নিজেদের মুখ রক্ষার তাগিদে ও কর্মী-স্বার্থরক্ষায় ব্রিটেনের পর্যুদস্ত ইস্পাত শিল্পে প্রাণ ফেরাতে মরিয়া ডেভিড ক্যামেরন সরকার।
সেই দায়বদ্ধতার লক্ষ্যেই এ বার এ দেশে টাটা স্টিলের ২৫% অংশীদারি কিনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিল তারা।
লোকসানে তলিয়ে যাওয়া ব্রিটেনের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টাটা স্টিল। কিন্তু দেশের ইস্পাত শিল্পকে বাঁচাতে সংস্থার কারখানাগুলির ঝাঁপ যাতে বন্ধ না-হয়, তা নিশ্চিত করতে চায় প্রশাসন। তাগিদ এতটাই যে, সম্প্রতি এ ব্যাপারে সটান মুম্বইয়ে এসে ভারতীয় ইস্পাত বহুজাতিকটির চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রির সঙ্গে দেখা করে যান বাণিজ্য সচিব সাজিদ জাভিদ। ইঙ্গিত দেন, ওই ব্যবসা কিনলে শর্তসাপেক্ষে সরকারি ঋণ দেওয়ার। জানান, তেমন হলে সে দেশের বৃহত্তম ইস্পাত কারখানা, টাটাদের পোর্ট ট্যালবট বাঁচাতে সেটির সম্ভাব্য ক্রেতার সঙ্গে সহযোগী লগ্নিকারী হওয়ার কথা ভাববে সরকার।
অবশেষে সেই পথে হেঁটেই বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করল, সেখানে টাটা স্টিলের ব্যবসার ২৫% শেয়ার কিনতে আগ্রহী তারা। যার উদ্দেশ্য, কারাখানা টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি ওই ব্যবসার সম্ভাব্য ক্রেতার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও উদ্ভাবন মন্ত্রক কোনও কড়াকড়ি না-করে ক্রেতার প্রয়োজন ও লগ্নি-কৌশল অনুযায়ী আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করে দেবে বলেও জানিয়েছে। কারণ, টাটাদের ব্যবসা কেনার লগ্নিকারী না-মিললে আরও বিপন্ন হবে ব্রিটেনের ইস্পাত শিল্প।
ব্রিটিশ বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, সম্ভাব্য ক্রেতাকে বাড়তি আর্থিক সাহায্য দেওয়ার পরিকল্পনাও ছকছে তারা। যাতে ওই তহবিলের হাত ধরে ইস্পাত ব্যবসার পুনরুজ্জীবন করা যায়। সে ক্ষেত্রে ওই অর্থ কাজে লাগানো যাবে ইস্পাত তৈরির জন্য বিদ্যুৎ কারখানার পরিকাঠামো গড়া, বিদ্যুৎ সাশ্রয়, পরিবেশ রক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং প্রশিক্ষণের মতো ক্ষেত্রে। এক সরকারি মুখপাত্রের দাবি, ‘‘আমরা সম্ভাব্য ক্রেতাদের পাশে দাঁড়িয়েই কাজ করব। যাতে বিক্রির প্রস্তাব এলে সরকার যে সাধ্য মতো সাহায্য করছে, সেই ভরসা দেওয়া যায়।’’
তবে এ দিনের ঘোষণার পরে টাটাদের ইস্পাত ব্যবসার শেষ পর্যন্ত আংশিক জাতীয়করণই হচ্ছে কি না, তা নিয়ে জল্পনা দানা বাঁধে বিভিন্ন মহলে। তা অবশ্য উড়িয়ে দিয়ে সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাঁরা বাণিজ্যিক ভাবে লগ্নিই করতে নেমেছেন। কোনও ভাবেই টাটাদের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে চান না তাঁরা। তবে তা হাতবদলের সুবিধা করে দেওয়ার পাশাপাশি শর্তসাপেক্ষে সম্ভাব্য ক্রেতাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
পাশাপাশি, ক্রেতার উপর পেনশন খাতে খরচ সামলানোর চাপ যাতে যতটা সম্ভব কম পড়ে সে কথাও ভেবে দেখা হচ্ছে বলে এ দিন জানিয়েছে সরকার।
টাটা গোষ্ঠী জানিয়েছে, ব্রিটিশ সরকার ও সম্ভাব্য ক্রেতাদের পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের বন্দোবস্ত করার জন্য সময় দেবে তারা। তবে সংস্থা চায় না কর্মী ও ক্রেতাদের অনিশ্চয়তা আরও দীর্ঘ হোক।
উল্লেখ্য, সংস্থা কর্তৃপক্ষ, ব্রিটিশ প্রশাসন ও অনিশ্চয়তার মুখে পড়া ৪,৪০০ কর্মীকে স্বস্তি দিয়ে সম্প্রতি ইউরোপে ইস্পাত রডের ব্যবসা (লং প্রোডাক্টস ইউরোপ) মাত্র এক পাউন্ডে ব্রিটেনের লগ্নি সংস্থা গ্রেবুল ক্যাপিটালকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে টাটা স্টিল। দক্ষিণ ওয়েলস-এ ইস্পাতের পাত তৈরির কারখানা পোর্ট ট্যালবট কিনতেও ইতিমধ্যেই আগ্রহ দেখিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ শিল্পপতি সঞ্জীব গুপ্ত। পাশাপাশি, বুধবারই ইঙ্গিত মেলে, পোর্ট ট্যালবট পরিচালনার রাশ হাতে নিতে চাইছেন টাটার ব্রিটেন শাখায় কর্মরত উচ্চপদস্থ কর্মীরাও। এ জন্য তাঁরা দর দেওয়ার পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করতে চলেছেন বলে জোরালো ইঙ্গিত দিয়েছে সূত্রটি। তবে এই ভার নিতে হলে পোর্ট ট্যালবটে নগদ প্রায় ১০ কোটি পাউন্ড ঢালার প্রয়োজন পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে কর্মীরাই এই লগ্নি করতে পারেন।