যে ইউপিএ জমানাকে নীতিপঙ্গুত্বের জন্য বারবার আক্রমণ করেছে মোদী সরকার, সেই মনমোহন আমলের সঙ্গেই আর্থিক বৃদ্ধির নিরিখে পিছিয়ে পড়ায় ইতিমধ্যে অস্বস্তিতে তারা। এ বার কেন্দ্রের কপালে ভাঁজ আরও বাড়াতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট। যেখানে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবর্ষে (২০১৮-১৯) খরিফ শস্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) বৃদ্ধির হার গত ৫ বছরের গড়ের তুলনায় বেশি ঠিকই। কিন্তু তা মনমোহন জমানায় ২০০৮-০৯ ও ২০১২-১৩ সালের তুলনায় ‘অনেকটাই কম’।
গত লোকসভা ভোটের আগে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড় করানোর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। তা না হওয়ার কারণ হিসেবে দুষেছিলেন ইউপিএ জমানার নীতিপঙ্গুত্বকে। জোর দেন বৃদ্ধি ৮-১০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ায়। প্রতিশ্রুতি দেন কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করারও। সে জন্য এমএসপি-কে হাতিয়ার করার কথাও ঘোষণা করেছিলেন।
অথচ হিসেব বলছে ১০% বৃদ্ধি দূর অস্ত্। ৮ শতাংশের গণ্ডি টপকাতেই হিমসিম খাচ্ছে কেন্দ্র। তার উপরে চিন্তা বাড়িয়েছে এমএসপি এবং ঋণ মকুব নিয়ে কৃষকদের ক্ষোভ। যার জেরে মন্দসৌরে বিক্ষোভ থেকে শুরু করে মধ্যরাতে মুম্বই দখল করেছেন চাষিরা। এমএসপি বাড়লেও, কৃষকেরা বলছেন তা যথেষ্ট নয়। বিরোধীদের অভিযোগ, স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ মানা হয়নি। গত সপ্তাহে গাঁধী জয়ন্তীর দিন দিল্লিযাত্রায় চাষিদের উপরে পুলিশের লাঠিচার্জের ছবি এখনও টাটকা।
তার উপরে গ্রামে মজুরি বৃদ্ধির হারও আশাব্যঞ্জক নয় বলে জানিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তাদের দাবি, জুনে যেখানে গ্রামে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ছিল ৪.৯%। সেখানেই কৃষি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ৩.৯%। আর বাকি শ্রমিকদের ৪%।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চাষিদের ক্ষোভের আগুন ভালই টের পাচ্ছে মোদী সরকার। তার উপরে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়— এই তিনটি বিজেপি শাসিত রাজ্যেই সামনে ভোট। সেখানে গত দু’বছরে ফসলের দাম পড়ে যাওয়ায় সমস্যায় চাষিরা। এর মধ্যে বৃদ্ধির হার নিয়ে বিতর্কের মধ্যে ফের ইউপিএ জমানার সঙ্গে তুলনা চলে আসা মোদী সরকারের অস্বস্তি আরও বাড়াবে বলেই তাঁদের ধারণা।