অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
খারাপ খবর কিছুতেই আর পিছু ছাড়ছে না। ‘‘অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে’’— গত মঙ্গলবার এ কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছিলেন, বিদেশি লগ্নি বেড়েছে, ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে শিল্পে, সূচক উঁচুতে, বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডারেও রেকর্ড। অথচ তাঁর সেই বক্তব্যের পর থেকেই টানা অর্থনীতি নিয়ে এসেছে একগুচ্ছ খারাপ খবর।
বুধবার জানা গিয়েছে, খুচরো মূল্যবৃদ্ধি জানুয়ারিতে পৌঁছেছে ৭.৫৯ শতাংশে। ২০১৪ সালের মে মাসের পরে যা সব চেয়ে বেশি। একই দিনে সরকারি পরিসংখ্যান বলেছে, ডিসেম্বরে শিল্পোৎপাদন সঙ্কুচিত হয়েছে ০.৩%। শুক্রবার জানা গিয়েছে, গত মাসে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধিও বেড়ে হয়েছে ৩.১০%। আশঙ্কা, মূল্যবৃদ্ধি আরও বাড়তে পারে ভর্তুকিহীন গ্যাসের দাম ২০% বাড়ানোয়। দিল্লি ভোটের ফল ঘোষণার পর দিনই জানানো হয়েছে, রান্নার গ্যাসের দাম সিলিন্ডারে বাড়ছে ১৪৯ টাকা। ফলে শহরে দাম হয়েছে ৮৯৬ টাকা। এতে মধ্যবিত্তের হেঁশেলে যে বড় আঘাত পৌঁছবে তাতে সন্দেহ নেই।
গত সপ্তাহেই জানুয়ারিতে দেশের রফতানি ১.৬৬% কমার খবর এসেছে। টানা ছ’মাস তা পড়েছে। পাশাপাশি, আমদানি কমায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে পৌঁছেছে ১৫১৭ কোটি ডলারে। অবস্থা যে খারাপের দিকেই যাচ্ছে, তা আঁচ করে অর্থমন্ত্রী শুক্রবার জানান, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে প্রয়োজনে বাজেট প্রস্তাবের বাইরে আরও কিছু পদক্ষেপ করা হতে পারে।
অর্থনীতি বেশ কয়েক মাস ধরেই ঝিমিয়ে। অথচ তার উল্টো পথে হেঁটে শেয়ার বাজার চাঙ্গাই ছিল। তবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার সূচক পড়েছে। যদিও সেনসেক্স নামলেও তা এখনও রয়েছে ৪১ হাজারের উপরে। তবে এতে তেমন উপকৃত হননি বেশিরভাগ লগ্নিকারী। বিশেষত মিড ও স্মল ক্যাপ শেয়ারে যাঁরা টাকা ঢেলেছিলেন।
আবার ব্যাঙ্কে সুদ অনেকটা নামায় বহু মানুষ একটু বেশি আয়ের লক্ষ্যে ঝুঁকছেন মিউচুয়াল ফান্ডের দিকে। তাঁদের আশা পূরণের জন্য বাজারকে তেজি থাকতে হবে। পাশাপাশি, বাড়াতে হবে বন্ডে লগ্নির সুরক্ষা। সাধারণ লগ্নিকারীরা ফান্ড থেকে মুখ সরিয়ে নিলে কিন্তু চুপসে যেতে পারে বাজার। অর্থাৎ, সূচক উঁচুতে থাকলেও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে শেয়ার বাজারে। একই অবস্থা স্থির আয়ের প্রকল্প ও মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পে।
অর্থমন্ত্রীর দাবি
•বেড়েছে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি (এফডিআই)
•বিদেশি লগ্নি বেড়েছে শেয়ার বাজারেও
•শিল্পোৎপাদনে প্রাণ ফিরছে
•বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে উৎপাদন শিল্প
•জিএসটি সংগ্রহ মাথা তুলেছে
•রেকর্ড গড়ছে বিদেশি
মুদ্রার ভাণ্ডার
•শেয়ার বাজার তেজি
পরিসংখ্যান বলছে
•খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ৬৮
মাসের মধ্যে সর্বাধিক (জানুয়ারিতে ৭.৫৯%)
•বাড়ছে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধিও (গত মাসে ৩.১%)
•ডিসেম্বরে শিল্পোৎপাদন কমেছে ০.৩%
•লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি আয়কর আদায়
•বেড়েই চলেছে রাজকোষে ঘাটতি
•রফতানিতে টানা পতনে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি
•বিভিন্ন শিল্পে চাহিদা কমেছে। ফলে কাজ হারাচ্ছেন বহু মানুষ
অর্থনীতি ছাড়াও করোনাভাইরাস বাজারের কাছে বড় আতঙ্কের কারণ। বিশ্বের অন্যান্য দেশে সে ভাবে এই ভাইরাস না-ছড়ালেও, এর জেরে চিনের অর্থনীতির যে ক্ষতি হচ্ছে, তার ধাক্কা পৌঁছবে ভারত-সহ বেশ কিছু দেশে। বিশেষত যাদের সঙ্গে চিনের বড় অঙ্কের বাণিজ্য আছে। ভারতে এমনিতেই এখন চাহিদায় ভাটা। এর উপরে চিন আমদানি কমালে তা বড় আঘাত হানবে দেশের শিল্পে। আবার চিন থেকে আসা কাঁচামালের উপরে ভারতের বেশ কিছু শিল্প নির্ভরশীল। বর্তমানে তা সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছে তারা। বাজার নজর রাখছে এই সব কিছুর উপরেই।
এ দিকে, মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দিলেও ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে সুদ কমানোর স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তা হলে সাধারণ মানুষ কোথায় টাকা রাখবেন এই প্রশ্ন করা হলে, তিনি মানুষকে শেয়ার ও ফান্ডে টাকা খাটানোর পরামর্শ দেন। সমস্যা হল, এই দুই জায়গাই ঝুঁকিপূর্ণ ও এতে নিয়মিত আয়ের নিশ্চয়তা নেই। ফলে অর্থমন্ত্রীর এই মন্তব্যে চিন্তিত প্রবীণ নাগরিকেরা। অর্থাৎ, এই অবস্থায় সজাগ থাকতে হবে লগ্নিকারীদের। টাকা ঢালার সিদ্ধান্ত নিতে হবে সব দিক দেখে।
(মতামত ব্যক্তিগত)