রাজ্যসভায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী বলেছেন, বিশ্ব বাজারের দাম, ডলার-টাকার বিনিময় মূল্য, কর, পরিবহণ-সহ সমস্ত খরচ খতিয়ে দেখে তেলের দাম নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। জানিয়েছেন,
ফাইল চিত্র।
পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়বে, নাকি উৎপাদন শুল্ক ছেঁটে তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবে কেন্দ্র— এই প্রশ্ন এখন দেশ জুড়ে। মঙ্গলবার সেই প্রশ্ন উঠল রাজ্যসভাতেও। প্রত্যাশিত ভাবেই সরকার এর সরাসরি কোনও জবাব দেয়নি। তবে বলেছে, তারা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নজর রাখছে। সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষার খাতিরে প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করবে। সংশ্লিষ্ট মহলের অবশ্য দাবি, যে বার্তাই দেওয়া হোক অস্বস্তি বহাল। হতচকিত বিরোধীরাও। কারণ বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের চড়া। অথচ আশঙ্কা থাকলেও ৭ মার্চ পাঁচ রাজ্যে ভোট মেটার পরেও দেশে তেলের দাম বাড়েনি। তাদের প্রশ্ন, ব্রেন্ট ক্রুড যখন ৮০-৮৫ ডলার ছিল তখন পেট্রল-ডিজ়েল নাগাড়ে বেড়ে ১০০ টাকা পেরিয়েছিল। এই দফায় সেই ব্রেন্টই ১৩০-১৪০ ডলার ছুঁয়েছে। দিন কুড়ি ১০০ ডলারের উপরে থেকে মঙ্গলবার ৯৯.৭১ ডলারে নেমেছে। তা হলে আমদানি খরচের ধাক্কা তেল সংস্থাগুলির বইছে কী করে? অতিমারিতে একটানা জ্বালানির দাম বৃদ্ধির অভিজ্ঞতা মনে করেই ক্রেতাদের আশঙ্কা, তেল সংস্থার বাড়তি খরচের মাসুল পরে আরও ভয়ঙ্কর ভাবে চোকাতে হবে না তো তাঁদের!
রাজ্যসভায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী বলেছেন, বিশ্ব বাজারের দাম, ডলার-টাকার বিনিময় মূল্য, কর, পরিবহণ-সহ সমস্ত খরচ খতিয়ে দেখে তেলের দাম নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। জানিয়েছেন, পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হিসাবে অশোধিত পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানি এবং বিদ্যুতের অংশ, যা অশোধিত তেলের দামে ওঠাপড়ার সঙ্গে জড়িয়ে। অর্থ মন্ত্রকের রিপোর্টও বলেছে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বিশ্ব অর্থনীতিকে টালমাটাল করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে অশোধিত তেল এবং অন্যান্য পণ্যের আন্তর্জাতিক দাম বেড়েছে। যা ভারতের আমদানি ‘বাস্কেট’-এর খরচও বাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এখানেই দানা বাঁধছে সন্দেহ, সেই খরচ কী ভাবে উসুল করা হবে? ভোটের পরে তেলের দাম বাড়ানো হয়— কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সমালোচনার এই হাতিয়ার ভোঁতা করে দিতেই যদি তেলের দাম বৃদ্ধির পদক্ষেপ এখন বন্ধ থাকে, তা হলে পরে তা শুরু হবে কি? শুল্ক কমানোর কথাই বা বলা হচ্ছে না কেন?
মঙ্গলবার সকালে সনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের সংসদীয় দলের বৈঠক ছিল। সেখানে ঠিক হয়েছে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারকে নিশানা করবে দল। পরে রাহুল গান্ধীর টুইট-আক্রমণ, সরকারের ভুল নীতির ফল ভুগছেন সাধারণ মানুষ। স্থায়ী আমানত, পিপিএফ, ইপিএফে সুদ কমছে, আর মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়ছে। মানুষকে সুরাহা দেওয়ার দায়িত্ব কি সরকারের নয়? অর্থনীতিবিদদের মতে, যুদ্ধের ধাক্কা থেকে অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে ভারতে জ্বালানির দাম কম রাখতে হবে। এখন তার একমাত্র উপায় কেন্দ্রের উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাই। না-হলে মূল্যবৃদ্ধি মাথা তুলবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, কতটা? গত নভেম্বরে পেট্রলে ৫ টাকা, ডিজ়েলে ১০ টাকা শুল্ক কমিয়েছিল কেন্দ্র। দাম বৃদ্ধির তুলনায় যা নগণ্য, অভিযোগ বিভিন্ন মহলের।