নতুন অর্থবর্ষের গোড়াতেই দেশের সবক’টি কেন্দ্রে একসঙ্গে চা নিলামের ব্যবস্থা চালু করতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। এই ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধিও তৈরি। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে তা কার্যকর করার আগে আগামী সোমবার থেকে পাঁচ দিন পরীক্ষামূলক ভাবে সেই নিলাম ব্যবস্থা চালু করছে টি বোর্ড।
এখন সারা দেশে সাতটি নিলাম কেন্দ্র রয়েছে— কলকাতা, গুয়াহাটি, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচি, কুন্নুর ও কোয়েম্বত্তুর। বাজারে প্রতিযোগিতা ও স্বচ্ছতা আনতে নিলাম ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বছর সাতেক আগে চালু হয়েছে ‘ই-অকশন’ বা বৈদ্যুতিন নিলামও। এখন বছরে প্রায় ৫৪ কোটি কিলোগ্রাম চা বিভিন্ন নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রি হয়। কিন্তু চলতি নিয়মে একটি নিলাম কেন্দ্রের চা কিনতে হলে সেখানেই নাম নথিভুক্ত করাতে হয় ক্রেতাকে। যেমন কলকাতার নিলাম কেন্দ্রে নথিভুক্ত ক্রেতা গুয়াহাটি থেকে চা কিনতে চাইলে তাঁকে সেখানেও নথিভুক্ত হতে হবে। না-হলে তা সম্ভব নয়। পাশাপাশি, সবক’টি কেন্দ্রে একই সময়ে নিলাম চলে, এমনও নয়। অর্থাৎ, নিলামের বাজার সীমিত গণ্ডির মধ্যেই আটকে থাকে।
বাজার ও প্রতিযোগিতা বাড়লে চায়ের সঠিক দাম পাওয়ার বিষয়টি আরও নিশ্চিত হবে বলেই মনে করে সংশ্লিষ্ট মহল। সেই সূত্রেই দেশ জুড়ে একই সঙ্গে সবক’টি নিলাম কেন্দ্রে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়ে বাজারে আরও প্রতিযোগিতা আনতে চায় কেন্দ্র। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব রজনীরঞ্জন রশ্মি টি বোর্ড ও চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেন। এই ব্যবস্থার জন্য তৈরি করা বিধির বিষয়টিও তাদের জানানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, যদি সব কিছু ঠিকঠাক চলে, তা হলে মে-জুনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হতে পারে এই দেশ জোড়া নিলাম।
তবে তার আগে ৭-১১ মার্চ, পরীক্ষামূলক ভাবে তা চালানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট নিলাম কেন্দ্রগুলিকে জানিয়েছেন টি বোর্ডের কন্ট্রোলার অব লাইসেন্স রজনীগন্ধা শীল নস্কর। গোটা বিষয়টির প্রযুক্তিগত দায়িত্ব ‘এনএসই ডট আইটি’ সংস্থার। ‘সেট্লমেন্ট ব্যাঙ্ক’ নির্বাচিত হয়েছে ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া।
সার্বিক ভাবে চা শিল্পের এই নতুন ব্যবস্থা নিয়ে নীতিগত ভাবে আপত্তি নেই। কিন্তু কর কাঠামো-সহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে এখনও জটিলতা রয়েছে বলে দাবি তাদের। ক্যালকাটা টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান তপন চৌধুরী শনিবার বলেন, ‘‘এই ব্যবস্থায় হয়তো নিলামে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ও প্রতিযোগিতা বাড়বে। কিন্তু শুধু এটা চালু করলেই হবে না। তার সুফল পেতে হলে সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখতে হবে। যেমন বিভিন্ন রাজ্যে করের হার আলাদা। সে ক্ষেত্রে অন্য রাজ্যের নিলাম কেন্দ্র থেকে চা কিনলে করের হার ভিন্ন হওয়ায় জটিলতা বাড়তে পারে। পণ্য-পরিষেবা কর চালু হলে হয়তো পরিস্থিতি অন্য রকম হত। তেমনই চায়ের নমুনা পরীক্ষা করা নিয়েও সমস্যা দেখা দিতে পারে।’’ এ সব নিয়ে আগেই তাঁরা বোর্ডকে চিঠি দিয়েছেন বলে দাবি করে তপনবাবু জানান, তাঁদের কিছু বক্তব্য কেন্দ্র মেনেছে। কিছু মানেনি।
টি বোর্ডও অবশ্য আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে এই নিলাম চালুর উপরই জোর দিচ্ছে। রোজকার পরীক্ষামূলক নিলামের পরে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে তার প্রতিক্রিয়া বোর্ডের কাছে জানাতেও বলা হয়েছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান সন্তোষ ষড়ঙ্গী এ দিন বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রতিক্রিয়া জেনে প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে গোটা প্রক্রিয়াটি সহজ হয়।’’ তবে তাঁর বক্তব্য, এখনও কেউ অন্য রাজ্য থেকে চা কিনলে তাঁকে সেখানকার করই দিতে হয়। যতক্ষণ না একটি অভিন্ন কর কাঠামো চালু হচ্ছে, ততক্ষণ সেই নিয়মই চালু থাকবে।