—ফাইল চিত্র।
বাজেট পেশ হল। আর শনিবারের বিশেষ লেনদেনে গত এক দশকের বৃহত্তম পতন দেখল সেনসেক্স। প্রায় ৯৮৮ পয়েন্ট পড়ে সূচক দাঁড়াল ৩৯,৭৩৫.৫৩ অঙ্কে। মুছে গেল লগ্নিকারীদের ৩,৪৬,২৫৬.৭৬ কোটি টাকার সম্পদ। দিনের এক সময় অবশ্য সূচক নেমে গিয়েছিল আরও বেশি, ১২৭৫ পয়েন্ট।
বাজার এ ভাবে হুড়মুড়িয়ে পড়তেই উঠল প্রশ্ন, এ কীসের ধাক্কা? করোনাভাইরাস নিয়ে ভয়ের, নাকি নির্মলা সীতারামনের বাজেটের? বিশেষত গত কয়েক দিনে যেখানে অন্যান্য দেশের মতো মারণ ভাইরাসের সংক্রমণের খবরেই কুঁকড়ে যেতে দেখা গিয়েছে সূচককে। তবে লগ্নিকারীরা বলছেন, এ দিন অর্থনীতির ঝিমুনি কাটাতে কেন্দ্র কী পদক্ষেপ করে, তা দেখতে চোখ ছিল বাজেটে। কিন্তু হতাশ করেছেন নির্মলা। যা টেনে নামিয়েছে সেনসেক্সকে। ৩০০.২৫ পয়েন্ট হারিয়ে নিফ্টি-ও থামে ১১,৬৬১.৮৫ অঙ্কে।
লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা ভ্যালু রিসার্চের সিইও ধীরেন্দ্র কুমার বলছেন, ‘‘চাহিদা ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য যে কার্যকরী ও জোরালো পদক্ষেপ দরকার, তা হয়নি।’’ আর পরিকাঠামো উন্নয়ন সংস্থা শ্রেয়ীর চেয়ারম্যান হেমন্ত কানোরিয়ার মন্তব্য, ‘‘অর্থনীতির ঝিমুনি কাটাতে এমন কিছু করতে হত, যা চটজলদি চাহিদা বাড়াবে। অর্থনীতিতে গতি আনবে। কাজ তৈরি করবে। কিন্তু সেই লক্ষ্য ব্যর্থ।’’ লগ্নিকারীদের প্রশ্ন, তা হলে অর্থনীতির বিপদ কাটবে কোন পথে? আর সেটা না জানলে লগ্নি আসবে কী করে? যদিও সাম্প্রতিককালে অর্থনীতির দুরবস্থাকে ঝেড়ে ফেলেও অনেক বার উঠতে দেখা গিয়েছে বাজারকে।
প্রশ্ন অনেক
• অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ওষুধ কই?
• কী ভাবে বাড়বে চাহিদা?
• কাজই বা বাড়বে কী ভাবে?
• লগ্নিকারীকে ডিভিডেন্ড বণ্টন কর দিতে হলে শেষে বিনিয়োগ মার খাবে না তো?
• আয়করের বিকল্প মডেলে কি ধন্দ বাড়ল না?
• আয়করের ঘোষণা যদি ফান্ডের ইএলএসএস, পিপিএফ, বিমা ইত্যাদিতে লগ্নি কমায়?
• এনবিএফসি, গৃহঋণ সংস্থায় মাথাতোলা সঙ্কটের সুরাহা কোথায়?
এ দিন শেয়ার বাজার মহলের দাবি মেনে সংস্থাগুলির উপর থেকে ডিভিডেন্ড বণ্টন কর তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। একাংশের মতে, এতে ভারতীয় সংস্থার পাশাপাশি বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিও উপকৃত হবে। কিন্তু এখন ওই কর মেটানোর দায় চাপল সেই লগ্নিকারীর ঘাড়ে, যিনি ডিভিডেন্ড পাবেন। ডিভিডেন্ডের টাকা মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত করে কর হিসাব করতে হবে তাঁকে। বিষয়টি ভাল ভাবে নেয়নি বাজার। দেকো সিকিউরিটিজের কর্ণধার অজিত দে বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই কর কেটে ডিভিডেন্ড হাতে পাওয়া ও ডিভিডেন্ড হাতে পেয়ে কর মেটানোর মধ্যে দ্বিতীয়টাতেই ক্ষতি গুনবেন লগ্নিকারী।’’
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ব্যক্তিগত আয়করের হারের যে নতুন বিকল্প ঘোষণা করেছেন নির্মলা, তাতে ধন্দ তৈরি হওয়াও বাজারকে আঘাত করেছে। ওই বিকল্প এবং সেটা পেতে ছাড়ের সুবিধা ছাড়ার শর্ত জানার পরে করের অঙ্ক সত্যিই কমছে কি না, উঠেছে প্রশ্ন। আয়কর বিশেষজ্ঞ এস এম সুরানা বলেন, ‘‘এতে সঞ্চয় মার খেতে পারে। কারণ নতুন হারে কর দিলে আয়কর ছাড় মিলবে না।’’