প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করলে খরচ অর্ধেক হয়ে যাবে।
জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করতে চায় উত্তরবঙ্গের চা বাগান।
অশোধিত তেল আমদানির খরচ এবং দূষণ কমাতে রান্না, গাড়ি এবং শিল্পোৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে চাইছে কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গে তিনটি মূল পাইপলাইনের মাধ্যমে সেই গ্যাস সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গেল। এর মধ্যে জগদীশপুর থেকে বর্ধমানের একাংশ পর্যন্ত পাইপলাইন তৈরি। সম্প্রতি ফিকি-র এক সভায় পশ্চিমবঙ্গে বণিকসভাটির চেয়ারম্যান তথা লক্ষ্মী টি-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর রুদ্র চট্টোপাধ্যায় দার্জিলিঙের চা বাগানেও জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। গেলের কর্তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আর্জি জানান তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অসমের বাগানে গ্যাসের ব্যবহার শুরু হচ্ছে। এখানেও গেল যখন পাইপলাইনে গ্যাস জোগানের কথা বলছে, তখন তারা সেই সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখুক। কয়লা গুঁড়োর দূষণ থেকে দার্জিলিঙের চা বাগানগুলিও বাঁচবে।’’ চা শিল্প সূত্রের খবর, বাগানের পাতা শুকনো করতে এবং তা থেকে জলীয় বাষ্প শুষে নিতে যে ব্যবস্থা রয়েছে তার জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার করা হয়। বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার পাশাপাশি বাগানগুলির কয়লা নির্ভরতা যথেষ্ট। দার্জিলিঙের বাগানের ক্ষেত্রে মোট খরচের মধ্যে কয়লার ভাগ প্রায় ৫%।
ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপার্সন নয়নতারা পালচৌধুরীর বক্তব্য, সম্প্রতি কয়লার দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় চা শিল্পের উপর চাপ তৈরি হয়েছে। সস্তার বিকল্প জ্বালানি স্বাগত। রুদ্র জানান, দার্জিলিঙে প্রতি কেজি চা তৈরির জন্য দু’কেজি করে কয়লা লাগে। অসমের কিছুটা কম। জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করলে খরচ অর্ধেক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘‘দার্জিলিঙে গেল গ্যাস সরবরাহ করলে আমরা প্রথম ক্রেতা হব।’’ তরাই ও ডুয়ার্সের বাগানেও গ্যাস ব্যবহারে রাজি তাঁরা। দার্জিলিং, কার্শিয়াঙে বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস তৈরি করা যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখার কথা বলেন তিনি।
বাগানে গ্যাস জোগানের ব্যাপারে গেলও আশাবাদী। বারাউনি-গুয়াহাটির মূল পাইপলাইন থেকে উত্তরবঙ্গে গ্যাসের জোগান দেবে তারা। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও উত্তর দিনাজপুরে গেলের প্রাকৃতিক গ্যাস বণ্টনের দায়িত্ব পেয়েছে হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম (এইচপিসি)। গেল সূত্রের খবর, আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেই পাইপলাইন বসানো সম্পূর্ণ হতে পারে। তার পর প্রয়োজনীয় নানা ছাড়পত্র মিললে জোগান শুরু করা সম্ভব হবে।
অন্য দিকে, এইচপিসি সূত্রের খবর, ওই এলাকায় গ্যাস বণ্টনের পরের ধাপের পরিকাঠামো গড়ার বিষয়ে প্রাথমিক সমীক্ষা হয়েছে। এর পরে হবে বিস্তারিত সমীক্ষা। সমতলে পাইপে গ্যাস বণ্টনের পাশাপাশি ব্যবসায়িক ভাবে লাভজনক হলে এবং পাইপ বসানোর মতো পরিবেশ পেলে পাহাড়েও গ্যাস বণ্টনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে গোটা পরিস্থিতি বুঝতে কিছুটা সময় লাগবে।