ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছোড়া শুল্ক-টর্পেডোয় তলিয়ে গেল বিশ্ব বাজার। ইউরোপ ও এশিয়ার প্রায় সব দেশের স্টক এক্সচেঞ্জে এ দিন উদ্বিগ্ন ব্রোকারের মুখ। ‘রক্ত ঝরল’ ভারতের বাজারেও। ৪১০ পয়েন্ট খোয়াল সেনসেক্স। ১১ অক্টোবরের পরে এই প্রথম ১০ হাজারের নীচে নামল এনএসই-র সূচক নিফ্টিও।
তাদের উপর ‘চাপিয়ে দেওয়া’ এই বাণিজ্য যুদ্ধের শেষ দেখে ছাড়ার হুমকি এ দিন ফের দিয়েছে বেজিংও। সম্প্রতি হোয়াইট হাউস যে ভাষায় হুমকি দিয়েছিল, এ দিন ঠিক সেই বয়ানেই পাল্টা দিয়েছে তারা। বলেছে, ছোট লাভ দেখতে গিয়ে সম্ভবত বড় ক্ষতি নজর এড়িয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটনের। অনেকের আশঙ্কা, তবে কি আমেরিকাকে পাল্টা চাপে ফেলতে নিজেদের হাতে থাকা বিপুল সংখ্যক মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের একটা বড় অংশ বিক্রির হুমকি দিচ্ছে চিন?
তার উপর এ দিনই হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে আপাতত শুল্ক গুনতে হবে না আর্জেন্তিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলিকে। অনেকে বলছেন, এতে আরও স্পষ্ট, আমেরিকার আসল নিশানা চিনই। তাঁদের মতে, এতে লড়াই আরও তেতো হওয়ার সম্ভাবনা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবশ্য দাবি, চিনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পোক্ত। তাতে টোল চায় না তারা। তাই বেজিংয়ের জন্য আলোচনার দরজা এখনও খোলা বলেই ইঙ্গিত তাদের তরফে। কিন্তু শুল্কের খোঁচায় ড্রাগনের দেশ চিন যে ভাবে ফুঁসছে, তাতে কথা কতটা হবে, সন্দেহ থাকছে তা নিয়েই।
ফুঁসছে ড্রাগন
• চিনা অর্থ মন্ত্রকের বিবৃতি, তারা বাণিজ্য যুদ্ধ চায় না ঠিকই। কিন্তু শেষমেশ তা হলে, লড়তে পিছপা নয়। একই সঙ্গে আমেরিকাকে হুঁশিয়ারি খাদের কিনারা থেকে ফিরে আসার জন্যও।
• ট্রাম্প অনড় থাকলে, ৩০০ কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যে চড়া শুল্ক বসাতে কোমর বাঁধছে বেজিং। তালিকায় রয়েছে শুয়োরের মাংস, ওয়াইন, ফল, বাদাম, ইস্পাতের টিউবের মতো ১২৮টি পণ্য।
• চিনের কটাক্ষ, অবাধ বাণিজ্যে তো দেওয়াল তুলছে ট্রাম্পের আমেরিকাই! একই সঙ্গে হুমকি, ছোট লাভ দেখতে গিয়ে সম্ভবত বড় ক্ষতি চোখে পড়ছে না ওয়াশিংটনের।
ট্রাম্পের টর্পেডো
• ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে যথাক্রমে ২৫ শতাংশ ও ১০ শতাংশ শুল্ক আগেই বসিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
• তার উপর বৃহস্পতিবার আলাদা করে চড়া শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করেছেন ৬,০০০ কোটি ডলারের চিনা পণ্যে।
• অভিযোগ, অবাধ বাণিজ্যের নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করে না চিন। চাপ খাটিয়ে ও নিয়ম ভেঙে হাতিয়ে নেয় সে দেশে ব্যবসা করা মার্কিন সংস্থার মেধাস্বত্ব (পেটেন্ট)।
• স্থানীয় সংস্থাকে কোনও রকম বাধা দেয় না মেধাস্বত্ব ভেঙে পণ্য তৈরিতে।
• সঙ্গে রয়েছে উঁচু শুল্ক-প্রাচীরও।
• এই সমস্ত কারণেই চিনের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি অন্তত ৩৭,০০০ কোটি ডলার। যার মাসুল গুনে ২০ লক্ষ কাজের সুযোগ তৈরিই হয় না মার্কিন মুলুকে।
উদ্বেগের ছবি
• বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কায় কাঁপুনি প্রায় সারা বিশ্বের শেয়ার বাজারে।
• পড়েছে ইউরোপ ও এশিয়ার প্রায় সমস্ত দেশের বাজার।
• ‘রক্ত ঝরেছে’ ভারতেও। সেনসেক্স পড়েছে ৪১০ পয়েন্ট। ১০ হাজার অঙ্কের নীচে নেমেছে নিফ্টিও।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রঘুরাম রাজনের হুঁশিয়ারি, এই যুদ্ধ ঘোরালো হলে, শ্লথ হবে বিশ্ব অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর গতি।