কুঁড়িতেই অনিশ্চয়তা।
আবহাওয়া প্রতিকূল। তাই একে গাছে পাতা এসেছে দেরিতে। গোড়াতেই মার খেয়েছে উৎপাদন। তার উপরে গত বছরের টানা বন্ধের ভূত এখনও তাড়া করছে দার্জিলিঙের চা বাগানগুলিকে। সে সময় বাগানের হাল যা দাঁড়িয়েছিল, তাতে এ বার চায়ের গুণমান কতটা ভাল হবে, তা নিয়ে সংশয়ী সমঝদার ক্রেতারা। আস্থা টোল খেয়েছে সময়মতো বরাত অনুযায়ী চা হাতে পাওয়া নিয়েও। তাই সব মিলিয়ে, এ বার খানিকটা পিছিয়ে থেকেই মরসুম শুরু করতে হচ্ছে দার্জিলিঙের বাগানগুলিকে। ঠিক যে আশঙ্কা বন্ধের সময়ে বারবার করেছিল সংশ্লিষ্ট শিল্পমহল।
দার্জিলিঙের ফার্স্ট ও সেকেন্ড ফ্লাশ চায়ের বেশিটাই বিদেশ পাড়ি দেয়। সাধারণত মরসুম শুরুর আগেই বাগানগুলির সঙ্গে আগাম চুক্তি করে বিদেশি সংস্থাগুলি। সেখানে দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল কৌশিক বসু বলেন, ‘‘বেশির ভাগ আগাম চুক্তিই এখনও হয়নি। ধীরে চলো নীতিতে চলছে অধিকাংশ বিদেশি সংস্থা।’’
কৌশিকবাবুদের মতে, ক্রেতার মন ভেজাতে যারা দার্জিলিং চায়ের উপর নির্ভর করেছিল, গত বছর সেই সব বিদেশি সংস্থাও ব্যবসা হারিয়েছিল। তাদের ক্রেতাদের অনেকেই অন্য চা বা পানীয়ে মজেছেন। সেই বাজার এখনই চট করে ফিরে পাওয়া শক্ত।
কতটা চা তৈরি হবে, সংশয় তা নিয়েও। গত বারই চা শিল্পের দাবি ছিল, বাগান খুললেও ছন্দ ফিরে পেতে দার্জিলিং চায়ের বছর তিনেক লাগবে। এখন স্পষ্ট, আশঙ্কা অমূলক ছিল না। এখনও তাপমাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে কম। বৃষ্টি যথেষ্ট হয়নি। বাগান বন্ধ থাকায় গাছগুলির উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ছাঁটলেও কোথাও কোথাও তা এখনও বেশি। সব মিলিয়ে ভাল মানের চায়ের উপযুক্ত পাতা সর্বত্র আসেনি। তাই রফতানি বাজারে চায়ের মান নিয়ে সংশয় আছে।
বাগান সংশয়ী দাম নিয়েও। তাদের দাবি, চা তৈরির খরচ বেড়েছে। উপরন্তু গত বছর আন্দোলনের জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিল। বাগান সাফ করতে লেগেছে বাড়তি কড়ি। কেন্দ্র ও রাজ্যের কাছে আর্জি জানালেও আর্থিক সাহায্য মেলেনি। এ অবস্থায় বাজারে চায়ের জোগান প্রায় না থাকায় দাম বাড়বে বলে আশা ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রে দাবি, বিদেশি ক্রেতারা বাড়তি দাম দিতে তৈরি নন।
পাতা পরিচয়
• বছরে প্রায় ন’দশ মাস দার্জিলিংয়ে চা হলেও, মূল কদর ‘ফার্স্ট ফ্লাশ’ ও ‘সেকেন্ড ফ্লাশ’ চায়ের।
• গাছে আসা প্রথম পাতা থেকে তৈরি মরসুমের প্রথম চা ফার্স্ট ফ্লাশ। সাধারণত হয় মার্চের মাঝামাঝি থেকে মে-র শেষ পর্যন্ত। রং হালকা সবুজাভ। অনেকে ডাকেন চায়ের শ্যাম্পেন বলেও।
• সেকেন্ড ফ্লাশের সময় মে-র শেষ থেকে জুলাইয়ের গোড়া পর্যন্ত। পাতা কিছুটা বড় ও পরিণত। স্বাদও কড়া।
• সেকেন্ড ফ্লাশের দাম ও পরিমাণ ফার্স্ট ফ্লাশের চেয়ে সাধারণত বেশি।
• এই দু’ধরনের চা-ই দার্জিলিঙে মোট উৎপাদনের ৪০-৪৫%। বাগানগুলির আয়ের ৭০-৭৫% আসে তাদের থেকে।
• এক কেজি দার্জিলিং চায়ের দাম ওঠে ৩০-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
• বেশির ভাগটাই রফতানি হয়। মূল গন্তব্য জার্মানি, জাপান, ব্রিটেন, আমেরিকা। জার্মানি থেকে আবার কিছু চা যায় অন্য দেশে।
এখন সমস্যা
• ভাল পাতার জন্য গাছের উচ্চতা আড়াই ফুট মতো থাকার কথা। কিন্তু গত বছর পাহাড়ে আন্দোলনের জেরে বাগান দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল। গাছ বেড়েছিল অনেক বেশি। বাগান ভরেছিল আগাছায়। এখনও অনেক গাছ ভাল পাতার উপযুক্ত হয়নি।
• তাই গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সম্ভাব্য ক্রেতাদের মনে।
• পাহাড়ে টানা ১০৪ দিন বন্ধে টোল খেয়েছে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থাও। বেশির ভাগই তাই এখন চা কেনায় ধীরে চলো নীতিতে বিশ্বাসী। চা কেনার আগাম চুক্তিও তাই কম।