Nirmala Sitharaman

বন্ড-শেয়ারে লগ্নি করতে বলে সঞ্চয়ে উদ্বেগ বাড়ালেন নির্মলা

দেশের অর্থনীতির হাল কত দ্রুত ফিরবে? এ প্রশ্নের কোনও জবাবই দেননি নির্মলা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৫৭
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে নির্মলা সীতারামন। রবিবার কলকাতায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

বাজেটে প্রস্তাবিত করছাড়ের সুবিধা ছাড়া কম হারে আয়করের নতুন নিয়ম নিয়ে ধন্দ ছিলই। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছিল আশঙ্কা, কেন্দ্র কি তা হলে পরোক্ষে স্বল্প সঞ্চয় বা ব্যাঙ্কে টাকা জমানোর অভ্যাসকে নিরুৎসাহিত করে আমজনতাকে শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ডের মতো ঝুঁকিপূর্ণ লগ্নির দিকে ঠেলতে চায়! কার্যত সেই আশঙ্কাই আরও উস্কে দিয়ে রবিবার কলকাতায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বললেন, ‘‘আগের মতো ডাকঘর, ব্যাঙ্ক, ফিক্সড ডিপোজ়িটেই যে শুধু টাকা জমাতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা তো নেই! বরং বন্ড বা শেয়ার বাজারে টাকা রেখেও একই বা বেশি আয় করতে পারেন কেউ।’’

Advertisement

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দাবি, কম কর দেওয়ার নতুন নিয়ম এনে আসলে সাধারণ মানুষের আর্থিক স্বাধীনতা আরও বাড়িয়েছে কেন্দ্র। চাইলে করদাতারা বাড়তি টাকা ইচ্ছেমতো খরচ করতে পারেন, আবার চাইলে জমাতে পারেন পছন্দের সঞ্চয় প্রকল্পে। অর্থমন্ত্রীর এই যুক্তি শোনার পরেই উঠেছে পাল্টা প্রশ্ন, শেয়ার বাজার সকলের জন্য কতটা সুরক্ষিত? ক’জনই বা সেই সুযোগ নিতে পারেন? প্রবীণ নাগরিকদের মতো সুদ নির্ভর মানুষ তা হলে কোথায় যাবেন?

বাজেট পেশের পরে শিল্পমহল, ব্যবসায়ী, করদাতাদের মন বুঝতে বিভিন্ন শহরে ঘুরছেন অর্থমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। মুম্বই ও চেন্নাইয়ের পরে এ দিন ছিল কলকাতার পালা। সকাল থেকে দু’দফায় সকলের সঙ্গে কথা বলেন নির্মলা। সেখানে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক দেবাশিস ভট্টাচার্যর আশঙ্কা, নতুন আয়কর বিধিতে করছাড় না-থাকায় স্বাস্থ্যবিমার মতো প্রকল্প কিনতে করদাতা নিরুৎসাহিত হলে তাঁর স্বাস্থ্যখাতে খরচ বাড়বে। তাঁদের সেই খরচে ছাড়ের আর্জি জানান তিনি।

Advertisement

আরও পড়ুন: দুঃখিত, তবে জরুরি ছিল লম্বা বাজেট

অর্থমন্ত্রীর যুক্তি ছিল, নতুন নিয়মে করদাতার হাতে বাড়তি টাকা আসবে। আর কেনই বা ধরে নেওয়া হবে সকলকেই স্বাস্থ্যবিমা কিনতে হবে? বরং তাঁর প্রস্তাব, এর বদলে কেউ আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পেরও তো সুযোগ নিতে পারেন!

পরে সাংবাদিক বৈঠকেও প্রশ্ন ওঠে, আয়করের নতুন নিয়মে সঞ্চয় ও লগ্নি ধাক্কা খাবে কি না? নির্মলার কিন্তু দাবি, নতুন নিয়মে বরং লগ্নির পথ আরও বেশি খুলছে। তিনি বলেন, ‘‘বন্ড বা শেয়ার বাজারেও লগ্নি করা যায়। কোথায় টাকা রাখবেন, তা করদাতাই ঠিক করুন।’’ প্রবীণদের জন্য কেন্দ্র অনেক প্রকল্প নিয়েছে বলেও দাবি তাঁর।

আরও পড়ুন: সিএএ-প্রতিবাদে হাতিয়ার ব্রাজিলের ব্যঙ্গচিত্রও

আইএসআইয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অভিরূপ সরকারের বক্তব্য, সকলেই সঞ্চিত টাকা সুরক্ষিত দেখতে চান। কিন্তু শেয়ার বা ফান্ডের লগ্নিতে রিটার্ন ঝুঁকিপূর্ণ। শহর বা শহরতলির বাইরে এগুলির প্রভাব এখনও কম। কম সচেতনতাও। তাঁর মতে, কর কমলে বাড়তি অর্থ দিয়ে যে কেনাকাটা বাড়বে তার নিশ্চয়তা নেই। পাশাপাশি সেই টাকা বাজারে খাটালে তা কতটা সুরক্ষিত থাকবে, থাকছে সেই প্রশ্নও।’’

যাঁরা এখন জীবনবিমা বা বাড়ির ঋণ নিয়ে করছাড়ের সুযোগ নেন, ভবিষ্যতে আয়করের পুরনো নিয়ম উঠে গেলে তাঁদের কী হবে, সংশয় রয়েছে তা নিয়েও। নির্মলার অবশ্য বক্তব্য, এখনই এমন কিছু তাঁরা ভাবছেন না। সে জন্য দুটি নিয়মই চালু রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, যাঁরা সেই সুবিধা নিচ্ছেন, ভবিষ্যতেও তাঁরা যাতে তা থেকে বঞ্চিত না হন, খেয়াল রাখবে কেন্দ্র।

দেশের অর্থনীতির হাল কত দ্রুত ফিরবে, তা নিয়েও কিছুটা সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। এ নিয়ে আশ্বাস তো পরের কথা, এ প্রশ্নের কোনও জবাবই এ দিন দেননি নির্মলা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement