শুনশান: পর্যটকের অপেক্ষায় জম্মু-কাশ্মীরের বদগাম। ফাইল চিত্র
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক ও অন্যান্য মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা আশা জাগিয়েছিল, অতিমারির তিনটি ঢেউয়ে বিপর্যস্ত পর্যটন, হোটেল-রেস্তরাঁ মিলিয়ে সার্বিক ভাবে আতিথেয়তা শিল্পকে এ বার হয়তো নির্দিষ্ট ভাবে কিছু সাহায্য করা হবে। বাজেটের আগের দিন আর্থিক সমীক্ষার পাতায় এই ক্ষেত্রের দুর্দশার উল্লেখ ভরসা আরও বাড়ায়। কিন্তু মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ঘণ্টা দেড়েকের বাজেট বক্তৃতার পরে হতাশা গ্রাস করেছে তাদের। শিল্প মহলের বক্তব্য, সাগর প্রমাণ দুর্ভোগের মধ্যে মিলেছে বলতে গেলে এক ফোঁটা দাওয়াই! তা-ও সেটি হল ঋণ প্রকল্পের সময়সীমা বৃদ্ধি। ব্যবসাই যখন তলানিতে, তখন নতুন ঋণের বোঝা মাথায় নেওয়া ক’টি সংস্থার পক্ষে সম্ভব হবে, সেই প্রশ্ন তুলে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট সকলেই।
ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েসেশন অব টুর অপারেটর্সের প্রেসিডেন্ট রাজীব মেহরা, অ্যাসোসিয়েশন অব ডোমেস্টিক টুর অপারেটর্স অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট পি পি খন্না, ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সেক্রেটারি অমিতাভ সরকার— সকলেরই দাবি, অতিমারির মুখে সবার আগে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল পর্যটনে। সব শেষে ফের ব্যবসা চালুর ছাড়পত্র মেলে। কিন্তু ওমিক্রনের জেরে অন্যান্য ব্যবসার তুলনায় আবার কড়া নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে তারা। এখন দেশের মধ্য ভ্রমণ তা-ও কিছুটা চালু, বিদেশি পর্যটকদের ভারতে আসা কার্যত বন্ধ। সব মিলিয়ে ব্যবসা তলানিতে ছোট-বড় সব সংস্থারই। আর তার জেরে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে হোটেল-রেস্তরাঁ ব্যবসাতেও, দাবি ফেডারেশন অব হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া-র ভাইস প্রেসিডেন্ট গুরবক্সিশ সিংহ কোহলির। সকলেরই দাবি, হাজার হাজার সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে। কয়েক লক্ষ কর্মী কাজ খুইয়েছেন।
আতিথেয়তা শিল্প এখনও করোনার আগের ব্যবসা পুনরুদ্ধার করতে পারেনি, বাজেট বক্তৃতায় সে কথা এ দিন উল্লেখ করে নির্মলা তাই ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পের মতো এ ক্ষেত্রেও ‘এমার্জেন্সি ক্রেডিট লাইন গ্যারান্টি স্কিম’ প্রকল্পের মেয়াদ ও তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধির দাওয়াই দিয়েছেন। রাজীব, অমিতাভর প্রশ্ন, ব্যবসাই যখন প্রায় নেই, তখন ওই প্রকল্পে ঋণ নিয়ে কোনও সংস্তা তা শোধ করবে কী করে? আগের ঋণের কিস্তিই তো শোধ করতে পারছে না বেশিরভাগ সংস্থাই। তাঁদের সুরেই পি পি খন্নারও দাবি, সরসারি কিছু আর্থিক সুবিধার দরকার ছিল। তাঁদের প্রশ্ন, অন্য সব ব্যবসা চালু থাকলেও তাতে যদি সংক্রমণ না ছড়ায়, তাহলে শুধু পর্যটন থেকেই কেন তা ছড়াবে?
গুরবক্সিশ বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী এই ক্ষেত্রের বিপুল ক্ষতির কথা মানলেন। কিন্তু দিলেন মাত্র এক ফোঁটা দাওয়াই।’’ তাঁর বক্তব্য, অথচ প্রাক-বাজেট পর্বের সরকারি আলোচনায় তাঁদের মনে হয়েছিল, আতিথেয়তা শিল্পের জন্য নির্দিষ্ট কিছু সুরাহা বাজেটে ঘোষণা করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্রাত্য থাকার হতাশাতেই ডুবল আতিথেয়তা শিল্প।