রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ (রেপো রেট) কমালেও, গ্রাহকের বাড়ি-গাড়ি ঋণের সুদ সেই অনুযায়ী ছাঁটা হয় না— দেশের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ বহু দিনের। এ ব্যাপারে তাদের বার বার হুঁশিয়ার করেছে খোদ শীর্ষ ব্যাঙ্কও। আগামী দিনে সেই নালিশেরই খানিকটা সুরাহা হওয়ার ইঙ্গিত মিলল সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশে। সোমবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উদ্দেশে তাদের ফরমান, যে সব গ্রাহক পরিবর্তনশীল সুদ ব্যবস্থায় (ফ্লোটিং ইন্টারেস্ট রেট) ঋণ নিয়েছেন, ব্যাঙ্কগুলি বিভিন্ন সময়ে তাঁদের দরজায় কম সুদের সুবিধা ঠিক মতো পৌঁছে দিয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখে জানাতে হবে তাদের। এ জন্য সময় মিলবে ছ’সপ্তাহ।
উল্লেখ্য, রেপো রেট ছাঁটাই মানে ব্যাঙ্কগুলির তহবিল সংগ্রহের খরচ কমা। জুন ও অগস্টের ঋণনীতিতে এই হার বাড়িয়েছে আরবিআই। কিন্তু তার আগে বেশ কিছু দিন ধরে সুদ কমানো বা তা একই জায়গায় ধরে রেখেছিল তারা। তখনই সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ অভিযোগ ছিল, রেপো রেট কমানো হলেও সেই সুবিধা থেকে গ্রাহককে বঞ্চিত করছে ব্যাঙ্কগুলি।
সুপ্রিম কোর্টে অ-সরকারি সংস্থা মানিলাইফ ফাউন্ডেশনের আর্জি ছিল, ফ্লোটিং রেটের আওতায় ঋণগ্রহীতাদের কম সুদের সুবিধা না দিয়ে কতটা বাড়তি সুদ আদায় হয়েছে, আদালত যেন ব্যাঙ্ক ও ব্যাঙ্ক নয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলিকে তা হিসেব করার নির্দেশ দেয়। সেই মামলার বিচার করতে বসেই শীর্ষ ব্যাঙ্কের জবাব চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বলেছে, উত্তরে আবেদনকারী সন্তুষ্ট না হলে ফের আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যাবে।
যদিও ব্যাঙ্কিং শিল্পের দাবি, রেপো রেটের ভিত্তিতে অনেক ক্ষেত্রেই দীর্ঘ মেয়াদি বাড়ি-গাড়ি ঋণের সুদ হিসাব করা চলে না। বরং ব্যাঙ্কের আয় ও খরচের সামঞ্জস্য খতিয়ে দেখেই এই সব ঋণে সুদ সুপারিশ করে প্রতিটি ব্যাঙ্কের নিজস্ব অ্যাসেট লায়াবিলিটি কমিটি। পরে তা চূড়ান্ত করে ব্যাঙ্ক।
স্টেট ব্যাঙ্কের বেঙ্গল সার্কেলের সিজিএম রঞ্জন কুমার মিশ্রের অবশ্য দাবি, প্রতি বার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ ছাঁটার পরে আলাদা ভাবে বিচার করলে হয়তো বিষয়টি বোঝা যাবে না। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে দেখা যাবে, ব্যাঙ্ক সব সময়েই রেপো রেট কমার সুবিধা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।
যদিও অনেকের অভিযোগ তা হলে রেপো রেট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুদ বাড়ে কেন? এমনকি এ বারের ঋণনীতিতে শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ একই রাখলেও, বহু বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে আগে থেকেই জমা ও ঋণে সুদের হার বাড়াতে দেখা গিয়েছে।