জিডিপির ২.৯১% মূলধনী খাতে ব্যয় করা হবে বলে দাবি করছে কেন্দ্র। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাজেটে আগামী অর্থবর্ষের জন্য প্রায় ৭.৫০ লক্ষ কোটি টাকা মূলধনী খরচের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। যা চলতি অর্থবর্ষের তুলনায় ৩৫% বেশি। মোদী সরকারের ব্যাখ্যা, বেসরকারি লগ্নি এবং কর্মসংস্থানের রাস্তা প্রশস্ত করতেই এই পদক্ষেপ। তবে দেশীয় মূল্যায়ন সংস্থা ক্রিসিল রিসার্চ বলছে, কেন্দ্র যতটা দাবি করছে মূলধনী খরচের অঙ্ক আদৌ ততটা বেশি নয়।
ক্রিসিলের বিশ্লেষণ, জিডিপির ২.৯১% মূলধনী খাতে ব্যয় করা হবে বলে দাবি করছে কেন্দ্র। কিন্তু এর মধ্যে রাজ্যগুলির জন্য প্রস্তাবিত শর্তসাপেক্ষ ঋণের অঙ্ক ১ লক্ষ কোটি টাকা। এই উপাদানটিকে হিসাব থেকে বাদ দেওয়া হলে সরকারের মূল খরচ আদতে দাঁড়াবে জিডিপির ২.৫৮%। যা চলতি অর্থবর্ষের সংশোধিত বরাদ্দের আশেপাশে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে পুঁজি বরাদ্দের হার ভাল রকম কমাচ্ছে কেন্দ্র। আগামী বছরে (২০২২-২৩) তা হতে চলেছে জিডিপির ১.৮২%। যা করোনার আগের বছরগুলিতে (২০১৮-২০) ৩.৩৩% ছিল। এই সমস্ত খাতগুলি মিলিয়ে কেন্দ্রের মূলধনী খরচ যোগ করলে যা দাঁড়ায়, তা আদতে চলতি অর্থবর্ষের মোট বরাদ্দের (৫.৯৬%) চেয়ে উল্লেখযোগ্য রকম বেশি কিছু নয়। অর্থাৎ, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ
কর সংগ্রহ বৃদ্ধির প্রবণতা সত্ত্বেও সরকারি খরচ বাড়াতে গিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মতো জায়গায় পুঁজি খরচ অনেকটাই ছাঁটাই করতে চলেছে কেন্দ্র। এই প্রসঙ্গে বিরোধীদের দাবি, ১০০ দিনের কাজ কিংবা খাদ্য ভর্তুকির মতো ক্ষেত্রগুলিতেও বরাদ্দ ছাঁটাই করেছে মোদী সরকার।
অতিমারির ধাক্কা থেকে অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে কেন্দ্রের ঘোষিত ত্রাণ প্রকল্প সম্পর্কেও এই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। বিভিন্ন মূল্যায়ন সংস্থা হিসাব কষে দেখিয়েছিল, প্রকল্পের বরাদ্দ জিডিপির ১০% বলে কেন্দ্র দাবি করলেও এর মধ্যে সরকারি খরচ ছিল আদতে জাতীয় উৎপাদনের ১%। বাকিটা ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ঋণ হিসাবেই দেওয়া হচ্ছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রকে।
চলতি অর্থবর্ষের মূলধনী খরচ সম্পর্কেও কিছু পর্যবেক্ষণ রয়েছে ক্রিসিলের রিপোর্টে। জানানো হয়েছে, সংশোধিত বাজেট বরাদ্দে ওই খরচ ২.৩৯% থেকে ২.৬০ শতাংশে উঠে এসেছে। কিন্তু এই বৃদ্ধির পুরোটাই হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ায় ৫১,৯৭১ কোটি টাকার এককালীন খরচের কারণে। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, গত অর্থবর্ষে বরাদ্দ অনুযায়ী সরকারি খরচ করে উঠতে পারেনি কেন্দ্র। তবে এরই পাশাপাশি ক্রিসিলের মতে, গত অর্থবর্ষের শেষের দিকে সরকারি খরচের গতি বাড়ানো হয়েছে। সেই প্রবণতা রয়েছে চলতি বছরেও। সরকারেরও দাবি, কর সংগ্রহের উপরে নির্ভর করে এই অর্থবর্ষে বরাদ্দ অনুযায়ী খরচ করা যাবে। ক্রিসিল জানিয়েছে, সঙ্কটকালে বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রবণতা থাকে মূলধনী খরচ-সহ বিভিন্ন খাতে খরচ ছাঁটাই করা। কিন্তু কেন্দ্র পদক্ষেপ করেছে বৃদ্ধিকে পাখির চোখ করেই। আগামী অর্থবর্ষেও রাস্তা ও জাতীয় সড়কের মতো ক্ষেত্রগুলিতে বাড়তি খরচের উপরে নির্ভর করে কাজ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। রাজ্যগুলিকেও অতিরিক্ত ঋণের পুরোটা কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে মূল্যায়ন সংস্থাটি।