মন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১১ সালে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ২০,৯৭০টি পুজোকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছিল। ফাইল ছবি
রাজ্যে পালাবদলের পরে গত দশ বছরে পুজোয় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সংযোগ দেওয়ার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এই কথা জানিয়ে মঙ্গলবার বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের দাবি, এ বার সংযোগ নেওয়ার চাহিদা আরও বাড়তে পারে। পুজোর প্রস্তুতি নিয়ে মঙ্গলবার বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পরে বলেন, ওই সময় রাজ্য জুড়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জোগানে কোনও সমস্যা হবে না। রাজ্য, কেন্দ্র এবং বেসরকারি সংস্থাগুলির দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা থাকবে ১০,৩২০ মেগাওয়াট, যা চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি।
এ দিকে, রাজ্য সরকার পুজো কমিটিগুলিকে বিদ্যুতের বিলে ছাড় দেওয়ার যে ঘোষণা করেছে, তাকে ঘিরে এই বছরও মাথা তুলেছে বিতর্ক। বিরোধী শিবির এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের কর্মী ইউনিয়নের একাংশের দাবি, এতে বিদ্যুৎ সংস্থার আর্থিক হাল খারাপ হলে গ্রাহকের কাঁধে বাড়তি বোঝা চাপতে পারে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁরা বলেন, আইন অনুযায়ী বিলে ছাড় বাবদ অর্থ বণ্টন সংস্থাকে আগাম দেওয়ার কথা রাজ্যেরই। কিন্তু গত দু’বছরে কোনও টাকা দেওয়া হয়নি। যদিও অরূপবাবুর বক্তব্য, এটি তাঁদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, রাজ্যের ভর্তুকিতেই চলে সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি। তাদের ক্ষতি করা নয়, বরং আর্থিক ভাবে দ্রুত স্বাবলম্বী করাই সরকারের লক্ষ্য।
এ দিন মন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১১ সালে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ২০,৯৭০টি পুজোকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছিল। গত বছরে তা বেড়ে হয় ৪০,১২৪। এ বার আরও বৃদ্ধির আশা। সিইএসসি এলাকায় ৫০০০টি পুজো সংযোগের আবেদন জানাতে পারে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, দশ বছরে কিছু নতুন পুজো যেমন চালু হয়েছে, তেমনই বেআইনি পথের বদলে নিয়ম মেনে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। বিশেষত সরকারি অনুদান পেতে যেহেতু সব কিছু বৈধ হওয়া জরুরি।
পুলিশ, দমকল বাহিনী, বিদ্যুৎ দফতর ও তিনটি বিদ্যুৎ সংস্থার স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার কর্মী দুর্গা পুজোর দিনগুলিতে কর্মরত থাকবেন বলে জানিয়েছেন অরূপবাবু। তাঁর দাবি, পুজোর সময়ে সকলের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। লো এবং হাই টেনশন ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার জন্য ২৩৬৩টি ভ্যান সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঘুরবে। বণ্টন সংস্থার ১৫৩৬টি দফতরে দিনরাত কন্ট্রোল রুম চালু থাকবে। জরুরি দরকারে গ্রাহকেরা ফোন করতে পারেন টোল ফ্রি নম্বরে (১৯১২১) এবং বিদ্যুৎ ভবনের কন্ট্রোল রুমের নম্বরে (৮৯০০৭৯৩৫০৩/০৪)। গোটা ব্যবস্থার স্বাভাবিক রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি পুজোর বিশেষ কর্মসূচি অনুযায়ী প্রস্তুতি আগামী ২০ তারিখের মধ্যে শেষ হবে।
তবে পুজো কমিটিগুলির কাছে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের আর্জি, তাদের চাহিদা লিখিত ভাবে সংশ্লিষ্ট পুজোর লাইসেন্সপ্রাপ্ত কন্ট্র্যাক্টরেরা বণ্টন সংস্থাগুলিকে জানালে, বিদ্যুতের জোগান কিংবা অপচয় আটকানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না। এ ছাড়া, কোনও কমিটি যেন ছেঁড়া তার ব্যবহার না করে। সংযোগের উৎস থেকে পাইপলাইনে যেন বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়া হয়। বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, গত বছর চতুর্থীতে বিদ্যুতের চাহিদা সব থেকে বেশি ছিল, ৮৫৭৬ মেগাওয়াট। এ বারের পূর্বাভাস, পঞ্চমীতে তা সর্বোচ্চ (৯৭৪৩ মেগাওয়াট) হতে পারে।