সূচক ফের সাতাশ হাজারে। পুজোর মুখে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে লগ্নিকারীদের মনে। শিল্পঋণে সুদ কমতে শুরু করায় বদল আসছে বিনিয়োগের দুনিয়ায়। অর্থনীতির দিক থেকে যে-সব খবর পাওয়া যাচ্ছে তা থেকে বলা যায়, এই মুহূর্তে ভারত অনেক দেশের থেকেই এগিয়ে। এ অবস্থায় বিদেশি আর্থিক সংস্থার লগ্নি হঠাৎ করে ফিরে যাবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ সুদ বাড়ালেও তার ধাক্কা হয়তো হবে সাময়িক।
চলতি আর্থিক বছরে ভারত কতটা এগিয়েছে, তার কিছুটা আঁচ পাওয়া যাবে এ সপ্তাহ থেকে, যখন বিভিন্ন সংস্থা ষাণ্মাসিক ফলাফল প্রকাশ করতে শুরু করবে। কয়েকটি রাজ্যে বৃষ্টির ঘাটতি অবশ্য প্রভাব ফেলবে কিছু সংস্থার ফলাফলে। গোটা বিশ্বের তুলনায় ভারতের অবস্থান মন্দ নয়। অর্থাৎ কোম্পানি ফলাফলে কিছুটা উন্নতি দেখা দিলে সূচকের কিন্তু আরও উপরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
গত ছ’মাস ধরে বেশ অস্থির ছিল দুই শেয়ার সূচক সেনসেক্স ও নিফ্টি। ভারতে সুদ কমার আশা এবং অন্য দিকে ফেড রেট বাড়ার আতঙ্ক সূচককে তুলেছে এবং ফেলেছে। এ ছাড়া ছিল গ্রিস এবং চিনকে নিয়ে আতঙ্ক। ত্রিশ হাজার দেখিয়ে সেনসেক্স বারবার নেমে এসেছে ২৫ হাজারের আশেপাশে। এই অস্থির বাজারে যাঁরা লগ্নি করেছেন, তাঁদের অনেকেই এখনও তেমন লাভের মুখ দেখেননি। তবে নামী শেয়ারে লগ্নি করে থাকলে একটু বড় মেয়াদে তা ভাল ফল দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রথম ছ’মাসে ভারতের পরোক্ষ কর সংগ্রহ ৩৫ শতাংশের আশেপাশে বেড়ে ওঠা ইঙ্গিত দিচ্ছে, শিল্প আগের তুলনায় ভাল করছে। সুদ কমার প্রভাব হয়তো আরও উজ্জীবিত করবে শিল্পকে। সুদ কমায় বিক্রি বাড়বে গাড়ি ও বাড়ি শিল্পে। পাশাপাশি, অনেক পণ্যের বিক্রি বাড়বে এই উৎসবের মরসুমে। অর্থাৎ আশা করা যায়, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সংস্থা ফলাফলে উন্নতি ঘটবে।
আর এই সব কথা মাথায় রেখে মনে করা হচ্ছে, ২০১৬-র গোড়া থেকেই বাজার চাঙ্গা থাকবে। অর্থাৎ পতনে ভাল শেয়ার কেনা যেতেই পারে। একই কথা প্রযোজ্য মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেও। এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি করে গত ছ’মাসে তেমন লাভের মুখ দেখেননি লগ্নিকারীরা। তবে অধৈর্য হওয়ার কারণ নেই। ফান্ডে সব সময়ে লগ্নি করতে হয় বড় মেয়াদে। আরও কয়েকটি মাস গেলেই দেখবেন, সব লোকসান পুষিয়ে লাভের খাতায় ফিরছে আপনার লগ্নি। যাঁরা সুদ কমার আগে ঋণপত্র-নির্ভর ফান্ডে (ডেট ফান্ড) লগ্নি করেছেন, তাঁরা অবশ্যই লক্ষ করেছেন যে, সুদ কমার কারণে প্রকল্পগুলির ন্যাভ হঠাৎই বেড়েছে। বেড়েছে বিভিন্ন বন্ডের দামও।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর, এই তিন মাসে মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পে সম্পদের পরিমাণ ৭% বেড়ে পৌঁছেছে ১৩.১৬ লক্ষ কোটি টাকায়। শেয়ার বাজারের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে বেশি লগ্নি এসেছে ইকুইটি-নির্ভর প্রকল্পে। ভারতে এখন ফান্ড হাউস ৪৪টি। ১.৭১ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে এইচডিএফসি মিউচুয়াল ফান্ড শীর্ষে। এর পরে আইসিআইসিআই প্রুডেনশিয়াল এম এফ। এদের পরিচালনায় আছে ১.৬৫ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ। ভারতের বাজারে নথিবদ্ধ সব শেয়ারের মোট বাজার দর ১০০ লক্ষ কোটির কিছু কম। ফান্ডের টাকা শেয়ার বাজার ছাড়াও ঋণপত্র ও মানি মার্কেটে লগ্নি করা হয়।
বাজারে যে টাকার জোগানে ঘাটতি নেই, তার প্রমাণ দুই করমুক্ত বন্ড ইস্যুতে আশাতীত সাড়া পাওয়া। শেয়ার বাজার চাঙ্গা থাকলে বেশ কিছু নতুন ইকুইটি ইস্যুকে বাজারে আসতে দেখব আগামী ক’মাসে। ব্যাঙ্ক জমায় সুদ বেশ খানিকটা কমে আসায় অনেকে একটু বেশি আয়ের জন্য ঝুঁকি নিয়েও শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের জগতে পা রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে। ছোট ছোট আকারে লগ্নি আসা বাজারের স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভাল।
ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে সুদ কমলে অবশ্য ভয় থাকবে নতুন করে ও নতুন রূপে পন্জি প্রকল্প গজিয়ে ওঠার। এ ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ থাকতে হবে সরকার, সেবি এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। ডাকঘরে এখনও সুদ কমানো হয়নি। যাঁরা কম করের আওতায় পড়েন, তাঁদের কাছে প্রকল্পগুলি যথেষ্ট আকর্ষণীয়। বিশেষত সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম, যেখানে এই বাজারেও সুদ দেওয়া হচ্ছে ৯.৩% হারে। যাঁরা উঁচু করের আওতায় পড়েন, তাঁরা ঝুঁকতে পারেন বন্ড ফান্ডের দিকে। এতে প্রায় করমুক্ত (তিন বছরের বেশি ধরে রাখলে) ৮ শতাংশের আশেপাশে আয় বা বৃদ্ধির আশা করা যেতে পারে। ব্যাঙ্কে সুদ আরও কমলে মূলধনী লাভেরও সম্ভাবনা। ডাকঘরের কিছু প্রকল্পের আওতায় খাতা খোলা যায় ব্যাঙ্কেও। লগ্নিকারীদের এখন বাজারের সামগ্রিক চরিত্র বিচার করে তবেই লগ্নি করতে হবে। প্রয়োজনে বেরিয়ে আসতে হবে গতানুগতিক রাস্তা থেকে।