ফাইল চিত্র।
অনেক জল্পনার শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া (এআই) যেতে চলেছে টাটা গোষ্ঠীর হাতে। ১৮,০০০ কোটি টাকার দরপত্র দিয়ে বাকিদের পিছনে ফেলেছে তারা। বিমান সংস্থাটির দেনা ৬১,০০০ কোটির বেশি হলেও, তার মধ্যে টাটাদের কাঁধে চাপছে ১৫,৩০০ কোটি টাকার বোঝা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, মহারাজাকে কি কার্যত জলের দরে হাতবদল করা হচ্ছে? সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের অবশ্য ব্যাখ্যা, ব্যাপারটা দেখতে পাটিগণিতের মতো লাগলেও বাস্তবে এতটা সহজ নয়।
এআই বিক্রির আগে তার দেনার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পৃথক সংস্থায় সরিয়েছে কেন্দ্র। গত দু’বছরের ব্যর্থতার পরে তারা মনে করেছে, দেনার পুরো অংশ কোনও সংস্থাই কাঁধে নিতে চাইবে না। ফলে টাটাদের হাতে গিয়েছে দেনার ছোট অংশ। সেই সঙ্গে হাতে এসেছে উড়ান পরিষেবার অনুমতি, দেশে-বিদেশে উড়ানের স্লট এবং ল্যান্ডিং লাইসেন্স। সঙ্গে সংস্থার ঐতিহ্যের গৌরব। কিন্তু বিমান ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মহলের বক্তব্য, এর ফলে টাটারা একটা তৈরি সংস্থা হাতে পেয়ে গিয়েছে এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই। এআইয়ের সবচেয়ে বড় পাওনাদার জ্বালানি সরবরাহকারী সংস্থাগুলি। সেই বকেয়া সরকার সরিয়ে নিলেও বিমানের লিজ়ের টাকা মিটিয়ে যাচ্ছে না তারা। সেই টাকা মেটাতে হবে টাটা গোষ্ঠীকে। দীর্ঘ দিন ব্যবহার না হওয়ার ফলে বেশ কয়েকটি বিমান বসে গিয়েছে। সেগুলি মেরামত করতে হবে। এআইয়ের বিমানের মধ্যে ৪২টি লিজ়ে নেওয়া। বিমান শিল্পের এক পদস্থ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘নতুন বিমান হাতে না থাকলে এবং যাত্রীদের বিশ্বাস ফেরানো না গেলে সমস্যা কমবে না।’’
তবে হ্যাঁ, বিস্তারা এবং এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়ার সঙ্গে এআইকে যোগ করলে মোট তিনটি বিমান সংস্থা থাকবে টাটাদের নিয়ন্ত্রণে। যে সমস্ত সংস্থা বিমান লিজ় দেয় কিংবা তেল সরবরাহ করে, তাদের সঙ্গে দরাদরির রাস্তাও কিছুটা সহজ হবে। আবার তিনটি সংস্থার কোনওটিই লাভজনক না-হওয়ায় আর্থিক চাপও থাকবে টাটাদের উপরে। বিশেষ করে যেখানে সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আগামী এক বছরের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মী ছাঁটাই করতে পারবে না তারা।
এআইয়ের অংশীদারি হাতবদলের প্রক্রিয়া ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হতে পারে। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, অতিমারির আক্রমণ যদি ওই সময়ের মধ্যে কিছুটা দুর্বল হয় তা হলে উড়ান সংস্থাগুলির সুবিধা হবে। বিশেষ করে এআইয়ের, যাদের কাছে রয়েছে মাঝের বিমানবন্দরে না থেমে সরাসরি আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার অনুমতি ও অভিজ্ঞতা। করোনার আগে আন্তর্জাতিক উড়ানের বাজারে এয়ার ইন্ডিয়ার অংশীদারি কমতে কমতে ১৯.৩ শতাংশে নেমেছিল। যা খানিকটা বাড়ানো সম্ভব বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।