সমস্যায় অর্থনীতি —প্রতীকী চিত্র।
উত্তরবঙ্গের ‘কড়া’ সিটিসি চা নাকি আফগানদের বড় পছন্দের। তাই কাবুলিওয়ালাদের দেশে বহু বছর ধরে চা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স থেকে। এ বার সেই তৃপ্তির চুমুকে ‘বাঁধ’ বসাল তালিবান। তারা আফগানিস্তান দখলের পরে এখন সে দেশে চা রফতানি আপাতত বন্ধ। এই নিয়ে তালিবান ভবিষ্যতে কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা নিয়েও যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার ফলে তার ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে উত্তরবঙ্গের সিটিসি চায়ের বাজারে।
করোনার আগের বছর ভারত থেকে আফগানিস্তানে ২১৭ লক্ষ কেজি চা পাতা গিয়েছিল। ব্যবসা হয়েছিল প্রায় ২৭ কোটি টাকার। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে যা রেকর্ড। কিন্তু কোভিডের আবহে রফতানি কমতে থাকে। এ বারে তালিবানের প্রভাব যত বেড়েছে, চা রফতানিও ততই কমেছে। চা পর্ষদের হিসেব অনুযায়ী, সদ্য শেষ হওয়া অর্থবর্ষে আফগানিস্তানে মাত্র ৭৬ লক্ষ কেজি চা পাতা গিয়েছে।
গত ক’মাস ধরে এমনিতেই ভারত থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চা রফতানির পরিমাণ কমছে। ফলে দেশের বাজারে জমতে শুরু করেছে অতিরিক্ত চা। অথচ তা কেনার মতো চাহিদা তৈরি হয়নি। ফলে ঘরোয়া বাজারে চায়ের দাম কমতে শুরু করেছে। শিলিগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রে ১৪ অগস্টের নিলামে চা পাতার দর ছিল কেজিতে ১৬৯ টাকা। যা গত ছ’মাসে সব থেকে কম। গত বছর এই সময়ে শিলিগুড়ি নিলাম কেন্দ্রেই চায়ের দাম ছিল কেজি প্রতি ২৪৭ টাকা। এতেই উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট সব মহল। শ্রমিকদের আশঙ্কা, বাজার পড়লে পুজোর বোনাসের কী হবে এবং কতটা হবে? মালিকদের অনেকেরই বক্তব্য, বাজার এমন থাকলে এ বারেও ২০% হারে বোনাস দাবি দেওয়া যাবে কিনা, বলা কঠিন। বোনাস চুক্তি শীঘ্রই হবে।
ছোট চা বাগানের সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “এ বছর যখন রফতানি এমনিতেই তলানিতে, তখন আফগানিস্তানে চা রফতানি পুরো বন্ধ হলে তার প্রভাব চা-অর্থনীতিতে পড়তে বাধ্য।” চা পর্ষদের এক কর্তার কথায়, “বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আপাতত কিছু করার নেই।” পুজোর আগে কি কোনও সুখবর আসবে কাবুলিওয়ালাদের দেশ থেকে, অপেক্ষায় উত্তরবঙ্গ।