’ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, লগ্নি টানতে রাজ্যের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং সম্ভাবনার কথাও জানান বন্দনা এবং বিভিন্ন দফতরের শীর্ষ আমলারা।
অতিমারির জন্য গত দু’বছর বিজিবিএসের আসর বসেনি। তবে তৃতীয় বার ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট বার্তা, এ বারে কর্মসংস্থানকে পাখির চোখ করছেন তাঁরা। সম্প্রতি নবান্নে শিল্প-কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি জানিয়েছিলেন, বিজিবিএসের আগে কয়েক জন করে শিল্প-কর্তার কয়েকটি গোষ্ঠী বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে এ রাজ্যের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবেন। তার আগে গত ডিসেম্বরে কলকাতার দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার পরে তিনি বলেছিলেন, বিশ্বের সমস্ত বাঙালির কাছে এই পুজো উৎসবের থেকেও অনেক বেশি কিছু।
এ দিন লগ্নি টানার বার্তা দিতে গিয়ে বন্দনা দাবি করেন, রাজ্য সরকার সামাজিক উন্নয়নে অনন্য মডেল গড়েছে। সেই ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে রাজ্যের আর্থিক উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে এ বার তাঁদের লগ্নি-বার্তার অন্যতম অংশ দুর্গাপুজো। উৎসবের পাশাপাশি এই পুজোকে ঘিরে যে আর্থিক কর্মকাণ্ড চলে, তা-ও তুলে ধরা হবে ২০ এপ্রিল সম্মেলনের প্রথম দিনে। দ্বিতীয় দিনে পরিকাঠামো, মূলত ছোট-মাঝারি শিল্পকে ঘিরে শিল্পায়ন, বাণিজ্য (ট্রেড), খনি শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি ও সহায়ক পরিষেবা, কৃষি ভিত্তিক ব্যবসার মতো ক্ষেত্রে লগ্নির সম্ভাবনা নিয়ে পৃথক আলোচনা হবে।
রাজ্যের শিল্প ক্ষেত্রে লাল ফিতের ফাঁস আলগা করারও দাবি করেছেন বন্দনা। তিনি জানান, শর্ত পূরণের ৪৪টি নিয়ম কমানো হয়েছে। তবে এই ধরনের প্রশাসনিক সংস্কারের খবর যে সকলে ঠিক মতো জানতে পারেন না, সেই খামতির কথাও তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। জানিয়েছেন, বিজিবিএসে সবটাই তুলে ধরা হবে। শিল্পমহলেরও একাংশের দাবি ছিল, বিজিবিএসের পরে সব কিছু ঠিক মতো পর্যালোচনা করা হয় না। প্রশ্ন ওঠে বিজিবিএসের লগ্নি নিয়েও। লগ্নির প্রশ্ন এড়ালেও শিল্পমহলের কাছে বন্দনার আর্জি, ওই সম্মেলনেই গন্তব্য যেন শেষ না হয়।
এ দিনের সভায় রাজ্যের শ্রমসচিব বরুণ রায়ের ইঙ্গিত, শীঘ্রই রাজ্যে নতুন শ্রম বিধি (লেবার কোড) চূড়ান্ত হবে। তবে তিনি জানান, শ্রমিকদের পিএফ, ইএসআইয়ের মতো বিধিবদ্ধ প্রাপ্য বাবদ শিল্পমহলের একাংশের বকেয়ার পরিমাণ কয়েকশো কোটি টাকায় ঠেকেছে। এর ফলে অনেক সময়েই নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব আটকে যাচ্ছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে লগ্নির সম্ভাবনা তুলে ধরেন।