Budget 2020

অর্থ হীন: রোগ কবুল না-করে সুস্বাস্থ্যের আশ্বাস

গ্রামের মানুষের হাতে টাকা জোগানো দরকার। কী দাওয়াই রয়েছে? কিছুই নেই।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:১৭
Share:

বাজেট পেশের পরে সাংবাদিক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: প্রেম সিংহ

অর্থনীতির অবস্থা কত খারাপ? একটি শব্দও নেই।

Advertisement

বাজারে চাহিদা নেই। গ্রামের মানুষের হাতে টাকা জোগানো দরকার। কী দাওয়াই রয়েছে? কিছুই নেই।

আর্থিক বৃদ্ধির অনুমান, রাজকোষের হিসেবনিকেশ কি বিশ্বাস করার মতো? না। বরং তাতে কতটা জল মেশানো, তা নিয়ে প্রশ্ন।

Advertisement

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কাছে দাবি ছিল, অর্থনীতির অবস্থা ঠিক কেমন, বাজেটে তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিন তিনি। বাজেটের হিসেবনিকেশও যেন বিশ্বাসযোগ্য হয়। কিন্তু আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বাজেটে তাঁর মুনশিয়ানার অভাবই প্রকট বলে অভিযোগ উঠল।

অর্থনীতিতে ঝিমুনি ধরেছে। আর্থিক বৃদ্ধির হার তলানিতে নেমে ৫ শতাংশে ঠেকেছে। বাজারে চাহিদা নেই। কিন্তু বাজেটে এ বিষয়ে নামগন্ধও মিলল না। শিল্পপতি নৌশাদ ফোবর্সের মন্তব্য, ‘‘আমরা যে সঙ্কটে পড়েছি, বৃদ্ধির হার যে তলানিতে, তার কোনও স্পষ্ট স্বীকারোক্তি শুনতে পেলাম না।’’

রোগের কথা স্পষ্ট করে বললেন না। তাই রোগমুক্তির দিশাও মেলেনি। অর্থনীতির ঝিমুনি কাটাতে, বাজারে চাহিদা বাড়াতে গ্রামের মানুষের হাতে টাকা দেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু তার বদলে একশো দিনের কাজের প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার মতো প্রকল্পে বরাদ্দ ছাঁটাই করলেন অর্থমন্ত্রী। চাষিদের সাহায্য করতে পিএম-কিসান প্রকল্পেও বরাদ্দ বাড়ালেন না। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের মন্তব্য, ‘‘বুঝতেই পারলাম না, এই বাজেটের বার্তাটি কী? সরকার মনে হচ্ছে, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা, বেসরকারি লগ্নি বাড়ানোর আশা ছেড়ে দিয়েছে।’’

অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আয়কর ছাঁটাইয়ের পথে হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী। তাতে আদতে আমজনতার কতখানি লাভ হবে, তা নিয়ে জটিল প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিরও লাভ হবে কি? প্রাক্তন মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেন সতর্ক করেছিলেন, কর্পোরেট কর কমিয়ে লাভ হয়নি। আয়কর কমাতে গেলে ক্ষতি হবে। কারণ, তার জন্য অন্য খরচ কমাতে হবে। বাজেটের হিসেব বলছে, কর্পোরেট কর কমানোর লোকসান পূরণ করতে অর্থমন্ত্রীকে এ বছর খাদ্য ভর্তুকি থেকে শুরু করে গ্রাম সড়ক যোজনায় বরাদ্দ ছাঁটাই করতে হয়েছে। আগামী বছরেও আয়কর কমানোর জন্য ৪০ হাজার কোটি টাকার লোকসান পূরণ করতে সরকারি খরচ কমানো হলে বৃদ্ধিই ধাক্কা খাবে। বাজেট বলছে, রেল-সহ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির মোট লগ্নি মাত্র ২.৪ শতাংশ বেড়ে ১০.৮৪ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছবে। তা হলে পাঁচ বছরে পরিকাঠামোয় ১০০ লক্ষ কোটি টাকা খরচের রসদ কোথা থেকে আসবে?

জুলাইয়ে নির্মলা সীতারামন প্রথম বার বাজেট পেশ করেছিলেন। সাত মাস পরে আজ তিনি নিজেই জানিয়েছেন, প্রথম বাজেটের স্থির করা কোনও লক্ষ্য তিনি ছুঁতে পারেননি। তিনি ৩.৩ শতাংশে রাজকোষ ঘাটতি বেঁধে রাখার লক্ষ্য নিয়েছিলেন। আজ নির্মলা জানিয়েছেন, ঘাটতি বেড়ে ৩.৮ শতাংশে পৌঁছেছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আদায় কম হয়েছে প্রায় তিন লক্ষ কোটি টাকা। লক্ষ্যপূরণ হয়নি জিএসটি আদায়েরও। রাজকোষ ঘাটতি যাতে আর না-বাড়ে, তার জন্য খাদ্য ভর্তুকি ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাঁটাই করেছেন। যদিও সেই খরচ জুড়েছেন ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার খাতে।

জুলাইয়ের বাজেটে নির্মলা ধরে নিয়েছিলেন, চালু বাজারদরের ভিত্তিতে এ বছর জিডিপি ১২ শতাংশ বাড়বে। আদতে তা ৭.৫ শতাংশ বাড়ছে বলে পরিসংখ্যান মন্ত্রকই জানিয়েছে। তা হলে কিসের ভিত্তিতে আগামী বছরেই ১০ শতাংশ বৃদ্ধির আশা করছেন তিনি? অর্থমন্ত্রীর জবাব, ‘‘অর্থনীতির নানা রকম প্রবণতা দেখে।’’ কিন্তু উপদেষ্টা সংস্থা মুডি’জ-এর মত, ‘‘এতখানি বৃদ্ধি ছোঁয়া যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের। তার ফলে রাজকোষ ঘাটতিও বেড়ে যেতে পারে।’’

আগামী বছর বা ২০২০-২১-এর বাজেটের হিসেবনিকেশও মিলবে কি? সেখানেও প্রশ্ন। অর্থমন্ত্রী ধরে নিয়েছেন, চলতি বছরের তুলনায় আগামী বছরে মোট কর আদায় ১২.৩ শতাংশ বাড়বে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর সি রঙ্গরাজনের প্রশ্ন, বাজারদরের ভিত্তিতে জিডিপি ১০ শতাংশ বাড়লে মোট কর আদায় কী ভাবে ১২ শতাংশের বেশি বাড়ে? চলতি বছরে বিলগ্নিকরণ থেকে ১.০৫ লক্ষ কোটি টাকা ঘরে তোলার লক্ষ্য নিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। বাস্তবে আসছে মাত্র ৬৫ হাজার কোটি টাকা। তা সত্ত্বেও আগামী বছরে লক্ষ্য আরও বাড়িয়ে ২.১০ লক্ষ কোটি টাকা বেঁধেছেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে এ বছর ৬০ হাজার কোটি টাকা ডিভিডেন্ড মিলেছে। আগামী বছর ১.৫৫ লক্ষ কোটি টাকা ডিভিডেন্ড মিলবে বলে অর্থমন্ত্রীর আশা।
এই অনুমানের ভিত্তিতেই অর্থমন্ত্রী আগামী বছর জিডিপির তুলনায় রাজকোষ ঘাটতি ৩.৫ শতাংশে নামিয়ে আনবেন বলে ঠিক করেছেন। যদিও আদতে বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্য ছিল এবং ৩.৫ শতাংশেও ঘাটতির হিসেবেও প্রচুর জল মেশানো রয়েছে বলে অভিযোগ। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁর রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৭.৯৬ লক্ষ কোটি টাকা। এর ৭৬.৫ শতাংশই রাজস্ব ঘাটতি। যার অর্থ, সরকারকে নতুন পরিকাঠামো তৈরির বদলে বেতন-পেনশন-সুদ মেটাতেই বেশিরভাগ ধার করতে হচ্ছে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement