ইঙ্গিত ছিলই। ‘কল ড্রপ’ নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল টেলিকম সংস্থাগুলি। বৃহস্পতিবার তারা জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টির শুনানির জন্য সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের কাছে ‘স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন’ দাখিল করেছে। আজ, শুক্রবার মামলার শুনানি হওয়ার কথা।
মোবাইলে কথা বলার সময়ে মাঝপথে ফোন কেটে যাওয়ার (কল ড্রপ) সমস্যায় বছরখানেক ধরেই ভুগছেন গ্রাহকেরা। এ জন্য টেলি পরিষেবা সংস্থাগুলিকে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয় টেলিকম নিয়ন্ত্রক ট্রাই। যদিও সব কল-ড্রপ নয়, যিনি ফোন করছেন, সেই সময়ে তাঁর দিক থেকে কল-ড্রপ হলে ওই গ্রাহককে দিনে সর্বাধিক তিনবার এই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়। তবে এর পরই নতুন করে শুরু হয় বিতর্ক। ট্রাই-এর ওই নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় টেলিকম শিল্পমহল।
এ সপ্তাহেই ট্রাইয়ের নির্দেশ বহাল রাখে হাইকোর্ট। জানায়, যেহেতু তারা ওই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেয়নি, তাই গত ১ জানুয়ারি থেকেই তা কার্যকর হবে। হাইকোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে ফের উচ্চ আদালতে যাওয়ার পথ খোলা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার কথা তখনই জানিয়েছিল টেলিকম শিল্পের দুই সংগঠন সেলুলার অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (সিওএআই) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিফায়েড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডর্স অব ইন্ডিয়া (এইউএসপিআই)। তবে হাইকোর্টে এক সঙ্গে আপিল করলেও সুপ্রিম কোর্টে পৃথক ভাবে আপিল করার কথা এ দিন জানিয়েছেন সিওএআই-এর ডিরেক্টরর জেনারেল রাজন এস ম্যাথুজ এবং এইউএসপিআই-এর সেক্রেটারি জেনারেল অশোক সুদ। তাঁদের সংগঠনের সদস্য সংস্থাগুলিও এই মামলার অন্যতম আবেদনকারী।
সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, এ দিন সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের বেঞ্চে ওই আবেদন জানায় দুই সংস্থা। বেঞ্চের অপর বিচারপতি ইউ ইউ ললিত সংগঠনগুলিকে এ দিন জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘কেন আপনারা ব্যবস্থাটি সংশোধন করছেন না?’’ জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টির শুনানির দাবি জানান টেলিকম শিল্পের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল। এরপরই বেঞ্চ আজ, শুক্রবার শুনানিতে সম্মত হয়।
কিন্তু কল-ড্রপ সমস্যায় গ্রাহক ভোগান্তির কথা মানলেও কেন টেলিকম শিল্প তার দায় নিতে নারাজ? বারবার কেন তারা ট্রাই-এর নির্দেশের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে? জবাবে ম্যাথুজ এ দিন দিল্লি থেকে ফোনে বলেন, ‘‘আমরা কখনওই বলিনি যে এটা সমস্যা নয়। কিন্তু কেন এই সমস্যা তৈরি হল, তার প্রকৃত কারণ খতিয়ে না-দেখে পুরো দায় টেলিকম সংস্থাগুলির উপর চাপানো হচ্ছে।’’ যে-ভাবে ট্রাই নিয়ম জারি করে সমাধানের রাস্তা বাতলাতে চাইছে তা-ও ভুল বলে আখ্যা দিয়ে তিনি জানান, ‘‘সব পক্ষ একসঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে।’’
বস্তুত, আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার জন্য টেলিকম শিল্প তিনটি যুক্তিকে তুলে ধরছে। রাজনের দাবি, প্রথমত, ট্রাই-এর এ ধরনের নিয়ম জারি করার কোনও আইনি ক্ষমতাই নেই। দ্বিতীয়ত, টেলিকম শিল্প ১৮৮৫ সালের যে-টেলিগ্রাফ আইন মেনে চলে সেখানে ১০০% এলাকাতেই পরিষেবা মিলবে, এমন কথা বলা নেই। এবং তৃতীয়ত, ট্রাই-এর পক্ষ থেকে নির্দেশ দিয়ে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা সঠিক নয়।
সমস্যার দায় ফের কেন্দ্রের ঘাড়েই চাপিয়ে, পরিকাঠামো খাতে লগ্নির অপ্রতুলতার জন্য স্পেকট্রাম নিলামের নিয়ম বদলকেই দায়ী করেছেন রাজন। তাঁর যুক্তি, প্রথম বণ্টন হওয়া স্পেকট্রামের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছর। সেই মেয়াদ বৃদ্ধির ইঙ্গিত ২০১২-তে সংস্থাগুলিকে দেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎই কেন্দ্র জানায়, তা হবে না। পুনরায় সেই স্পেকট্রামের নিলাম হবে। রাজন বলেন, ‘‘আগামী দিনে সেই স্পেকট্রাম আদৌ হাতে থাকবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে কে ব্যবসায় নতুন করে লগ্নি করবে? ফলে ২০১৩-’১৪ সালে এই ক্ষেত্রে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বিদেশি লগ্নি এলেও তারপর তা কমে আসে ২০০ কোটিতে।’’ একই সময়ে ৩জি, ৪জি পরিষেবা দেওয়ার কারণে সমস্যা বাড়ে। ট্রাই-ও একাধিক সমস্যার কথা বলেছে। তবে সার্বিক ভাবে সেগুলির সমাধান খোঁজার বদলে সব দায় টেলি-সংস্থার উপরই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। তাই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা।